যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ ৯/১১ হামলার ঘটনায় বিপদগ্রস্থ হয়ে মারা যাওয়া আরও ৩২ ফায়ার সার্ভিস সদস্যের (দমকলকর্মী) নাম ব্রুকলিনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার মেমোরিয়াল ওয়ালে যুক্ত করা হয়েছে। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে ব্রুকলিনস্থ নিউইয়র্ক ফায়ার ডিপার্টমেন্টের সদর দপ্তরের আউটডোরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের নাম যুক্ত করা হয়।
ফায়ার কমিশনার রবার্ট এস টাকার ও বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান জন এসপোসিটো বলেন, সন্ত্রাসী হামলার প্রায় ২৩ বছর পর স্মৃতি প্রাচীরের শিলালিপিতে যুক্ত হলো আরও ৩২ সদস্যদের নাম। এই নিয়ে ৯/১‘র ঘটনায় ৩৬০ ফায়ার সদস্য নিহত হলো।
স্মৃতির দেয়ালে যুক্ত হওয়া নতুন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা হলেন—লেফটেন্যান্ট জেমস কে. ডনোহু, ফায়ার ফাইটার থমাস ডব্লিউ অ্যান্ডারসন, জুনিয়র ফায়ারফাইটার কেভিন আর. কেলি, ফায়ারফাইটার রবার্ট এম. হিউজেস, ফায়ারফাইটার, এডওয়ার্ড আর. পেকোরোনি, ইলেকট্রিশিয়ান জন ফিওরেন্টিনো, ফায়ার ফাইটার রবার্ট ই. ওয়েলশ, ফায়ার ফাইটার জন টিসকা, জুনিয়র ফায়ার ফাইটার অ্যালবার্ট এন্ড্রু, ফিলোসা জে. এন্ডারেস, ইএমটি হিলডা এল. ভান্নাটা, ফায়ার ফাইটার রবার্ট ভি. ফুলকো, ফায়ার ফাইটার মার্ক আর. সেনো, ব্যাটালিয়নের প্রধান ক্রিস্টোফার ডি. স্কালোন;
চ্যাপ্লেন রেভ. মনসিগনর জন ই. ডেলেন্ডিক, ফায়ার ফাইটার মাইকেল ডব্লিউ. ডালি, ক্যাপ্টেন লুক এম. লিঞ্চ, লেফটেন্যান্ট মাইকেল জে. হিগিন্স, ফায়ার ফাইটার জে. জনস্টন, ইলেকট্রিশিয়ান জোসেফ বেরার্ডি, লেফটেন্যান্ট স্টিফেন এ. আসারো, ফায়ার ফাইটার উইলিয়াম আর. বার্থলোমিউ, ক্যাপ্টেন স্টিভেন বেরুবে, ফায়ার ফাইটার মাইকেল জে. সিওফি, ফায়ার ফাইটার রবার্ট এম. কেলি, ফায়ার ফাইটার ফ্রাঙ্ক এ. ক্যাপুটো, ইএমএস ক্যাপ্টেন রবার্ট আর ডিলিওন, জুনিয়র ব্যাটালিয়ন চিফ মাইকেল কেভিন এস. জে. শানলে, ফায়ার ফাইটার স্টিভেন জি. রাডিচ, ইএমটি ক্রিস্টোফার সুইয়েরকোস্কি এবং লেফটেন্যান্ট চার্লস জে. ম্যানিসকালকো।
যা ঘটেছিলো সেদিন
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে জড়িত ১৯ জঙ্গি চারটি উড়োজাহাজ ছিনতাই করে আত্মঘাতী হামলা করেন যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি জায়গায়। দুটি উড়োজাহাজ আঘাত হানে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বা টুইন টাওয়ারে। তৃতীয় উড়োজাহাজটি আক্রমণ করে পেন্টাগনে। আর চতুর্থ বিমানটি পেনসিলভানিয়ায়। ভয়াবহ এই হামলায় প্রাণ হারান প্রায় তিন হাজার মানুষ। ‘নাইন-ইলেভেন’ নামে পরিচিত এই সন্ত্রাসী হামলার পর থেকেই সন্ত্রাসবাদ দমনে আরও কঠোর হয় যুক্তরাষ্ট্র।
কত মানুষ মারা গিয়েছিলেন
নাইন-ইলেভেনের হামলায় ১৯ জন হামলাকারীসহ মোট ২ হাজার ৯৯৬ জন নিহত হন। এর মধ্যে শুধু ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে চালানো দুটি বিমান হামলায় মারা যান ২ হাজার ৭৬৩ জন। আটকে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে গিয়ে ৩৪৩ জন দমকলকর্মী এবং ৬০ জন পুলিশ সদস্যও নিহত হন। ৪টি হামলায় সম্মিলিতভাবে ৭৮টি দেশের মানুষ নিহত হন। দমকলকর্মীদের তালিকায় ২০২৪ সালে এসে নতুনকরে যুক্ত হলো আরও ৩২ সদস্যের নাম।
আল-কায়েদার সম্পৃক্ততা
ধারণা করা হয়, হামলাকারীদের আর্থিক মদদ দিয়েছিল ওসামা বিন লাদেনের সংগঠন আল-কায়েদা। হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ এক বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করে উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ নেন। বাকিরাও নাইন-ইলেভেনের আগে বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ১৯ হামলাকারী সহজেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাবেষ্টনী ফাঁকি দিয়ে ধারালো অস্ত্র নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠেন। উড্ডয়নের পরপরই যাত্রীদের জিম্মি করে পাইলটদের কাছ থেকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিলেন হামলাকারীরা।
অর্থনৈতিক প্রভাব
নাইন-ইলেভেনের হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। হামলার পর প্রথম দিনেই নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে বড় ধস নামে। এক মাসেই চাকরি হারান ১ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ। ধারণা করা হয়, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলায় আনুমানিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ক্ষতি হয়েছিল।
Views: 3
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন