শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন/পরাজয়ের প্রতিশোধ কি নিতে পারবেন ট্রাম্প?

শনিবার, মার্চ ৯, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র: জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০২০ সালের মত চলতি বছরের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াইয়ের মঞ্চে ফের মুখোমুখি হচ্ছেন এ দুই বর্ষিয়ান রাজনীতিক। পরপর দুইটি নির্বাচনে একই প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা; যা হবে একটি বিরল ঘটনা। নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীর ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দেশটির স্মরণকালের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

প্রশ্ন হল ২০২০ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ কি নিতে পারবেন ট্রাম্প? প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট অবশ্য এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় গেলে কী কী করবেন, সে পরিকল্পনাও সাজিয়ে ফেলেছেন।

রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হয়ে ২০১৬ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন ট্রাম্প। তবে, ২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেনের কাছে হেরে যান। কিন্তু, বাইডেনের কাছে পরাজয় স্বীকার করেননি তিনি। নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি ও জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। শুধু তাই নয়, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের ‘সত্যায়ন’র দিন যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায় তার দলের কর্মী-সমর্থকরা। যেটাকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে অভিহিত করে বাইডেন প্রশাসন।

নির্বাচনে হেরে শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউস ছাড়লেও কয়েক সপ্তাহ পরই ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে শুরু করেন আগাম প্রচার-প্রচারণাও।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে গেল বছরের শেষ দিকে শুরু হয় রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী মনোনয়ন লড়াই। যে লড়াইয়ে ট্রাম্প ছাড়াও যোগ দেন আরো প্রায় ২৪ প্রার্থী। তবে, একে একে তাদের সবাইকেই হারিয়ে প্রার্থিতা নিশ্চিত করেছেন ৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্প।

এবার পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেনকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিতে চান ট্রাম্প। এ ক্ষেত্রে, তাকে চরম আত্মবিশ্বাসী বলেই মনে হচ্ছে। বিশেষ করে গেল ৫ মার্চ ‘সুপার টুয়েসডে’র ব্যাপক জয়ের পর। সুপার টুয়েসডে দুই দিন পর ট্রাম্প বাইডেনকে বিতর্কের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্টে নির্বাচনী বিতর্কের এ চ্যালেঞ্জ জানান তিনি। বলেন, ‘যে কোন সময়ে, যে কোন জায়গায় আমি টিভিতে বিতর্কের আহ্বান জানাচ্ছি।’

আত্মবিশ্বাস এতটাই যে, ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে কী কী করবেন, তাও জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় গেলে তার পরিকল্পনাকে ‘এজেন্ডা ৪৭’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাম্পের প্রচারণা দলের ওয়েবসাইট, তার বিভিন্ন নির্বাচনী জনসভার বক্তব্যের বরাতে সেসব সংবাদ ফলাও করে প্রচার করছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, নারীর অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিটি ইস্যুতেই যিনি ভিন্নমত পোষণ করেন। এসবের মধ্যে রয়েছে সংবিধান বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের হাতে অসীম ক্ষমতা অর্পণ, ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনা, অভিবাসীদের গণহারে দেশ থেকে বের করে দেয়া। প্রয়োজনে এ কাজে সামরিক শক্তি ব্যবহার করা ও ভিসা দানের যোগ্যতা পরিবর্তনসহ পারিবারিক ভিসার ক্ষেত্রেও আইনে রদবদল আনা। তার এজেন্ডায় আরো রয়েছে অনথিভুক্ত অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সন্তানদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার নীতিও বাতিল করা, জ্বালানি সরবরাহ বাড়িয়ে মানুষের গৃহস্থালি ব্যয় কমানো, আগের মেয়াদের ন্যায় নিরাপত্তায় হুমকি হয়- এমন সব মুসলিম দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ ও ইসরাইলের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে না দেয়া।

এসব ছাড়াও ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ‘দ্বিতীয় বার নির্বাচিত হলে এক দিনের জন্য হলেও তিনি ‘একনায়ক’ হতে চান। ওয়াশিংটন পোস্টের সংবাদে বলা হয়, ‘পুনরায় প্রেসিডেন্ট হলে অবৈধ অভিবাসীদের থামাতে ও যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করবেন ট্রাম্প।

আইওয়ার নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে হোয়াইট হাউজে গেলে যারা ইসরাইলের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেবেন না ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করে দেবেন তিনি।

লিবিয়া, সোমালিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন ও নিরাপত্তায় হুমকি হয়- এমন যে কোন জায়গা থেকে অভিবাসী নেয়া নিষিদ্ধ করবেন। ট্রাম্পের আমলে কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। পরবর্তী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্পের সেই নীতি বাতিল করেন।

এ দিকে, দ্বিতীয় বার ট্রাম্প ক্ষমতায় এলে দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা হয়ে পড়বে রাজনৈতিক প্রতিশোধ গ্রহণের হাতিয়ার মনে করে সাবেক রক্ষণশীল বিচারপতি মাইকেল লুট্টিক ট্রাম্প ও তার অনুসারীদের ‘ক্লিয়ার অ্যান্ড প্রেজেন্ট ডেঞ্জার’ বা ‘গণতন্ত্রের জন্য ভয়ানক হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘ট্রাম্প অর্থনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র আর থাকবে না।’

এক সময় ট্রাম্পের এসব হুমকিকে খেলাচ্ছলে দেখত মার্কিনিরা। কিন্তু, এখন আর তাকে হেসে উড়িয়ে দেয়ার উপায় নেই। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল ও শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী মানুষদের প্রতিনিধি হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্যাপিটাল হিলে দাঙ্গা, ব্যবসায়িক জালিয়াতি, সরকারি গোপন নথি বেহাত করা, এমনকি ধর্ষণের মত মারাত্মক অপরাধে অভিযুক্ত হয়েছেন। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রের বহু মানুষ ট্রাম্পকে আরো এক বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান। অর্থ ও নারীসহ নানা ধরনের কেলেঙ্কারির অভিযোগ থাকা সত্বেও ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারানো বাইডেনের বিপক্ষে ট্রাম্প এখন শক্ত প্রতিপক্ষ। হোয়াইট হাউজে থাকাকালে ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি দুই বার অভিশংসিত হন। আবার হোয়াইট হাউস ত্যাগের পর তার বিরুদ্ধে ৯১টি ফৌজদারি অভিযোগ উঠেছে ও চারটি ফৌজদারি মামলার বিচার কাজ চলছে। এতসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দৃঢ়ভাবে ফিরে এসেছেন ট্রাম্প। তবে, গেল নির্বাচনে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে পারবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে।

সিএন/আলী

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন