দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত: অবশেষে এক বছর পর টি-২০ সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-২০তে বাংলাদেশ ৩২ রানে হারিয়েছে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে। এ জয়ে আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতল টাইগাররা। প্রথম ম্যাচ সাত রানে জিতেছিল টাইগাররা। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর ফের টি-২০ সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। সর্বশেষ ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ ৩-২ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ।
ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে পাঁচ উইকেটে ১৬৯ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে পাঁচ উইকেটে ১৩৭ রান করতে পারে আরব আমিরাত। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এ ম্যাচেও টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। ইনিংস ওপেন করতে নামা মিরাজ ও সাব্বির রহমানের একটি করে চারে প্রথম ওভারে নয় রান পায় বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারে মিরাজ একটি চার ও সাব্বির ছক্কা মারলে ১৪ রান জমা হয় বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে। তবে চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে আমিরাতের বাঁ-হাতি স্পিনার আরইয়ান লাকরা ১২ বলে নয় রান করা সাব্বিরকে আউট করলে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
দলীয় ২৭ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর ক্রিজে আসেন লিটন দাস। পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগাতে শুরুতেই দুইটি চার মারেন লিটন। এতে ছয় ওভার শেষে এক উইকেটে ৪৮ রান পায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরও রানের চাকা দ্রুত ঘুড়নোর চেষ্টা করেন লিটন। আরো দুইটি চার মারেন তিনি। কিন্তু নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে বিদায় নিতে হয় লিটনকে। চারটি চারে ২০ বলে ২৫ রান করে আরব আমিরাতের স্পিনার আয়ান আফজাল খানের প্রথম শিকার হন লিটন। দ্বিতীয় উইকেটে মিরাজের সাথে ২৮ বলে ৪১ রান স্কোর বোর্ডে জমা করেন লিটন। লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন আগের ম্যাচের হিরো আফিফ হোসেন। উইকেটে গিয়েই মারমুখী হয়ে উঠেন তিনি। দুইটি চার ও একটি ছক্কা আসে আফিফের ব্যাট থেকে। তবে উইকেটে সেট হয়ে উঠার আগেই দশ বলে ১৮ রান করা আফিফকে দ্বিতীয় শিকার বানান আফজাল। ১১তম ওভারে আফিফ যখন ফিরেন, তখন দলের রান ৯০। পাঁচ নম্বরে নামা মোসাদ্দেক হোসেনের ছক্কায় ১৩তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১০০ স্পর্শ করে। ১৪ ও ১৫তম ওভারে মিরাজ ও মোসাদ্দেক দুইটি করে চার মেরে বাংলাদেশের রানের গতি বাড়ান। কিন্তু ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে থামতে হয় দারুন খেলতে থাকা মিরাজকে। আরব আমিরাতের পেসার সাবির আলির বলে লেগ বিফোর আউট হন মিরাজ। পাঁচটি চারে ৩৭ বলে ৪৬ রান করেন তিনি। মিরাজের আউটের পর রানের গতি কমে যায় বাংলাদেশের। তার আউটের পর, পরের ১৯ বলে মাত্র একটি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি পায় টাইগাররা। একটি করে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি মারেন ইয়াসির আলি। এর মাঝে ১৭তম ওভারের শেষ বলে আউট হন মোসাদ্দেক। দুইটি চার ও একটি ছক্কায় ২২ বলে ২৭ রান তুলেন মোসাদ্দেক। ১৯তম ওভারে মাত্র সাত রান পায় বাংলাদেশ। বাউন্ডারি দিয়ে ইনিংসের শেষ ওভার শুরু করেছিলেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। তবে পরের চার বলে আসে, চার রান। আর শেষ বলে ছক্কা মেরে বাংলাদেশের স্কোর ১৬৯এ পৌঁছে দেন সোহান। প্রথম ম্যাচেও ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরেছিলেন সোহান। ১৩ বলে অপরাজিত ২১ রান করেন ইয়াসির। দশ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন সোহান। দুইজনই একটি করে চার-ছক্কা মারেন। আরব আমিরাতের আফজাল ৩৩ রানে দুই উইকেট নেন।
আরব আমিরাতকে ১৭০ রানের টার্গেট দিয়ে বোলিং করতে নেমে তৃতীয় ওভারেই সাফল্য পেয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই ওভারে বল হাতে সাফল্য পান নি দুই পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও তাসকিন আহমেদ। তাই তৃতীয় ওভারে স্পিনার নাসুম আহমেদকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক সোহান। পঞ্চম বলেই নিজের ডেলিভারিতে নিজেই ক্যাচ নিয়ে আরব আমিরাতের চিরাগ সুরিকে শিকার করেন নাসুম। পাঁচ রান করেন সুরি। পঞ্চম ওভারের শেষ দুই বলে নাসুমকে দুইটি ছক্কা মারেন আরব আমিরাতের আরেক ওপেনার মোহাম্মদ ওয়াসিম। পরের ওভারের সেই ওয়াসিমকে লেগ বিফোর আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় খেলতে নামা তাসকিন। ১৬ রান করেন ওয়াসিম।
বাংলাদেশ বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে দুই উইকেটে ২৮ রান তুলে আরব আমিরাত। পাওয়ার-প্লে শেষ হবার পর প্রথম বারের মত আক্রমণে এসেই দুই উইকেট তুলে নেন স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন। তৃতীয় বলে লাকরাকে ও চতুর্থ বলে আরবিন্দকে শিকার করেন মোসাদ্দেক। লাকরা চার ও আরবিন্দ দুই রান করেন। হ্যাট্টিক সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেন নি এ টাইগার বোলার। ২৯ রানে চার উইকেট পতনে চাপে পড়ে আরব আমিরাত। এ অবস্থায় বড় জুটি গড়তে সাবধানে ব্যাট করতে থাকেন হয়ে বাসিল হামিদ ও অধিনায়ক চুন্দঙ্গাপয়িল রিজওয়ান। পঞ্চম উইকেটে জুটি বেঁঝে দেখে-শুনে খেলতে থাকেন তারা। চতুর্থ উইকেট পতনের পর, পরের ৩৪ বলে মাত্র একটি বাউন্ডারি মারতে পারেন হামিদ ও রিজওয়ান। ১৩ ওভার থেকে মারমুখী হয়ে উঠেন হামিদ ও রিজওয়ান। ১৩তম ওভারে ১২, ১৫ থেকে ১৭তম ওভার পর্যন্ত যথাক্রমে দশ, ১৪ ও ১১ রান নেন তারা। এ সময় চারটি চার ও দুইটি ছক্কা মারেন হামিদ ও রিজওয়ান। শেষ তিন ওভারে ৫৫ রানের সমীকরণ পায় স্বাগতিকরা। ১৮তম ওভারে তাসকিন তিন রান দিলে, সেখানেই এক রকম ম্যাচ হার নিশ্চিত হয়ে যায় আরব আমিরাতের। কারণ শেষ দুই ওভারে জয়ে সমীকরণ দাঁড়ায় ৫২ রানের। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে হামিদ ও রিজওয়ান জুটি ভাঙেন শরিফুলের ইসলামের জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া আরেক পেসার এবাদত হোসেন। চারটি চারে ৪০ বলে ৪২ রান করা হামিদকে শিকার করেন এবাদত। পঞ্চম উইকেটে ৭২ বলে ৯০ রান তুলেন হামিদ ও রিজওয়ান। যা টি-২০ ইতিহাসে আরব আমিরাতের রানের জুটি। ১৯তম ওভারের শেষ বলে চার মেরে টি-২০তে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান রিজওয়ান। শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে দুইটি করে চার-ছক্কায় ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন রিজওয়ান। আরব আমিরাতের সংগ্রহ দাঁড়ায় পাঁচ উইকেটে ১৩৭ রান। বাংলাদেশের মোসাদ্দেক দুই ওভারে আট রানে দুই উইকেট নেন। একটি শিকার করেন তাসকিন-নাসুম-এবাদত।
সিএন/এমএ
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন