মিনহাজুল ইসলাম
থরে থরে সাজানো চালের বস্তা। পাশে রয়েছে ডালের বস্তার স্তুপ। কিছুদূর যাওয়ার পর চোখে পড়ল তেল, চিনি, লবণ, বিস্কুট, খাবার পানি, স্যালাইনের স্তুপ। প্রথম দেখাতেই মনে হতে পারে এটি হয়ত কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের গুদাম ঘর।
তবে এটি কোন গুদাম ঘর চিত্র নয়, এটি দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য ‘আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ এর পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী সাজিয়ে রাখার চিত্র। চট্টগ্রাম নগরীর ভিআইপি টাওয়ারের নিচে অবস্থিত কমিউনিটি সেন্টারে চলছে ত্রাণ সামগ্রী প্যাকটে করার বিশাল কর্মযজ্ঞ।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় পানিবন্দি ৬ শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করেছে চট্টগ্রাম ভিত্তিক এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বন্যা দুর্গত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের জন্য ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত করছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার দুর্গত মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে ত্রাণ সামগ্রী। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান লক্ষ্য বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ২ হাজার পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া। আগামী সপ্তাহে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দীন জানান, দেশের যেকোনো দুর্যোগে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ঝাঁপিয়ে পড়ে। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বন্যার শুরুতেই ৬ শতাধিক মানুষকে উদ্ধার করেছে। বর্তমানে আমরা বন্যার্তদের মাঝে ভালোবাসার উপহার পৌঁছে দিতে কাজ করছি।
আল মানাহিল ফাউন্ডেশন বন্যার শুরুতেই ১৬ হাজার মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে। ধাপে ধাপে আরও কয়েক হাজার বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বেচ্ছাসেবকরা বড় ও ছোট পরিবারের বিষয় বিবেচনা করে দুই ধরনের প্যাকেট তৈরি করছে। বড় পরিবারের প্যাকেটে থাকছে ৩৫ কেজির নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আর ছোট পরিবারের প্যাকেটে থাকছে ২০ কেজির দ্রব্য। এসব দ্রব্যের মধ্যে থাকছে চাল, ডাল, তেল, লবন, চিনি, বিস্কুট, পানি ও স্যালাইন। এসব দ্রব্য যেকোন পরিবারের দুই সপ্তাহ অনায়াসে চলে যাবে।
হেলাল উদ্দীন জানান, আল্লাহ যদি সহায় হন এরপর আমাদের লক্ষ্য আছে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত ২ হাজার পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে ঘর করে দেওয়া। আমাদের ডোনারদের অর্থের উপর এই প্রকল্পের আকার নির্ভর করবে। অনুদান বেশি আসলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
১৯৯৮ সালে মানবসেবার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের নানুপুর জামিয়া ইসলামিয়া ওবাইদিয়ার তৎকালীন প্রধান পরিচালক মাওলানা জমির উদ্দিনের (রহ.) হাত ধরে গড়ে উঠে আল মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। তাঁর মৃত্যুর পর সাত ছেলে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছেন। করোনা মহামারির সময় করোনায় মারা যাওয়া দাফন-কাফনসহ সবকিছু করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে দেশের যেকোন দুর্যোগে সম্মুখ সারিতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
সিএন/এমটি
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন