শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্প এগিয়ে, জয় নিশ্চিত করতে বাকি ২৩ ভোট

বুধবার, নভেম্বর ৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন
মার্কিন নির্বাচন

ইফতেখার ইসলাম: মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এখন প্রায় শেষের পথে। অধিকাংশ রাজ্যের ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে এবং ফলাফল আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১২টায় সর্বশেষ ফলাফলে দেখা গেছে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ২৪৭ ইলেক্টোরাল ভোট এবং ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২১০ ইলেক্টোরাল ভোট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ট্রাম্পের দরকার মাত্র ২৩টি ইলেক্টোরাল ভোট, যা তাকে হোয়াইট হাউজে আরো এক মেয়াদ নিশ্চিত করতে পারে। নির্বাচনে এবার ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। সবদিক দিয়ে ট্রাম্প জয়লাভ করতে যাচ্ছেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

২ সুইং স্টেটে ট্রাম্পের জয়

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবসময়ই দোদুল্যমান রাজ্য বা সুইং স্টেটের দিকে নজর থাকে। এবারের নির্বাচনেও সেই ধারাবাহিকতা বজায় আছে। সাতটি সুইং স্টেটের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প এগিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্প ইতিমধ্যে নর্থ ক্যারোলাইনা এবং জর্জিয়াতে জয় পেয়েছেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জর্জিয়ায় হেরেছিলেন ট্রাম্প, যা এবার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছেন তিনি। তবে পেনসিলভানিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ভোট এখনো গণনা হচ্ছে, যেখানে কমলা হ্যারিসের শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে।

পেনসিলভানিয়া রাজ্যে নারীদের ভোট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গেলেও নর্থ ক্যারোলাইনা এবং জর্জিয়ায় তার অবস্থান সুসংহত হয়েছে। পেনসিলভানিয়ায় যদি হ্যারিস জয়লাভ করতে না পারেন, তবে এটি ট্রাম্পের জয়কে নিশ্চিত করবে। এদিকে, বিবিসির খবর অনুযায়ী, মিশিগানে হ্যারিস সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন, যা ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ।

সংকীর্ণ হয়ে গেল হ্যারিসের জয়ের পথ

এডিসন রিসার্চের প্রদর্শিত ফলে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অন্যতম ব্যাটেলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনায় ডনাল্ড ট্রাম্প কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে দিয়েছেন।

এর মাধ্যমে অভাবনীয় রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন করার দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন ট্রাম্প।

তবে এখনও ছয়টি ব্যাটেলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যের ফলাফল অনিশ্চিত অবস্থায় আছে। এসব অঙ্গরাজ্যের ফল জানা গেলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কে হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট- ট্রাম্প না হ্যারিস।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ট্রাম্পের শক্তিশালী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইলেকটোরাল কলেজের প্রদর্শিত ফলাফলে ট্রাম্প অনেকটা এগিয়ে রয়েছেন। ইলেকটোরাল কলেজে আর মাত্র ৪০টি ভোট পেলেই ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউজের চাবি পেয়ে যাবেন।

আরেক ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য জর্জিয়ায়ও ট্রাম্প জয় পেতে যাচ্ছেন বলে ডিশিসন ডেস্ক এইচকিউর প্রদর্শিত ফল দেখাচ্ছে। যদি এমনটি হয় তাহলে হ্যারিসের জয়ের পথ অনেকটা সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। তখন তাকে রাষ্ট্র বেল্টের তিনটি অঙ্গরাজ্য মিশিগান, পেনসিলভেইনিয়া ও উইসকনসিনের ওপর নির্ভর করতে হবে।

কিন্তু এই তিনটি অঙ্গরাজ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে আছেন তিনি।

ভোট টেনেছে হ্যারিসের গণতন্ত্র রক্ষার বার্তা বনাম ট্রাম্পের অভিবাসন ও অর্থনীতি

এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্ডায় ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। কমলা হ্যারিস তার প্রচারণায় গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে জোর দিয়েছেন এবং ভোটারদের এই বিষয়ে সচেতন করেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, গণতন্ত্র রক্ষায় এটাই শেষ সুযোগ। অন্যদিকে, ডোনাল্ড ট্রাম্প মূলত অভিবাসন সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ট্রাম্প তার প্রচারণায় সীমান্ত সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ তেল উৎপাদন বৃদ্ধির কথা বলেছেন, যা মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সাহায্য করবে।

কমলা হ্যারিসের সমর্থকদের বড় অংশ গণতন্ত্রের রক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে দেখছেন, বিশেষ করে নারী ভোটারদের মধ্যে এই উদ্বেগ বেশি দেখা গেছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা অভিবাসন সংকট ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে অভিবাসন ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জোরালো সমর্থন রয়েছে।

সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের আসনের জন্যও ভোট গ্রহণ হয়েছে। সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, সিনেটে রিপাবলিকান পার্টি ৫১টি আসন জিতে নিয়েছে, যেখানে ডেমোক্র্যাটদের দখলে রয়েছে ৪২টি আসন। পশ্চিম ভার্জিনিয়া ও ওহায়োতে জয়ী হয়ে রিপাবলিকানরা সিনেটে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করেছে, যা তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে বড় সুবিধা দেবে।

হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসেও রিপাবলিকানরা সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্র্যাট আসন থেকে রিপাবলিকান প্রার্থী জিম জাস্টিস জয়লাভ করেছেন, আর ওহায়োতে বার্নি মোরেনো ডেমোক্র্যাট শেররড ব্রাউনকে পরাজিত করেছেন। অন্যদিকে, হাউসের আসনগুলোতে রিপাবলিকানরা ইতিমধ্যে তিনটি ডেমোক্র্যাট আসন দখল করেছে, যা তাদের শক্ত অবস্থান বজায় রাখার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নতুন পরিবর্তন ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

এবারের নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন দেখা গেছে, যেখানে তাদের একটি অংশ ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক ভোটারদের সমর্থনে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে, যা ট্রাম্পের জন্য ইতিবাচক। তবে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে, বিশেষত গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে।

একইসাথে, সিনেটের আসনে প্রথমবারের মতো দুইজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী জয়লাভ করেছেন। ডেলাওয়ার থেকে লিসা ব্লান্ট রোচেস্টার এবং মেরিল্যান্ড থেকে অ্যাঞ্জেলা আলসোব্রুকস সিনেটের আসনে জয়ী হয়েছেন, যা একটি ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এবারের নির্বাচনের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কাঠামোতে বিশাল প্রভাব ফেলবে এবং ট্রাম্প কিংবা হ্যারিসের নেতৃত্বে দেশটি কীভাবে এগিয়ে যাবে তা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন