শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

বিটুমিন চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান দিচ্ছে বে-টার্মিনাল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১

প্রিন্ট করুন
hj 1
hj 1

চট্টগ্রাম: বে-টার্মিনাল অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিডিসিএল)। দেশের স্বনামধন্য শিল্পগোষ্ঠী পিএইচপি ফ্যামিলির একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। সড়ক-মহাসড়ক, বিমানবন্দরের রানওয়ের নির্মাণ কাজে আমদানিকৃত তরল (বাল্ক) বিটুমিন ব্যবহারের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। অত্যন্ত সুনামের সাথে প্রায় দুই যুগ ধরে দেশে বিটুমিনের মোট চাহিদার বড় একটি অংশের যোগান দিচ্ছে এ প্রতিষ্ঠান।  

দেশের বেসরকারি খাতের প্রথম এ বিটুমিন প্ল্যান্টের পণ্য পরিবেশ বান্ধব এবং অর্থ সাশ্রয়ী। মূলত বে-টার্মিনালের হাত ধরেই বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে তরল (বাল্ক) বিটুমিন ব্যবহারের সংস্কৃতি চালু হয়। অর্থাৎ গুণগত মানের ও পরিবেশ বান্ধব বিটুমিন ব্যবহারের প্রতিকৃৎ এ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানেও দেশের সড়ক উন্নয়নে মানসম্পন্ন বিটুমিন সরবরাহ করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। 

জানা গেছে, প্রথম দিকে এটি আমেরিকান-বাংলাদেশ জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। চীনের বিখ্যাত কোম্পানি ‘সিনোপ্যাক’ প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং নির্মাণে নিযুক্ত ছিল। প্ল্যান্টের ড্রয়িং ও লে-আউট আমেরিকান পার্টনার সরবরাহ করে। তারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ, জনবল প্রশিক্ষণসহ গুরুত্বপূর্ণ মূলধনী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে। শুরু থেকেই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এ প্রতিষ্ঠান ধারাবাহিকভাবে গুণগত মান বজায় রেখে পরিচালন ও সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে সক্ষম হয়েছে। 
কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মানের সময় সমুদয় বিটুমিন সরবরাহ করেছে বে-টার্মিনাল। জাপানের শিমিজু-মারুবেনি ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছিল। এছাড়া ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি, জাইকার অর্থায়নে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বিশ্বাসের সাথে কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়াই বে-টার্মিনালের বিটুমিন ব্যবহার করে আসছে এবং সংস্থাগুলোর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বে-টার্মিনাল দেশে গুণগত মানের বিটুমিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি শত শত লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। নিয়মিত করদাতা হিসেবেও নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।  

প্রতিষ্ঠানের নির্বাহি পরিচালক (অপারেশন) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বে-টার্মিনাল সব সময় উন্নত মানের বিটুমিন সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পণ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ ও পরিচালনার বিভিন্ন ধাপে পরীক্ষা করা হয়। প্রাথমিকভাবে আমরা প্রত্যেকটি চালান আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য জাহাজীকরণের পূর্বে তৃতীয় পক্ষের গুণগত পরিদর্শন সংস্থা দ্বারা পরিচালিত ‘প্রোডাক্ট এনালাইসিস প্রসংশাপত্র’ বা গুণগত মানের সনদ পেয়ে থাকি। বে-টার্মিনাল স্টোরেজ ট্যাংকে পণ্য গ্রহণের আগে নমুনা সংগ্রহ করে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) অথবা বুয়েটের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বে-টার্মিনালের নিজস্ব ল্যাবে নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়।’  

হুমায়ুন কবির আরো জানান, কিছু দিন ধরে বেশকিছু বাণিজ্যিক ড্রাম আমদানিকারক ড্রামভর্তি বিটুমিন আমদানি করছে; কিন্তু ল্যাব টেস্টে প্রকৃত মান (স্ট্যান্ডার্ড স্পেসিফিকেশন) পাওয়া যায়নি। এ পরিস্থিতিতে সরকার একটি স্থায়ী আদেশ জারি করে; সেখানে আমদানি করা সব বিটুমিনের চালান জাহাজ থেকে খালাসের আগে মান যাচাই বাধ্যতামূলক করা হয়। ওই আদেশ জারির পর থেকে অদ্যাবধি বে-টার্মিনালের আমদানিকৃত সব চালান খালাসের আগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে ইআরএলের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। ল্যাব টেস্টে সব প্যারামিটার বিবেচনায় সঠিক মান পাওয়ায় পণ্য খালাসের অনুমতি দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। 

আমদানিকৃত বিটুমিন তদারকের দায়িত্বে আছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা। তিনি বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বৈধভাবে আমদানির প্রয়োজনীয় দলিলাদি এবং ইস্টার্ন রিফাইনারি ল্যাবের টেস্ট রিপোর্টে সঠিক মান পাওয়া গেলে শুল্ককর আদায় করে আমরা পণ্য খালাস দিয়ে থাকি। আমদানিকারকরা যাতে ন্যায় বিচার পায় সে কারণে একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে টেস্ট করার সুযোগ রেখেছে সরকার। ইআরএল ল্যাবে নেগেটিভ আসলে বুয়েট অথবা বিএসটিআই ল্যাবে টেস্ট করতে পারে। এক্ষেত্রে সংখ্যা গরিষ্ট রিপোর্টের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়।’

তিনি জানান, সম্প্রতি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বিটুমিন আমদানি করেছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিটুমিন ল্যাব টেস্টে মানউত্তীর্ণ হয়নি। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের বিটুমিন খালাস নিতে পারেনি। নিয়ম অনুযায়ী এসব পণ্য ধ্বংস করা হবে। তবে বে-টার্মিনালের আমদানি করা চালানগুলো ল্যাবটেস্টে মান উত্তীর্ণ হয়েছে। কাস্টমসের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়ম অনুযায়ী খালাস দেওয়া হয়েছে।  

প্রতিষ্ঠানের কাজের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বে-টার্মিনাল বাণিজ্যিক ড্রাম আমদানিকারকের মত কোন প্রতিষ্ঠান নয়; এটি একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এখানে আমরা প্রত্যেক আমদানি চালানের গুণগত মান ইআরএল অথবা বুয়েট থেকে পরীক্ষা করানোর চর্চা সরকারি আদেশ জারির আগে থেকেই করে আসছি। ফলে এখনো পর্যন্ত বে-টার্মিনালের আমদানি করা বিটুমিনের গুণগত মান নিয়ে কেউ অভিযোগ করতে পারেনি।’

প্রতিষ্ঠানের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বিপণন) আমিনুল হক আবুল জানান, বে-টার্মিনাল শুরু থেকেই ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন আমদানি করে আসছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ৮০-১০০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার বন্ধে ২০১৫ সালের আদেশ জারি করে। আগামীতে উন্নয়নশীল দেশের মত বাংলাদেশ সরকার উন্নত ও টেকসই সড়ক নির্মাণের জন্য পলিমার মোডিফাইড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহার করতে পারে। বে-টার্মিনাল এরই মধ্যে ভবিষ্যতের চাহিদা পূরণে পিএমবি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় শিল্প কাঠামো স্থাপনের কাজ শুরু করেছে।’ 

চলমান নিউইয়র্ক/মোহাম্মদ আলী

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন