নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ডিএমপি ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদকে আটক করা হয়েছে। তাকে অজ্ঞাত স্থানে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গতকাল সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার আগে তাকে আটক করে নিয়ে যায় রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থা। সেটি পুলিশ, র্যাব নাকি অন্য কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগের খবর জানার পর শাহবাগে লোকজনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর আগে হারুন দিনভর পুলিশ প্রধানের সাথেই ছিলেন। কিন্তু হাসিনার দেশ ত্যাগের খবর পাওয়ার পর থেকে ওয়ারলেসে তিনি কোনো নির্দেশনা দেননি। শেষে দুপুরে ডিবির হারুন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। তিনি পুলিশ সদর দফতরের পূর্ব পাশে থাকা সিটি করপোরেশনের সীমানা দেয়াল টপকে সেদিকে চলে যান। পরে তিনি নরমাল পোশাক পরে জনসাধারণের বেশে এখান থেকে বেরিয়ে যান।
আরেকটু সূত্র জানিয়েছে, হারুন পুলিশ সদর দফতর থেকে বের হয়ে সোজা চলে যান হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে। সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। এ সময় সেনা সদস্যরা তাকে আটক করেন। তবে সেখান থেকে তাকে কোথায় নেওয়া হয়েছে তা জানা যায়নি। এমন খবর সারাদিন বিভিন্ন জনের কাছ থেকে জানার হলেও সর্বশেষ সত্যটা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
সূত্র জানায়, মূলত কার নির্দেশে অতিরিক্ত আইজিপি হারুন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে আটকে রেখেছিলেন, তাদের কাছ থেকে জোর করে বিবৃতি আদায় করেছিলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে নির্বিচারে ঘরে ঘরে ডিবি পুলিশ পাঠিয়ে মানুষ তুলে আনার কাজটি করেছেন, রাজনীতিকসহ জনগণের সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ করেছেন সেটি জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ছয় সমন্বয়কের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজকে দেখা করতে দেননি অতিরিক্ত আইজিপি হারুন। তখন বলেছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া দেখা করা সম্ভব নয়। তাদের কবে ছাড়া হবে জানতে চাইলে বলেছিলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন নির্দেশ দেবে তখন ছাড়া হবে। সেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে সেটিও হারুনের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, হারুন এডিশনাল এসপি থাকার সময় ২০১১ সালের ৬ জুলাই, সংসদ ভবনের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছিলেন।
সেই থেকে সমালোচিত এই পুলিশ কর্মকর্তা শেখ হাসিনার আনুকূল্য পেতে থাকেন, আর একের পর এক পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়ন হয় তার।
নানা অপকর্মের সঙ্গে তার যোগসাজশের পাশাপাশি স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য সাধনে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে বড় ভূমিকা ছিল হারুনের।
সর্বশেষ কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দেওয়ার পর গত ১৭ জুলাই দলের পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অভিযান চালান অতিরিক্ত আইজিপি হারুন। এরপর থেকে সেখানে আর কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
গত বছরের অক্টোবরে বিএনপির আন্দোলনের সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ধরে নিয়ে ডিবি অফিসে বেশ কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখেন হারুন। তাকে জোর করে আপ্যায়ন করে সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন।
একই ঘটনা ঘটে ছয় সমন্বয়ের সঙ্গে। তাদের জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে চাউমিন খাওয়ানোর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়েন।
Views: 22
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন