সিএন প্রতিবেদন: একটি শিশু বসে আছে একটি বাটিতে, নিচে বুকসমান পানি। তাঁর চোখজুড়ে ভয় আর অজানা অনিশ্চয়তা। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী থেকে তোলা সেই ভাইরাল ছবিটি নাড়িয়ে দিয়েছিল অনেককে। আর নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস ল্যাটিন স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষে সেই ছবিই একদল শিক্ষার্থীর মনে জাগিয়ে তোলে প্রশ্ন—এই শিশুর ভবিষ্যৎ কেমন হবে?
সেই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় তাদের যাত্রা। সেই যাত্রার গন্তব্য—একটি কল্পিত ভবিষ্যতের ফেনী। যেখানে রয়েছে ভাসমান শহর, টেকসই প্রযুক্তি আর মানুষের মাঝে একতাবদ্ধ হওয়ার গল্প। আর সেই শহরের নকশা তৈরি করেই তারা অর্জন করেছে ‘ফিউচার সিটি’ প্রতিযোগিতায় নিউইয়র্ক রিজিওনে তৃতীয় স্থান। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৩০টিরও বেশি দল।
*প্রকল্পের মূল ভাবনা:
এই বছরের থিম ছিল “Above the Water”। শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ ছিল এমন একটি শহরের পরিকল্পনা করা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতেও টিকে থাকতে পারে।
তারা বেছে নেয় বাংলাদেশের ‘ফেনী’ শহরকে। কল্পনা করে ১০০ বছর পরের এক শহর—যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি মিলেমিশে তৈরি করেছে টেকসই এক বসবাসযোগ্য জায়গা।

*কী ছিল সেই ভাসমান শহরে?
-শাপলার হাওর আকৃতির শহর, যার স্থাপত্যে রয়েছে শাপলা ফুলের অনুপ্রেরণা।
- প্রাকৃতিক হাসপাতাল ও ওয়েলনেস রিট্রিট—চিকিৎসা ও মানসিক শান্তির মিলনস্থল
- সমুদ্রের ঢেউ থেকে শক্তি উৎপাদনের ব্যবস্থা
-বটগাছ ঘিরে আধুনিক কমিউনিটি স্পেস, যা গ্রামীণ সংযোগের প্রতীক
এই শহর কেবল প্রযুক্তিনির্ভর নয়, এটি একটি সংস্কৃতিসম্মত ও মানবিক শহর, যেখানে মানুষ একে অন্যের পাশে দাঁড়ায়।
*ভবিষ্যতের ফেনী প্রকল্পে আরও যা ছিল—
- পরিবেশবান্ধব, দৃষ্টিনন্দন ও সংস্কৃতিসম্মত ডিজাইন।
- টেকসই শক্তি ও স্বাস্থ্যসেবা
- কমিউনিটি সংহতির আধুনিক ধারণা
- ভিন্ন সংস্কৃতির শিক্ষার্থীদের একসাথে কাজের অনন্য উদাহরণ

বাংলাদেশি আমেরিকান শিক্ষিকা মিস তাসবিহা চৌধুরী জানান, “ছাত্রছাত্রীরা শুধু একটি শহরের নকশা করেনি, তারা একটি গল্প বলেছে। বাংলাদেশের ফেনীর সেই শিশুটির চোখে দেখা ভয় তারা রূপান্তর করেছে সম্ভাবনার আলোয়। নিজের শেকড়ের সাথে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করতে পেরে আমি গর্বিত।
শিক্ষার্থী কার্লেনি ভাসকেজ বলেন, “আমি কখনো বাংলাদেশ যাইনি। কিন্তু এই প্রকল্প করতে গিয়ে মনে হয়েছে, ওখানকার মানুষও আমারই মতো। আমরা সবাই একই পৃথিবীর বাসিন্দা। এটা একটা দায়িত্বের অনুভূতি।”
*স্কুলজুড়ে উচ্ছ্বাস:
এদিকে পুরস্কার ঘোষণার পর ব্রঙ্কস ল্যাটিন স্কুলে এক বর্ণাঢ্য সমাবেশের আয়োজন করা হয়। পুরো স্কুল কমিউনিটির সামনে শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করে তাদের প্রকল্প। এতে উপস্থিত ছিলেন পরিবার, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। তারা করতালির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন