বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫

শিরোনাম

বেদনাকে বলেছি কেঁদো না

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

 ‘যেভাবে সে এলো’ কে’? ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর ‘নেত্রকোনা’য় এক ‘যুগল জীবনী’র ‘সন্ধি’ স্বরূপ এক ‘জোড়া কবুতর’ এর ‘ঘরোয়া’ আয়োজনে ‘প্রত্যাবর্তন’ ঘটে মানুষটার। ‘হিজলতলীর সুখে’র মতো মায়ের কোলে মাতৃত্বের ‘তৃষ্ণা’ মিটিয়ে পৃথিবীতে আসেন স্বল্পপ্রজ কবি হেলাল হাফিজ! 
 
 সেদিন যেন ‘পরানের পাখি’ কুহু কুহু কলরবে করছিলো ডাকাডাকি, ‘ভূমিহীন কৃষকের গানে’ মেতেছে ‘রাখাল’, ‘হিরণবালা’র আঁচলে ফুটেছে ‘লাবণ্যের লতা’। ‘ক্যাকটাস’ বৃক্ষে ফুটেছে দুর্লভ গোলাপি ফুল। যেন, ‘পৃথক পাহাড়’ সবুজে আকুল…’শামুকে’ হঠাৎ মুক্তোর সন্ধান পাওয়াকে মনে হয়েছে, নয়তো সুদূর… কেননা সেদিন- ‘কবি ও কবিতা’ র কাব্যে যুক্ত হয়েছিলো নতুন ‘অহংকার’ ”হেলাল হাফিজ”! 
 
 সেসব যেন ‘একটি পতাকা পেলে’ কাব্যের ‘প্রতিমা’ ‘কবিতার কসম খেয়ে’ বলেছিলো ‘বাম হাত তোমাকে দিলাম’! তুমি যে কবিতার ‘ফেরিওয়ালা! ‘তোমাকেই চাই’ বিংশ শতাব্দী, হে ‘দুঃখের আরেক নাম’ হেলাল হাফিজ! কবি কথা কাব্যে, জানিয়ে দেয়- মাত্র তিন বছর বয়সে তার মাতৃ বিয়োগের ‘নিখুঁত স্ট্র্যাটেজীর কথা’। তাঁর মাতৃহীনতায় মূলত তাঁকে করেছে কবি। 
 
 কবি, মা’কে হারিয়ে তুমি ‘নিরাশ্রয় পাঁচটি আঙুলে’ লিখতে শুরু করো। যার ফল- যে জলে আগুন জ্বলে!’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যা তুমুল জনপ্রিয় এবং এখন পর্যন্ত কবির একমাত্র কাব্যগ্রন্থ। যার সখ্যতায় পড়ে কবি বেছে নিয়েছিল- ‘অনির্ণীত’ নারী। যার জন্য ‘দুঃসময়ে আমার যৌবনে’র মতো কবিতাদের লিখে লিখেই কবি রয়ে গেলেন কুমার! চিরকুমারই বলতাম এখানে। বলিনি কারন, কবিই আমাকে শুধরে দিয়েছিলো একদিন- যে মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত বলা মুশকিল সে কুমার আদৌ চিরকুমার রবে কীনা! আহা, এইতো কবি। যার কাছ থেকে শিখবো বলে ‘রাডার’ পেতে রাখি! 
 
 কবি ‘অন্যরকম সংসার’ জোড়ানো আর দশটা মানুষের মতো ‘ইদানীং জীবন যাপন’ কে ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’র মতো আড়ালেই সম্পাদনা করলেন। করছেন। একা এবং একাই। ‘তীর্থে’র কাকের মতো মানবী নয়, অপেক্ষা করছেন যেন এক একটা ‘মানবানল’ প্রেমের কবিতার। এরই মাঝে ‘সম্প্রদান’ করেছেন আমাদের বাইল্যাঙ্গুয়াল বই ‘কবিতা ৭১’ এর মতো ৫৮টা কবিতা।
 
 প্রেমের কবি, দ্রোহের কবি, জীবনের কবি হেলাল হাফিজ তুমি মূলত ‘ডাকাত’! ডাক দিলে কবিতায় আর তাতেই প্রেমিকা খামে ভরে দিলো মন, কত শত প্রেমিককে! তোমার কবিতার রক্তবর্ণ তেজ, স্লোগান হলো ‘রাজনীতি’তে! জ্বলে উঠলো বারুদ প্রতি যুবকের অন্তরে- “এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়; এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”
 
 
তুমি ডাক দিলে কবিতায় তাতেই ‘অশ্লীল সভ্যতা’র রুপ পাল্টে কাগজের ‘কোমল কংক্রীটে’ ছেপে কাব্য হলো কথারা! তোমার কবিতার নায়ে চড়ে কতো জীবনের ‘অমীমাংসিত’ ‘অগ্নুৎসবে’র মিলন হলো! হলো ‘হৃদয়ের ঋণে’র ঋণাত্বক ‘উপসংহার’! তোমার কবিতার পঙক্তি লিখে কত ধনী দরিদ্র জুটি ‘ব্যবধান’ ভুলে ‘যাতায়ত’ করলো একই রিকশায়। তোমার কাব্য বলে বলে পুলকিত হলো কতো শিহরণ! তুমিই তো শিখিয়েছো নাগরকে বলতে, ‘তোমার বুকের ওড়না আমার প্রেমের জায়নামায’। 
 
কোমলপ্রাণ কবি, তোমার ৬৫তম জন্মবার্ষিকী। এই লেখার সালটি ২০১৩। ইচ্ছে’ করবো তোমায় আমার বাক্য বিলাসের সকল ‘অস্ত্র সমর্পণ’! ‘আমার সকল আয়োজন’ জানাবো বলে ধরণীকে; ধরেছে বলে তোমায় বুকে; ধন‍্যবাদ!
 
কামনা তোমার- দীর্ঘায়ু। এই ভুবনে তোমার ‘প্রস্থান’ হবার জো আর নেই। তুমি বাংলা কবিতায় বেঁচে রবে কাল থেকে কাল- ‘যার যেখানে জায়গা’! তুমি দীর্ঘায়ু হও ত্রিকালদর্শীর কাছে এইতো ‘উৎসর্গ’ বার্তা।
 
 ‘নাম ভূমিকা’য় হয়নি বলা, চেয়ে দেখো, এই লেখাতেও আমি জীবিত রেখেছি তোমার সর্বমোট রচিত ৫৮টা কবিতার সবগুলো নাম!
 
এ তোমার জন্মদিনে আমার উপহার।
সাত- দশ- দুই হাজার তেরো। 
 
 কবি, তুমি মরে গেছো, অমর হতেই বুঝি! 
 এ তোমার মৃত‍‍্যুদিনেও আমার উপহার।
 তেরো- বারো- দুই হাজার চব্বিশ।
আজ তোমার প্রস্থানহীন প্রস্থানে- বেদনাকে বলেছি কেঁদো না। 


চিত্রশিল্পী: জাহান রিমা 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন