রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

ছাত্রলীগে শিবিরের সুকৌশল অনুপ্রবেশ: রাজনৈতিক দুর্বলতা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতার ফলাফল

বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

মাহবুব আরিফ খোকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র সংগঠনগুলোর ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রলীগ এবং ছাত্র শিবির দুটি ভিন্ন মতাদর্শের ছাত্র সংগঠন, এবং তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে, ছাত্রলীগে ছাত্র শিবিরের অনুপ্রবেশের প্রশ্ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতা অরাজনৈতিক আন্দোলনে কৌশলে শিবিরের অনুপ্রবেশ ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে।

আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, দেশের সবচেয়ে পুরাতন এবং বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন। এটি মূলত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আদর্শকে ধারণ করে এবং দলীয় ছাত্রদের সক্রিয় রাখার জন্য কাজ করে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির একটি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত সংগঠন, যা আদর্শিক ভাবে ছাত্রলীগের বিপরীত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী জামাতে ইসলামের আদর্শ পুষ্ট সংগঠন। বাংলাদেশে ছাত্র শিবির, যা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর ছাত্র সংগঠন, তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক লক্ষ্য বরাবরই বিতর্কিত। দলটি ইসলামী চিন্তাধারার পক্ষে ছাত্র আন্দোলন করে থাকে।

অতীতে ছাত্র শিবির সহিংস ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নানা বিতর্কে ছিল। তবে, শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটাতে তাদের দ্বারা একটি সফল অরাজনৈতিক ছাত্র-জনতা আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে কি না ভেবে দেখার সময় এসেছে, যদিও এর নির্দিষ্ট প্রমাণ খুঁজে পাওয়া কঠিন।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবির সংগঠনের সদস্যাদের ছাত্র-জনতা অরাজনৈতিক আন্দোলনে অনুপ্রবেশের বিষয়টি সোশাল মিডিয়াতে এই মুহূর্তে ভীষণ রকম ভাবে আলোচিত। বড় ও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনে অন্যান্য রাজনৈতিক বা মতাদর্শগত দলের কর্মীদের অনুপ্রবেশ কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। অনেক সময় ব্যক্তি স্বার্থ বা রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের উদ্দেশ্যে ভিন্ন মতাদর্শের লোকজন বড় সংগঠনগুলোতে প্রবেশ করে থাকতে পারে।

তবে, ছাত্রলীগে শিবিরের প্রভাব বা তাদের সুকৌশলে অনুপ্রবেশ হয়েছে কি না, তা প্রমাণ করা অত্যন্ত জটিল, কারণ এ ধরনের প্রবেশ সাধারণত গোপনে এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর মধ্যে অনেক সময় দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থতা দেখা যায়।

বড় রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার প্রতি দুর্নীতি, ক্ষমতার লোভের আকর্ষণ বা দলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী মতাদর্শের লোকজন ভিন্ন মত নিয়ে প্রবেশ করেছে। এ কথা সত্য যে আওয়ামী লীগের ভেতরে গত পনেরো বছরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যা দলটির সাংগঠনিক কাঠামোকে দুর্বল করেছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কার্যকলাপ বা অশুভ রাজনীতির কারণেই আজ আওয়ামী লীগ তার আদর্শ থেকে সরে এসেছে আর সে কারণেই আওয়ামী সরকার আজ ক্ষমতা হারিয়ে পলাতক, সংসদ বিলুপ্ত, অন্তর্বর্তী কালীন সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ।

ছাত্রলীগে ছাত্র শিবিরের সুকৌশল অনুপ্রবেশের বিষয়টি সম্ভব হলেও, এটি প্রমাণসাপেক্ষ। যদি এটি সত্য হয়, তবে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নেতৃত্বের দুর্বলতাই মূলত দায়ী বলে ধরা যেতে পারে। দলীয় শৃঙ্খলা ও আদর্শ রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়া একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন