শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

নতুন টাকা ছাপানোর সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির সম্পর্ক

শুক্রবার, জুলাই ২৮, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

বিশাল বসু: বাংলাদেশ সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ অর্থ ছাপিয়েছে আর বাজারে পণদ্রব্যের দাম তরতর করে বাড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব বাড়তি টাকা কতটুকু দায়ী সে প্রশ্ন উঠছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক মুদ্রাস্ফীতির কারণে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা থেকে উত্তরণের উপায়…

অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপানোর মাধ্যমে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ে, যা এটি মুদ্রাস্ফীতি তৈরি করে। মুদ্রাস্ফীতিতে বিশ্ব জুড়ে অনেক দেশই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।

এই নিবন্ধে নতুন মুদ্রা ছাপানো ও মুদ্রাস্ফীতির সম্পর্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও এর কারণে অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তা থেকেও উত্তরণের উপায় অনুসন্ধান করা হয়েছে।

নতুন টাকা মুদ্রণ ও মুদ্রাস্ফীতি

একটি দেশের বাজারে পণ্যের মজুদ ও মুদ্রার পরিমাণের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হয়। যদি পণ্যের তুলনায় মুদ্রার সরবরাহ অনেক বেড়ে যায় অর্থাৎ দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মাত্রায় টাকা ছাপায় তখনই মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

এছাড়া অর্থ সরবরাহ যদি দ্বিগুণ হয়, তাহলে পণ্যের দামও দ্বিগুণ হবে। আর এখানে যদি পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে, সেটির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। সেটি ধীরে ধীরে মুদ্রাস্ফীতির দিকে চালিত হয়।

আবার চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধি করলে ও দাম বৃদ্ধির আতঙ্কে ভোক্তারাও যদি অতিরিক্ত পণ্য কিনে রাখেন, সেটিও মূল্যস্ফীতি ঘটাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কমানো যেতে পারে যেভাবে

নতুন টাকা মুদ্রণের পরেও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করতে পারে-

বিচক্ষণ মুদ্রানীতি: কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কঠোর মুদ্রানীতি প্রয়োগ করতে পারে। যেমন- সুদের হার বৃদ্ধি করা বা খোলা বাজারের মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ হ্রাস করা। ব্যয়ের জন্য অর্থের পরিমাণ সীমিত করা ও কোনো পণ্যের অতিরিক্ত চাহিদা কমানো। এই নীতিগুলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

সুষ্ঠু রাজস্ব নীতি: বাজেট ঘাটতি কমিয়ে ও সরকারি ব্যয়ে লাগাম টেনে সরকার সঠিক রাজস্ব নীতি বাস্তবায়ন করতে পারে। এভাবে অর্থের ঘাটতি পূরণে অর্থ মুদ্রণের প্রয়োজনীয়তা কমে আসতে পারে।

স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক: রাজনৈতিক প্রভাব থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষা করা অপরিহার্য। এটি হলে তারা দক্ষ আর্থিক নীতি পরিচালনা করতে ও মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সক্ষম হবে।

সরবরাহের সংস্কার: পণ্য ও পরিষেবার জন্য সরকার পুরো সরবরাহ চ্যানেলে পরিবর্তন আনতে পারে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে প্রতিবন্ধকতা দূর করে, অবকাঠামো উন্নত করতে পারে। শিক্ষা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে দামের ওপর চাপ কমাতে পারে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে অর্থনীতির সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সরবরাহের ত্রুটি চিহ্নিত ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

যোগাযোগ ও স্বচ্ছতা: মুদ্রাস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা এবং নীতিগত পদক্ষেপ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে স্পষ্ট যোগাযোগ অপরিহার্য। স্বচ্ছ যোগাযোগ সকলের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করতে পারে। সময়মত সঠিক তথ্য দেওয়ার মাধ্যমে, নীতি নির্ধারকরা ব্যক্তি ও ব্যবসায়িকদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে, যা মূল্য স্থিতিশীলতায় অবদান রাখে।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: আন্তঃসংযুক্ত বিশ্ব অর্থনীতিতে, দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা অত্যাবশ্যক। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো অতিরিক্ত অর্থ মুদ্রণ রোধ করতে ও মুদ্রাস্ফীতি রোধ করতে তাদের নীতিগুলো সমন্বয় করতে পারে। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, মুদ্রানীতি সমন্বয় ও বাণিজ্য চুক্তির মতো ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা করা যেতে পারে। এরমাধ্যমে স্থিতিশীল মূল্য ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটতে পারে।

নতুন অর্থ মুদ্রণ মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়াতে পারে। বিচক্ষণ আর্থিক ও রাজস্ব নীতি, একটি স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সরবরাহ-সংস্কার, স্বচ্ছ যোগাযোগ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সমন্বয়ের মাধ্যমে বিরূপ প্রভাবগুলো কমানো যেতে পারে। এই ব্যবস্থাগুলো কাজে লাগিয়ে দেশগুলো মূল্য স্থিতিশীলতার জন্য চেষ্টা করতে পারে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন