ইফতেখার ইসলাম: পথের ধারে পড়ে আছে নানান ধরনের মানুষ। কেউবা তাবু টেনে আবার কেউ একদম খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। প্রাপ্ত বয়স্কদের সাথে আছে নারী ও শিশুরাও। আবার শহরের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ভিড় প্রচুর। সব মিলিয়ে পথে প্রান্তরে বাস্তুহীন মানুষের এক নাজেহাল জীবন। আর এই চিত্র কোন দরিদ্রপীড়িত দেশের নয় বরং বিশ্বকে প্রতিনিয়ত ‘চোখ দেখিয়ে’ চলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির চিত্র।
বৈভব ও প্রাচুর্যে ভরা নিউইয়র্কের সৌন্দর্য নষ্ট করছে এই চিত্র। সেই সাথে বাড়ছে অপরাধপ্রবণতাও। মূলত অত্যাধিক মাত্রায় অভিভাসন প্রত্যাশীদের চাপ এবং শহরে বিদ্যমান গৃহহীন মানুষদের কারণে ঘটছে এমনটা। করোনা এবং এর পরে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বেড়েছে প্রায় সব কিছুর দাম। এমন পরিস্থিতিতে শহরে বাসা ভাড়াও বেড়েছে বহুগুণ। এমন অবস্থায় কম আয়ের মানুষরা যেমন বাসা ভাড়া যোগাতে পারছেন না তেমনি নিজের ব্যায়ও নির্বাহ করতে সমস্যায় পড়ছেন।
আর সাধারণ জনগণের এমন দুর্ভোগের দিনে সহায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে সিটি প্রশাসন। ১৫ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া সেকশন-৮ এ আবারও আবেদন চালু করেছে নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটি (এনওয়াইসিএইচএ)। গত ৩ জুন থেকে শুরু হওয়া এই আবেদন খোলা থাকবে ৯ জুন পর্যন্ত। আবেদনের পর সেকশন-৮ অনুযায়ী উপযুক্তদের বাসা ভাড়া মাসিক আয়ের ৪০ শতাংশের বেশি হলে তা এনওয়াইসিএইচএ বহন করবে।
নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সালের হাউজিং অ্যান্ড কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট অনুযায়ী হাউজিং চয়েস ভাউচার প্রোগ্রাম বা সেকশন ৮ চালু হয়। এতে যোগ্য নিম্ন এবং মাঝারি আয়ের পরিবারগুলোকে বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য সহায়তা প্রদান করা হয়৷ এই প্রোগ্রামের জন্য যোগ্যতা একটি পরিবারের মোট বার্ষিক আয় এবং পরিবারের আকারের উপর ভিত্তি করে।
সেকশন-৮ এ আবেদনকারীদের অবশ্যই সহায়তা পাওয়ার সমস্ত শর্ত পূরণ করতে হবে। যার মধ্যে তাদের বার্ষিক সার্টিফিকেশন সম্পূর্ণ করা, হাউজিং কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা, সম্পত্তির মালিকদের যেকোন প্রয়োজনীয় মেরামত করার অনুমতি দেওয়া এবং তাদের লিজের শর্তাবলী মেনে চলা উল্লেখযোগ্য।
এনওয়াইসিএইচএ জানিয়েছে, তারা দেশের বৃহত্তম সেকশন-৮ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে। বর্তমানে আনুমানিক ৮৫ হাজার ভাড়াটিয়া এবং ২৫ হাজার বাড়ির মালিক এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করছেন।
এদিকে প্রশাসন নিউইয়র্কবাসীর আবাসন নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করে সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেন, ১৫ বছর পর আমরা কয়েক হাজার নতুন সেকশন-৮ আবেদনকারীদের জন্য এনওয়াইসিএইচএ’র দরজা আবার খুলে দিচ্ছি। আর মাধ্যমে আরও নিউইয়র্কবাসী তাদের প্রয়োজনীয় আবাসন খুঁজে পাবেন।
তিনি বলেন, আমাদের শহরের আবাসন সংকট মোকাবেলা করার অর্থ হল আমাদের শহরের প্রতিটি সরঞ্জাম ব্যবহার করা, আমরা ঠিক এটাই করছি৷ আমাদের ‘২৪ ইন ২৪’ পরিকল্পনার মাধ্যমে এই বছর সরকারি জমিতে ২৪টি আবাসন প্রকল্পকের কাজ অগ্রসর হচ্ছে। আমরা প্রত্যেক নিউইয়র্কবাসীকে তাদের বাড়ি খুঁজে পেতে এবং থাকার স্থান করে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
জিনা ক্যাপুচিট্টি নামে এক হাউজিং অ্যাডভোকেট বলেন, বাসা ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় অনেকের জন্য এটির যোগান দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে হাউজিং অথরিট ‘র এই উদ্যোগ শহরের গৃহহীন সমস্যা অনেকাংশে কমাবে।
নিউইয়র্ক রাজ্যের আগামী ২০২৫ অর্থ বছরের বাজেটেও আবাসন খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। গত এপ্রিলে পাশ হওয়া এই বাজেটে জন্য প্রণোদনা, ভাড়াটে সুরক্ষা আইনসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়।
গভর্নর হোকুল সে সময় বলেন, ‘এই বাজেটে তিন প্রজন্মের মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক আবাসন নীতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে’।
আবাসন খাত সমৃদ্ধ করতে রাজ্যব্যাপী উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে—আবাসন নির্মাণের জন্য নতুন কর প্রণোদনা; দলিল চুরির বিরুদ্ধে সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পত্তিতে ১৫ হাজার নতুন আবাসন ইউনিট তৈরির জন্য ৫শ মিলিয়ন ডলার প্রদান।
গভর্নর বলেন, নিউইয়র্ক সিটি নতুন করে আবাসন তৈরির জন্য স্থানীয় নিয়ন্ত্রণ পাবে এবং ৪২১-এ ট্যাক্স অ্যাবাটমেন্ট প্রোগ্রামটি ৬ বছরের জন্য বাড়ানো হবে। অব্যবহৃত অফিস স্থানকে সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনে রূপান্তর করা সহজ করে তোলা হবে; ২০১৯ সাল থেকে খালি থাকা ইউনিটগুলোর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে এবং ভাড়া বৃদ্ধি থেকে রক্ষা করার জন্য একটি নতুন আইন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
Views: 2
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন