ঢাকা: ইসকন একটি ধর্মীয় ভাব আন্দোলন সংগঠন হলেও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের আধিপত্যবাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। সেজন্য বাংলাদেশে ইসকনসহ সব উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুসলিম রাইটস ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনারে এমন দাবি জানানো হয়েছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পড়েন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আলী আক্কাস চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মুসলিম জনগোষ্ঠী ও মূল ধারার হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি ব্যাপক বিদ্বেষমূলক আচরণ করছে ইসকন। এই সংগঠনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে খুন, জমি দখল, মারামারি, অন্যের সম্পদের ক্ষতি সাধনসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে যুক্ত হওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে বিজেপি-আরএসএসের উগ্র হিন্দুত্ববাদী গেরুয়া পতাকার রাজনীতি এই ইসকনের হাত দিয়েই শুরু হয়েছে। ইসকনের দেশি ও বিদেশি নেতারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুমকি ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য রেখেছেন। ছাত্রলীগের মত ইসকনকেও সন্ত্রাস বিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করা সম্ভব।’
আলী আক্কাস চৌধুরী আরো বলেন, ‘চিন্ময় দাস নাকি ইসকন থেকে বহিষ্কৃত ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের কর্মসূচির সঙ্গে ইসকনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এই দাবির হাস্যকর দিকটি হল, ইসকনের নিউইয়র্ক সদর দপ্তরে গেল সোমবারও (২৫ নভেম্বর) চিন্ময়কে ইসকন নেতা বলেছে এবং গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত চিন্ময় চট্টগ্রামে ইসকনের অন্যতম প্রাচীন মন্দির পুগুরীক ধামের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।’
‘মূলত, এমন মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজিই ইসকন ও ভারতের কৌশল। চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ভিন্ন সংগঠনের নামে উগ্র ও সশস্ত্র তরুণদের জড়ো করে তরুণ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়েছে। এভাবে ইসকনের নেতারা সাধুর ছদ্মবেশে বাংলাদেশে ক্রমাগত উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি, বিভাজনমূলক প্রচারণা ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী চট্টগ্রাম বিভাগ, রংপুর বিভাগ ও সিলেট বিভাগে ইসকন বেশি সক্রিয়। বাংলাদেশের এই বিভাগগুলো নিয়ে বিশেষত চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগ নিয়ে ভারতের কোন কোন মহলের বিশেষ ভূ-রাজনৈতিক প্রকল্প ও বিচ্ছিন্নতাবাদের উসকানির কথা ব্যাপকভাবে শোনা যায়।’
তিনি বলেন, ‘চলতি মাসের শুরুর দিকে চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে সহিংসতায় জড়িত ইসকন সমর্থকদেরকে গ্রেফতারের সাথে সাথেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল।’
আলী আক্কাস দাবি করেন, ইসকনের বিভিন্ন কার্যকলাপ বাংলাদেশের মূলধারার বহু হিন্দুর মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। সাধুর ছদ্মবেশে ইসকনের গেরুয়া রাজনীতি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে রাখতে ভারতের ‘সফট পাওয়ার’ হিসেবে বাংলাদেশে ইসকন এসব উগ্রতা ছড়াচ্ছে। এমন ইঙ্গিত খুবই স্পষ্ট। তাই, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ইসকনসহ সব উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের উদ্যোগ নেওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। সিঙ্গাপুর, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ইসকনের কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করা হয়। বাংলাদেশেও অবিলম্বে একই ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
সেমিনারে মুসলিম রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী সুমন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ আরিফুর রহমান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী শেখ ওমর ও অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এসএম আমিমুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সিএন/আলী
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন