শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

ঈদের কেনাকাটায় জনপ্রিয় ৯ বাংলাদেশি পোশাক ব্র্যান্ড

শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

প্রিন্ট করুন
জনপ্রিয় বাংলাদেশি পোশাক ব্র্যান্ড
জনপ্রিয় বাংলাদেশি পোশাক ব্র্যান্ড

পোশাক বিপণনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় ঈদের মৌসুম। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরকে উদ্দেশ্য করে রোজা শুরু হতে না হতেই সরব হতে শুরু করে পোশাকের বাজার। নতুন কাপড়ের উৎসবকে স্মরণীয় করে রাখতে নিজেদের প্রিয় ব্র্যান্ডের শরণাপন্ন হন ফ্যাশন সচেতন ক্রেতারা। এই শৌখিন শ্রেণিটিকে উদ্দেশ্য করে নিজেদের নতুন শৈলী নিয়ে হাজির হয় দেশ সেরা ব্র্যান্ডগুলো। এই উপলক্ষে চলুন, দেশের জনসমাদৃত ১০টি পোশাক ব্র্যান্ডের ঈদ সংগ্রহ দেখে নেওয়া যাক।

ঈদের বাজারে লোকপ্রিয় ৯টি বাংলাদেশি পোশাক ব্র্যান্ড

কে-ক্র্যাফট
১৯৯৩ সালে দেশের ঐতিহ্যবাহী বস্ত্র ও শৈলীকে উপজীব্য করে খালিদ মাহমুদ খান এবং শাহনাজ খান প্রতিষ্ঠা করেন কে-ক্র্যাফট।

প্রতি উৎসবের মতো এবারও পুরুষদের জন্য নিজস্ব স্টাইলের রেগুলার ও ফিটেড পাঞ্জাবির সংগ্রহ রেখেছে কে-ক্র্যাফট। পাশাপাশি রয়েছে কাট নির্ভর একরঙা পাঞ্জাবিও।

নারীদের জন্য নির্ধারিত পোশাক সারিতে দেখা গেছে ঐতিহ্য, ক্ল্যাসিক, রেট্রো, ফিউশন, ও লং প্যাটার্ন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ডাবল লেয়ার্ড সালোয়ার কামিজ, ডাবল লেয়ার্ড কুর্তি, টিউনিক, কাফতান, এবং টপ্স-পালাজো সেট। এ ছাড়া শাড়ির ক্যাটাগরিকে সমৃদ্ধ করেছে কটন, মসলিন, সিল্ক, খাদি মসলিনের বৈচিত্র্যগুলো।

প্যাটার্ন, ফ্যাব্রিক এবং রঙের দিক দিয়ে বড়দের মতো বাচ্চাদের পোশাকেও মিলছে একই বৈশিষ্ট্যের দেখা।

রঙ বাংলাদেশ
বিপ্লব সাহা, সৌমিক দাস, মামুন আল কবির এবং জাকিরুল হায়দার। ১৯৯৪ সালে সদ্য স্নাতক পাশ করা এই চার বন্ধু মিলিত প্রচেষ্টায় জন্ম নেয় রঙ। কবির এবং হায়দার কয়েক বছরের মধ্যে তাদের অংশীদারিত্ব ছেড়ে দেন। কিন্তু বিপ্লব এবং সৌমিক টানা ২১ বছর ধরে চালিয়ে যান কাপড়ের ব্যবসা। অতঃপর ২০১৬ সালে, রঙ ‘বিশ্ব রঙ’ এবং ‘রঙ বাংলাদেশ’- এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এখানে ‘বিশ্ব রঙ’-এর কর্ণধার বিপ্লব সাহা, আর ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর একমাত্র মালিক সৌমিক দাস। প্যারেন্ট কোম্পানি ‘রঙ’-এর দৌলতে বর্তমানে দুটোই বেশ স্বনামধন্য ব্র্যান্ড।

ঈদুল ফিতর ২০২৪ কে উপলক্ষ করে ‘রঙ বাংলাদেশ’ নিয়ে এসেছে ৪ উপাদান বিশিষ্ট ক্লাসিক্যাল থিম।

এগুলো হচ্ছে বাতাস, আগুন, পানি ও মাটি। এই থিমের সঙ্গে সব ধরনের পোশাকের নকশায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দেশীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় আবহকে।

গ্রীষ্মের উষ্ণতার সঙ্গে মানিয়ে চলতে পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন হালকা ওজনের ফেব্রিক। এগুলোর মধ্যে আছে স্লাব কটন, লিনেন, জ্যাকার্ড কটন, হাফসিল্ক, বারফি, জর্জেট ও ভিসকস। আর রঙের ভিত্তিতে প্রাধান্য পেয়েছে মেরুন, ফিরোজা, নীল, আকাশী, লাল, খয়েরি, হালকা কমলা, গাঢ় সবুজ ও কফি রঙগুলো।

আরও পড়ুন: ঈদে ভ্রমণ উপযোগী পোশাক

অঞ্জন্স
১৯৯৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শাহীন আহমেদের হাত ধরে শুরু হয় অঞ্জন্সের পথ চলা। এবারের ঈদে অঞ্জন্সের নকশা শৈলী, রঙ ও ফেব্রিকে থাকছে বসন্ত থেকে গ্রীষ্মে রূপান্তরের আবহ।

সালোয়ার কামিজ ও ওড়নার মুল উপাদান লিনেন, জ্যাকার্ড কটন, রেয়ন, ডুপিয়ান, ও হাল্কা সিল্ক।

শাড়ি বিভাগে ঠায় পেয়েছে মসলিন, রাজশাহী বলাকা সিল্ক, টাঙ্গাইল কটন, লিনেন কটন, ও ভয়েল কাপড়। কামিজের পাশাপাশি শাড়ির নকশারও বিশেষ বিষয় ব্লকপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট, কারচুপি ও ডিজিটাল প্রিন্ট।

কাপড় ও নকশার একই রকম হাল্কা কাজ দেখা যাচ্ছে পুরুষদের সেরা পোশাক পাঞ্জাবিতেও। স্লিম ফিট, কলিদার কাট, ও রেগুলার ফিট সব ধরনের আকারই মিলবে এবারের ঈদ আয়োজনে।

এক্স্ট্যাসি
১৯৯৭ সাল থেকে শুরু হওয়া দেশের স্বনামধন্য রেডিমেড পোশাক ব্র্যান্ড এক্স্ট্যাসির প্রতিষ্ঠাতা তানজিম আশরাফুল হক। এক্স্ট্যাসির অধীনে পুরুষদের জন্য স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড ‘তানজিম’ এবং নারীদের জন্য ‘জারজাইন’। শুধুমাত্র তরুণদেরকে উদ্দেশ্য করে গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানের সর্বাঙ্গীন মনোনিবেশ থাকে হাল ফ্যাশনের প্রতি।

সাধারণত পার্টি পরিধান, বোতাম-সমেত লম্বা হাতা, পিনস্ট্রিপ্ড শার্ট, ক্যাজুয়াল টি-শার্ট, ডেনিম জিন্স, এবং স্পোর্টস জ্যাকেট পুরুষদের মুল আকর্ষণ। এর সঙ্গে উৎসবগুলোতে যুক্ত হয় তানজিম স্কোয়াডের টি-শার্ট ও তানজিম পাঞ্জাবিগুলো। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে জারজাইনের কাফতান, শ্রাগ, টপস, শার্ট, এবং টপ-বটম সেট সর্বাধিক বিক্রয়ের তালিকায়। বিশেষ করে যারা এক রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই এক্স্ট্যাসি সের

ট্রেন্ড্জ
একবিংশ শতকের দেশ সেরা পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ট্রেন্ড্জ একটি। ব্যাবিলন গ্রুপের প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালের ১৪ অক্টোবর।

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রতিটি তরুণের আধুনিক ফ্যাশন নিশ্চিত করে ট্রেন্ড্জ। এবারে রোজার ঈদেও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ছেলেদের জন্য থাকছে নতুন ধরণের ক্যাজুয়াল শার্ট, টি-শার্ট, পলো শার্ট, ফরমাল শার্ট, টুইল, ডেনিম প্যান্ট এবং পাঞ্জাবি। টি-শার্টগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য আধুনিক প্রিন্ট ও টুইল, আর ডেনিম প্যান্টগুলো ফিট ও ওয়াশ শেড দেওয়া। পাঞ্জাবির কাপড়ে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নতমানের কটন সিল্ক ও হ্যান্ডলুম সিল্ক।

অন্যদিকে মেয়েদের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক শৈলীর লেডিস শার্ট, টি-শার্ট, ফরমাল ও ডেনিম প্যান্ট, টপস, এবং ফতুয়া। রঙের দিক থেকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে লাল, গোলাপি, মেরুন, সাদা ও কালো। আর প্রতিটি পোশাকেই আলাদা ভাবে চোখে পড়ে হাতের কারচুপি ও মেশিন এমব্রয়ডারি সহ ভিন্নধর্মী কারুকাজ।

দেশাল
কনক আদিত্য, ইশরাত জাহান এবং সবুজ সিদ্দিকী মিলে ২০০৫ সালে শুরু করেন দেশাল। তিনজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক পাশ করা। দেশীয় ঘরানার পোশাক কেন্দ্রীভূত এই প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তা লাভ করতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বরাবরের মতো এবারও ঈদের পোশাকের সেরা পছন্দগুলোর মধ্যে দেশাল অন্যতম।

নতুন পরিধেয়গুলোর মূল উপাদান সুতি কাপড়, আর নকশায় আছে ব্লক, হাতের কাজ, এমব্রয়ডারি ও বিভিন্ন ধরনের প্রিন্ট। পুরো পরিবার নিয়ে যেন কেনাকাটা করা যায় ঠিক সেভাবেই শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে পোশাকগুলোর।

তরুণীদের জন্য এবারের আকর্ষণগুলো কাফতান কাটিংয়ের কো-অর্ড সেট, ফ্লেয়ার ড্রেস ও স্কার্ট। আর ছেলেদের ট্রেন্ডি পাঞ্জাবিতে রয়েছে অভিন্ন রঙ ও গলায় হাতে সেলাই করা সরু বর্ডার।

লা রিভ
বিশাল রিভ সাম্রাজ্যের রিভ টেক্স লিমিটেডের একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড লা রিভ, যার শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। সেই থেকে প্যারেন্ট কোম্পানির সান্নিধ্য ছাড়িয়ে জনপ্রিয়তায় নিজের একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছে পোশাক ব্র্যান্ডটি।

প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিষ্ঠানটি চমক দিতে চলেছে নতুন থিম দিয়ে, যার নাম ‘ইন্ডালজেন্স’। প্রতিটি পোশাকের ধারা, নকশা, রঙে উৎসব মগ্নতার উচ্ছ্বাসকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গভীরভাবে।

প্রতিবারের মতো এবারও লা রিভের সেরা আকর্ষণ নার্গিসাসের পোশাকগুলো। তাছাড়া ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চোখে পড়েছে সিল্ক ও মসলিনের অসাধারণ মেলবন্ধন। গ্রীষ্মের প্রখরতা কমাতে সিল্ক ও আরামপ্রদ ভিসকোসের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কাপড়।

ঈদের পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ, শাড়ি, শ্রাগ, শার্ট, লং টিউনিকের পসরা পুরো পরিবারের জন্যই একক গন্তব্যে পরিণত করেছে লা রিভকে।

টুয়েল্ভ ক্লদিং
টিম গ্রুপের ১২-তম উদ্যোগ হিসেবে ২০১২-এর ১২ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ ঘটে টুয়েল্ভ ক্লদিং-এর। পোশাক ব্র্যান্ডটির বিশেষত্ব ডিজিটাল প্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, কারচুপি এবং এম্ব্রয়ডারি। এমন কারুকাজ পোশাক পরিধানে আরামদায়ক অনুভূতি দেয়।

আসন্ন ঈদে টুয়েলভ ক্লদিং-এর নতুন থিম ‘রয়্যাল ডেলিকেসি’। রাজকীয় আবহে আসছে ছেলেদের টু-পিস কম্বো সেট ও থ্রি-পিসের ফুল সেট। এতে অন্তর্ভূক্ত পাঞ্জাবি, কোটি ও পায়জামা। বাদ যায়নি কাবলি কালেশনও।

আর মেয়েদের সেকশনে দেখা গেছে টু ও থ্রি-পিস সেট, কো-অর্ড সেট, এথনিক টপ ও গাউন এবং ফিউশন কুর্তি।

সারা লাইফস্টাইল
স্নোটেক্স গ্রুপের একটি সহযোগী উদ্যোগ হিসেবে ২০১৮-এর মে মাসে চালু হয় সারা লাইফস্টাইল। এস এম খালেদের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানটি সাম্প্রতিক ফ্যাশন হাউজগুলোর মধ্যে শুরু থেকেই বেশ সুনাম অর্জন করেছে।

‘উৎসবের আলিঙ্গন’ নাম নিয়ে আসতে চলেছে সারার ঈদুল ফিতর ২০২৪ কালেকশন। এগুলোর নকশায় স্থান পেয়েছে সাবলিমেশন প্রিন্ট, অল ওভার প্রিন্ট, এম্ব্রয়ডারি, স্ক্রিন প্রিন্ট, এবং কারচুপি। স্থাপত্যশৈলীর সৌন্দর্যমন্ডিত নকশায় প্রতিফলিত হয়েছে বিমূর্ত রেখাচিত্র, ফুল ও পাতা, ও জ্যামিতি। তবে সবকিছুর আবহে প্রাণ পেয়েছে উৎসব মুখরতা।

পোশাকে ব্যবহৃত হয়েছে ক্রেপ জর্জেট, ভিসকস, জ্যাকার্ড কটন, ডবি সিল্ক, নিট, ও ডেনিম কাপড়।

ছেলেদের কালেকশনে স্থান পেয়েছে ক্যাজুয়াল, টি ও পোলো শার্ট, ডেনিম, চিনো ও কার্গো প্যান্ট, ফরমাল শার্ট, এবং পাঞ্জাবি-পায়জামা ও কোটি।

মেয়েদের জন্য আনা হয়েছে আনারকলি থ্রি পিস, কো অর্ডস, ফ্যাশন টপস, স্কার্ফ, কাফতান, কুর্তি, শ্রাগ, সারারা, ও শাড়ি। এছাড়া ঈদকে কেন্দ্র করে আলাদা ভাবে থাকছে সপরিবারে কেনাকাটার বিশেষ আয়োজন।

পরিশিষ্ট
সামগ্রিকভাবে এই ১০টি পোশাক ব্র্যান্ড প্রতিনিধিত্ব করছে বর্তমান সময়ের দেশীয় রেডিমেড পোশাক শিল্পকে। পুরনোদের মধ্যে আড়ং এবং কে-ক্র্যাফ্টের স্বতন্ত্র শৈলী অব্যাহত থাকলেও এবারের বাজারে জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছে রঙ এবং অঞ্জন্স। একবিংশ শতাব্দির ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ক্রেতাদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ট্রেন্ড্জ, দেশাল, লা রিভ, এবং টুয়েল্ভ ক্লদিং। এগুলোর পাশাপাশি মিনিমালিস্ট তরুণদের আলাদা দৃষ্টি থাকবে এক্স্ট্যাসির তানজিম স্কোয়াডের দিকে। অন্যদিকে নতুন ফ্যাশন হাউজগুলোর মধ্যে বিগত বছরের ন্যায় এবারও সাড়া ফেলতে পারে সারা লাইফস্টাইল।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন