নিজস্ব প্রতিবেদক: সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একাধিক শিক্ষক।
সোমবার (১৫ জুলাই) সারাদেশের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তাপস কুমার ভৌমিক নামে এক শিক্ষক লিখেছেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।”
এদিকে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মো. শহিদুল হক লিখেছেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীর রক্ত ঝরলে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। অন্তর কাঁদে যখন কোনো শিক্ষার্থীর গায়ে হাত দেয় সন্ত্রাসীরা। বিশেষ করে মায়ের জাত নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করা দেখলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি।
তোমাদের পাশে দাঁড়াতে না পারলেও কেঁদে কেঁদে তোমাদের জন্য দোয়া করি। বাক স্বাধীনতার অভাবে কলমের কালি ঝরাতে না পারলেও অশ্রু ঝরছে বাঁধাহীন। জয় হোক মানবতার, জয় হোক মজলুম শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাঙ্গন হোক নিরাপদ। সন্ত্রাসী ও বহিরাগতমুক্ত হোক সকল বিশ্ববিদ্যালয়। ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক সকল শিক্ষার্থীর।”
বিভাগটির আরেক শিক্ষক রওশন সোমা লিখেছেন, “কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ দেশকে ভালবেসে যতগুলো গান লিখেছেন তার একটি আমাদের জাতীয় সংগীত। সেই তিনিই নাকি একদিন এদেশে লেখকদের অবমূল্যায়ন দেখে দুঃখ করে বলেছিলেন, পূর্ণজন্মই যদি হয় আবার, এদেশে যেন না হয়। এই একটি আক্ষেপ বাক্যের জন্য কী তাঁর আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি মিথ্যে হবে?
তেমনি আমার শিক্ষার্থীরা যদি সাময়িক আক্ষেপ থেকে একটি ভুল শ্লোগান দিয়েই থাকে, সেটাই কী তাদের পরিচয়? তাদের সেই ভুল শুধরে দেয়া আমাদের বড়দের কাজ, ক্যাডার বাহিনীর নয়। তাদের দেশদ্রোহীর ট্যাগ দিয়ে শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে রক্তাক্ত করার অধিকার কারও নেই।
আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি এই রাষ্ট্র যন্ত্রের কাছে, যে রাষ্ট্রযন্ত্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রাজপ্রসাদে বসে বসে দেখছে রাজপথে রক্তাক্ত সন্তানদের আতর্নাদ। একবার প্রাসাদ থেকে নেমে এই সন্তানদের কথা শুনুন।
তাদের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে আলোচনা করুন, আইনগত দিক বুঝিয়ে বলুন, দয়া করে ক্যাডার বাহিনীর হাতে সব ছেড়ে দেবেন না। আমরা এমন দেশ চাই যেখানে মৃত্যর সময়ও শান্তি নিয়ে বলতে পারবো আবার আসিব ফিরে আমি বাঙলার নদী, মাঠ ক্ষেত ভালবেসে। আমরা বলতে চাই না এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না।”
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও নিজেদের ব্যাথার কথা জানান। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন বিজ্ঞপ্তি বা বিবৃতিত পাওয়া যায়নি।
এদিকে সোমবারের সংঘর্ষের পর পুরো বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের কড়া সমালোচনা করে তাদের সাথে ‘ক্লাস’ করা বয়কট করছেন। এছাড়া অনেককে দেখা গেছে নিজেদের ছাত্রলীগ পরিচয় থেকে বের করে এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করতে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। তখন থেকে সারাদেশের ছাত্র সমাজ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে রজপথে নেমে আসেন। দফায় দফায় কর্মসূচি উত্তাল করে তুলে পুরা দেশ।
সর্বশেষ গতকাল থেকে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্বিবদ্যালয়ের কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বোরচিত হামলার ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে আল-জাজিরার, রয়টার্স এবং বিবিসির মতো বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতেও সংবাদ প্রচার হয়েছে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন