শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

‘বাংলা কর্ণার’ উদ্বোধন হল নিউইয়র্কের কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১

প্রিন্ট করুন
bangla corner 1
bangla corner 1

ঢাকা: আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরিতে ‘বাংলা কর্ণার’ স্থাপন করা হয়েছে। ’মুজিব বর্ষ’ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়কের্র উদ্যোগে এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির সহযোগিতায় কর্ণার স্থাপনা করা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর) এ কর্ণার উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি ল্যু, কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস এবং কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীর প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেনিস এম ওয়ালকটসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির সদস্য এবং সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কম্যুনিটির সর্ববৃহৎ আবাসস্থল নিউইয়র্কের কুইন্স বোরো যেখানে ইংরেজী, স্প্যানিশ ও চাইনিজ ভাষার পরেই বাংলা চতুর্থ বৃহৎ ভাষা হিসেবে ব্যবহ্নত হয়। সে কারণে ওই বোরোতে অবস্থিত কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীতে ’বাংলা কর্ণার’ উদ্বোধন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ’বাংলা কর্ণার’টিতে মোট ৩০৯টি বই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। বইগুলো বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিষয়ে বাংলাদেশের প্রথিতযশা লেখক ও সাহিত্যিকদের লেখা। এছাড়াও, বাংলাদেশের উপন্যাস, গল্পসমগ্রসহ শিশু-কিশোর উপজীব্য বইগুলো এ কর্ণারে স্থান পেয়েছে।

২০১৯ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত পর পর তিন বছর কুইন্সের মূলধারাকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুইন্সে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশী-আমেরিকানদের জন্য কনস্যুলেট যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীতে ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষ্যে ’বাংলা কর্ণার’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালে এ ’বাংলা কর্ণার’ বিপুল পরিসরে উদ্বোধনের কথা থাকলেও কভিড-১৯ মহামারির কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন সীমিত পরিসরে কভিড সংক্রান্ত নিয়মাবলী অনুসরণ করে ‘বাংলা কর্ণার’টির উদ্বোধন করা হল।

অনুষ্ঠানে একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘২০২১ সাল বিভিন্ন দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ বছর  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। এ বছর বাংলাদেশের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি হল- বাংলাদেশ এ বছরই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সব সূচকে সফলভাবে উর্ত্তীর্ণ হয়েছে। সে কারণে এ বছরের এ দিনে ‘বাংলা কর্ণার’ এর উদ্বোধন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।’

 তিনি এ সময় কুইন্স লাইব্রেরীকে ঘিরে তার অতীত স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি।’

প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মদের নিয়ে এ ’বাংলা কর্ণার’এ আসবেন এবং বই পড়বেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মুজিব বর্ষে স্থাপিত এ ’বাংলা কর্ণার’টি আমাদের বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীসহ অন্য মূলধারার প্রতিষ্ঠানের সাথে কনস্যুলেটের যোগাযোগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।’

নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ও ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা এবং ডেনিস এম ওয়ালকট অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

সাদিয়া ফয়জুননেসা বঙ্গবন্ধুর জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক বাংলা ভাষণকে ইউনেস্কোর স্বীকৃতির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’ তিনি এ প্রসঙ্গে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধুর বার বার কারাবরণের সময়কাল উল্লেখ করে বলেন ‘মুজিব বর্ষে এ ’বাংলা কর্ণার’ স্থাপন যথার্থ প্রতীকী এবং গুরুত্ব বহন করে।’

অনুষ্ঠানে অন্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য দেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন সি ল্যু, কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট ডোনাভান রিচার্ডস এবং সাংবাদিক হাসান ফেরদৌস। প্রত্যেকেই বাংলা ভাষাকে নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশী-আমেরিকানদের কাছে তুলে ধরার এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষি সবার বিশেষ করে শিশু কিশোরদের মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা তৈরি হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।

বক্তব্য শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী তার নিজের লেখা বেশ কয়েকটি বই ডেনিস ওয়ালকটের হাতে তুলে দেন। ডেনিস এম ওয়ালকট কমিউনিটিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর হাতে একটি সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।

এসব বই কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রধান শাখায় ছয় মাস দেখানো হবে এবং পরবর্তী লাইব্রেরীর বিভিন্ন শাখায় সগৃহীত থাকবে।

চলমান নিউইয়র্ক/মোহাম্মদ আলী

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন