শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

পদ্মাসেতুর উদ্বোধন, সারাবিশ্বের প্রশংসায় বাংলাদেশ

রবিবার, জুন ২৬, ২০২২

প্রিন্ট করুন

চলমান নিউইয়র্ক ডেস্ক : নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ শুধু দেশের আত্মনির্ভরশীলতা বা আত্মমর্যাদাই বৃদ্ধি করেনি বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান উঠে এসেছে এক অনন্য উচ্চতায়। স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের সবচেয়ে বড় এই স্থাপনার নজির গড়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রশংসা ও অভিনন্দনে ভাসছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি প্রশংসা কুড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। যার অদম‌্য ইচ্ছাশক্তিতে বাস্তবে রূপ পেয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।  ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত পদ্মাসেতু নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তা উল্লেখ করা হলো-

 বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ: যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র পদ্মা সেতুকে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সংযোগের উন্নয়নে বাংলাদেশের নেতৃত্বের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে। মার্কিন দূতাবাসের জারি করা একটি মিডিয়া নোটে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ তৈরি করবে, বাণিজ্য বৃদ্ধি করবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য জনগণ এবং পণ্যকে দক্ষতার সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য টেকসই পরিবহন অবকাঠামো তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।

পদ্মা সেতু সাহসের একটি প্রতীক: চীন

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়ে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, পদ্মা সেতু আমার কাছে সাহসের একটি প্রতীক, সংকল্পের প্রতীক এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। তিনি বলেন, ‘শনিবার একটি মহৎ দিন! বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা বহুমুখী সেতু অবশেষে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, আর এক দশকের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে! এ পর্যায়ে আমি এই অসামান্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই।’

চীনা রাষ্ট্রদূত নিজস্ব অর্থে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণে সাহসিকতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘সেতুটি আমার কাছে সাহসের একটি প্রতীক। স্বল্পোন্নত দেশ বাংলাদেশ এমন সেতু নির্মাণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। তারপরও বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আজ সেতুটি শুধু বাস্তবায়নই হয়নি, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে এর শতভাগ নির্মিত হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে যদি সাহসের কোনো সীমা না থাকে, তবে আকাশ তার সীমা।’

সংস্কৃতি ও আবেগের প্রতীকী সংযোগকারী: ভারত

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘সাহসী’ সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে বাংলাদেশের কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, পদ্মা সেতু একই সাথে ঐতিহ্যবাহী বাংলার সংস্কৃতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। একটি বড় প্রকল্প হওয়া সত্ত্বেও, পদ্মা সেতু শুধু ইট ও স্টিলের নিরিখে একটি বিশাল কাঠামো নয় বরং এটি হচ্ছে প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপারের মানুষের সংস্কৃতি ও আবেগের প্রতীকী সংযোগকারী।

তিনি বলেন, ‘সেতুটি ব্যবসার চেয়েও অনেক কিছুর সংযোগকারী; এটি মানুষের সংযোগকারী, এটি আবেগের সংযোগকারী এবং এটি বাংলার সংস্কৃতির সংযোগকারী।’এটি ভারতের বাঙালিদের জন্যও একটি ‘শুভক্ষণ’। বাংলাদেশের পক্ষে নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা কঠিন কাজ ছিল এবং এটি শেখ হাসিনার অব্যাহত ও দৃঢ় সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।

হাইকমিশনার বলেন, যখন বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের প্রথম দিকে বিদেশী ঋণ নিয়ে এই কাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল, তখন ‘আমরা (ভারত) ছিলাম প্রথম দেশ, আমরা যেভাবে সম্ভব এই প্রকল্পের সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।’ কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন নিজস্ব (অভ্যন্তরীণ) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তখন ভারত আবারও ‘তার সিদ্ধান্তের প্রতি জোরালো সমর্থন জানায় এবং আমরা সরবে এবং প্রকাশ্যে আমাদের সমর্থন জানাই।’

 বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় মাইলফলক: জাপান

পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে তার আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে গিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকো বলেছেন, এই পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় একটি চমৎকার মাইলফলক। আর এটি বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্যোগ ও অর্থায়নে নির্মাণ শেষ হয়েছে। তিনি পদ্মা সেতুকে দেশের স্বপ্ন ও গর্ব হিসেবে অভিহিত করেন। বাংলাদেশ এর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য কি করতে পারে এটি তার বড় প্রমাণ। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধিও আকাঙ্খা পূরণ করবে। তার দেশ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকারের চলমান প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের সুযোগ নিতে আগ্রহী। আমি নিশ্চিত যে এক সময় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হবে। জাপান সরকার ও জাইকা এই সরকারের নির্মাণ প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বিবেচনার অবস্থানে থাকবে।

বাংলাদেশির জন্য এটা গবের্র: অস্ট্রেলিয়া

বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জেরেমি ব্রুয়ার বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রতিবেশীদের সাথে বাংলাদেশিদের আরও কার্যকরভাবে সংযুক্ত করে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ‘গতিশীল’ করবে।

তিনি বলেন, সেতুটি বাংলাদেশিদের বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে আরও কার্যকরভাবে সংযোগ বৃদ্ধি এবং এতদঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গতিশীল করার কাজটি সহজ করে তুলবে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশিদের জন্য একটি বড় অর্জন এবং সব বাংলাদেশির জন্য এটা গবের্র বিষয়। তিনি  অস্ট্রেলিয়াবাসীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে অভিনন্দন জানান।

এফআইটি/সিএন

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন