শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

ভারতের আসন্ন নির্বাচনে চট্টগ্রামের প্রত্যাশা

সোমবার, মে ২৭, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

প্রশান্ত কুমার শীল: পৃথিবীর বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে ভারত সাতটি ধাপে ২০২৪ এর নির্বাচন করছে। ভারতের এই ১৮তম সাধারণ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে এন.ডি.এ জোট ও কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইন্ডিয়া জোটের পাশাপাশি অনেক আঞ্চলিক দলও অংশগ্রহণ করছে। চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে ভারতের সংযুক্ত দুটি রাজ্য হচ্ছে মিজোরাম ও ত্রিপুরা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে আমাদের অনেক স্মৃতিকথা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরার শরণার্থী ক্যাম্পের কথা এখনো মানুষ স্মরণ করছে শ্রদ্ধাভরে। ভারত বাংলাদেশের সেই জ্বলন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের দলিল অবয়বে দাঁড়িয়ে আছে ত্রিপুরার উজ্জয়ন্ত প্যালেস জাদুঘর।

এছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা রাজ্যের চোত্তাখোলায় নির্মিত হয়েছে ভারত-বাংলা মুক্তি মৈত্রী পার্ক। আরো আছে ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতু যা ত্রিপুরা ও বাংলাদেশকে সংযুক্ত করেছে।

বাংলাদেশের বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের সাথে ভারতের কৌশলগত ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। ভারত তার ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে চায়। চট্টগ্রাম নগরী ভারতের সেভেন সিস্টার এর কোল ঘেঁষে হওয়ায় এর গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে।

চট্টগ্রামের সাথে ভারতের সুসম্পর্কের মাপকাঠি নির্ভর করছে এ দুইটি রাজ্যের ফলাফলের উপর। রাজ্য দুইটিই এখন বিজেপি শাসিত জোট সরকারের অধীনে রয়েছে। মিজোরামে একটি ও ত্রিপুরায় দুটি আসন রয়েছে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে।

এই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মুখিয়ে আছে চট্টগ্রাম। আমরা চাই অবাধ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার গঠিত হোক। যে সরকারই আসুক না কেন তারা যেন ভুলে না যায় বঙ্গোপসাগরের মতো চট্টগ্রামের গুরুত্ব অপরিসীম।

চট্টগ্রামের সাথে ভারতের কিছু অভিন্ন ইস্যু জড়িত রয়েছে যেমন ফেনী নদীর পানি বন্টন, ট্রানজিটের আওতায় আখাউড়া ও বিবির বাজার স্থল বন্দর ব্যবহার, সীমান্তে চোরা চালান বন্ধ, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার সহ আরো দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যু। ভারত বাংলাদেশের অবাধ বাণিজ্য চুক্তির আওতায় চট্টগ্রামের সাথে ভারতের আঞ্চলিক নিবিড়তা বাড়ানো ছাড়া অন্য উপায় নেই।

সামনের দিনে চট্টগ্রামই হবে মূল খেলার কেন্দ্র বিন্দু। চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে সেভেন সিস্টারের সাথে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য।বাংলাদেশের উচিত এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভারতের সাথে আমাদের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান করা। আগামী নির্বাচিত সরকারের সাথে আমাদের সম্পর্ক হোক ন্যায্য, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও প্রকৃত সমস্যা সমাধানে আগ্রহী।

বন্ধুত্বের বেড়াজালে অবন্ধুত্বসুলভ আচরণ আমরা প্রত্যাশা করিনা। সম্পর্কের মানোন্নয়নে উচিত এক রৈখিক চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে সমঝোতার পথে হাঁটা। এই দুই অঞ্চলের ভালো থাকা নির্ভর করছে অনেকটুকু পারস্পরিক বোঝাপড়ার উপর। গুরুত্ব বিচারে চট্টগ্রামের এই ভৌগোলিক অবস্থান আমাদের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করবে।
চীন বি.আর.আই প্রজেক্টের অধীনে ইউনান প্রদেশের কুনমিং থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করছে। ভারত ও এই গুরুত্ব অনুধাবন করে চট্টগ্রামের সাথে সম্পর্ক উন্নতি করতে চায়। বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম বিশ্ব রাজনীতির ময়দানে নির্ণায়ক হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

লেখক: গণমাধ্যম শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন