মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

শিরোনাম

অধিকার আদায়ের আন্দোলনে রাজপথে সোচ্চার হওয়ার আহবান ফখরুলের

সোমবার, মে ২, ২০২২

প্রিন্ট করুন

চলমান ডেস্ক: অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শ্রমিকদের রাজপথে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার (১ মে) সকালে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে র‌্যালীর আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তিনি এ আহবান জানান।

ফখরুল ইসলামবলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের যে সরকার জোর করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, তারা আজকে শ্রমিকশ্রেণিসহ সব মানুষের অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে। আপনারা ইচ্ছা করলে সমাবেশ করতে পারেন না, আপনারা ইচ্ছা করলে ইউনিয়ন করতে পারেন না। আজকে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য দাবিতে থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

‘আসুন আমরা আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করি, দেশের সব শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত করি। দেশে বরাবরই শ্রমিকরাই পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। আমাদের অতীতে যে গৌরবময় আন্দোলন হয়েছে, সব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে শ্রমিকরা। শুধু এখানে বসে স্লোগান দিলে হবে না। আপনাদেরকে রাজপথে স্লোগান দিতে হবে ও জনগনকে সংগঠিত করে এ ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদেরকে পরাজিত করে একটা নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে।’

‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দিতে হবে’ ‘চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে’ ইত্যাদি স্লোগান ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আসুন এ শ্লোগান নিয়ে আমরা এগিয়ে যাই। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হব।’

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশ হয়। পরে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মে দিবসের এ র‌্যালী কাকরাইল, বিজয়নগর, পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালীতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শ্রমিক নেতারা অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বেড়েছে আকাশচুম্বি। চালের দাম বেড়েছে দশ গুণের মত, তেলের দাম বেড়েছে, লবণের দাম বেড়েছে। আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা কি কষ্টের মধ্যে আছেন, তা আমার থেকে আপনারা ভাল জানেন। সেই কষ্ট সরকারের কানে যায় না। তারা ন্যায্য মূল্যে শ্রমিকদেরকে চাল-ডাল-তেল দিতে পারে না।’

‘তারা বড়লোকদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করে। কিন্তু গরীব মানুষদের জন্য কোন হাসপাতাল তৈরি হয় না। শ্রমিকরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা পায় না, তাদের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষার সুযোগ পায় না। সব কিছু থেকে এ দেশের শ্রমিক শ্রেণি বঞ্চিত। আজকে বড় বড় মেগা প্রজেক্টের কথা, বড় বড় মেগা উন্নয়নের কথা সরকার বলে। কিন্তু একই সাথে শ্রমিক ভাইদের জন্য তারা কোন কিছু করে নাই।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের প্রায় ৩৫ লাখের উপরে নেতা-কর্মী তার মধ্যে শ্রমিক ভাইয়েরাও আছেন অসংখ্য। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, ৬০০’র অধিক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, সহাস্রাধিক লোককে হত্যা করা হয়েছে। বিনা বিচারে আটকাবস্থায় তাদেরকে গুলি করা হয়। এ অবস্থায় তাদেরকে চলতে দেয়া যেতে পারে না।’

মেগা উন্নয়ন করছেন ভাল কথা। আমি না খেয়ে থাকব আর আপনি বেগম পাড়া অথবা দুবাইতে অথবা মালয়েশিয়াতে বাড়ি করবেন- এটা হতে পারে না। আমরা একাত্তরের যুদ্ধ করেছিলাম, একটা বৈষ্যমহীন রাষ্ট্র, একজন মানুষের আয়ের সমতা, ন্যুনতম যেটুকু বেঁচে থাকার জন্য দরকার, তার নিশ্চয়তা আমরা চেয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে আজকে ৫০ বছর পরেও আমাদেরকে চরম পরিতাপের সাথে বলতে হয়, সেই অধিকারগুলো আদায় হয়নি।’

এ সরকার জনগনের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখাত হয়েছে। সরকারের সাথে জনগনের কোন সম্পর্ক নাই। শ্রমিক শ্রেণির কোন সম্পর্ক নাই। আজকে সব অধিকারগুলো হরণ করে নিয়েছে। এ সরকার সম্পূর্ণভাবে পরনির্ভরশীল হয়েছে। তারা নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্য কোন স্বার্থ দেখে না। এ রাষ্ট্রকে তারা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে।’

মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক র‌্যাব ও এর ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকারের ভারতের সহযোগিতা চাওয়ার কঠোর সমালোচনা করেন ফখরুল।

জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর পরিচালনায় সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, শ্রম বিষয়ক সহ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ-জামান মামুন মোল্লাসহ শ্রমিক দলের নেতারা বক্তব্য দেন।

নয়া পল্টনের কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম দল ও দক্ষিন কোরিয়া বিএনপির উদ্যোগে দুইটি পৃথক অনুষ্ঠানে দলের গুম-খুন-নির্যাতনের শিকার নেতা-কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ঈদ উপহার ও আর্থিক সহযোগিতা দেন রুহুল কবির রিজভী।

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন