সিএন প্রতিবেদন: চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌরুটে বহুল প্রতীক্ষিত ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন হচ্ছে আগামীকাল সোমবার। এতে করে সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াতের দীর্ঘদিনের দুঃখ দুর্দশা একদিকে যেমন ঘুচবে, তেমনি খুলবে সম্ভাবনার নতুন দ্বার।
গবেষকরা বলছেন, ফেরি সার্ভিস শুরু হলে সন্দ্বীপের কৃষি, মৎসসহ অর্থনীতি, বাণিজ্য ও স্বাস্থ্যখাতে আসবে নতুন গতি। এছাড়া পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে সাজানো যাবে দ্বীপের সমুদ্র উপকূলকে। যদিও পুরো সুবিধা পেতে রয়েছে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) সূত্রে জানা যায়, ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন উপলক্ষে সোমবার সকালে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস। ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন করবেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম শাখাওয়াত হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সঞ্জীব ভূঁইয়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বীর প্রতীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মিজ ফরিদা আখতার। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমানও উপস্থিত থাকবেন।
চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বসবাস করে। দৈনন্দিন কাজ, জীবন-জীবিকা, শিক্ষা, চিকিৎসার মতো জরুরি কাজে এ জনপদের বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে জেলা শহর চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল ও সন্দ্বীপের মাঝখানে রয়েছে উত্তাল নৌ-চ্যানেল, এই নৌপথের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কি.মি.। এ পথ পাড়ি দিতে শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধ যাত্রীরা নৌযাত্রায় প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন। কখনও এক বুক, কখনও বা এক কোমড় পানি, আবার কখনও এক হাঁটু পরিমাণ কাঁদা মাড়িয়ে কূলে উঠতে হয়। সূর্য ডোবার পর বন্ধ হয়ে যায় মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দিনের পর দিনও থাকতে হয় বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। এসব কিছু বিবেচনা করে ২০২২ সালে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ফেরি সার্ভিসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সন্দ্বীপের সন্তান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের তত্ত্বাবধানে কাজে নতুন করে গতি পায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের বাঁশবাড়িয়া ঘাট থেকে ফেরি সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া এলাকায় গিয়ে ভিড়বে৷ এজন্য বাঁশবাড়িয়া ঘাটে বেড়িবাঁধ থেকে সাগরের ফোরশোর এলাকায় ব্লক দিয়ে প্রায় ৮০০ মিটারের সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। একইভাবে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ৫০০ মিটার সড়ক। এছাড়া গুপ্তছড়া ঘাট এলাকায় আরও ২০০ মিটার সড়ক নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। ফেরি চলাচলে নির্মাণ করা হয়েছে জেটি, গাড়ি পার্কিং ইয়ার্ডসহ অন্যান্য অবকাঠামো। দুই বেশ কয়েকবার ফেরি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম রুটে আপাতত চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে চলা কপোতাক্ষ ফেরি চলবে। এই রুটে একটি নতুন ফেরি তৈরি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তি শিগগিরই একটি আধুনিক ফেরি তৈরি করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, আগামী ২৪ মার্চ ফেরি উদ্বোধন হবে। এ উপলক্ষে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান উপদেষ্টা অনলাইনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন। অনুষ্ঠানে সাতজন উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন