যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ২০ লাখ সোশ্যাল সিকিউরিটি সুবিধাভোগী নতুন নীতিমালার কারণে তাদের মাসিক ভাতা কাটা বা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ফেডারেল স্টুডেন্ট লোন খেলাপিদের আয় থেকে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কেটে নেওয়া এবং অতিরিক্ত প্রদানের অর্থ ফেরত নিতে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভাতা ‘ক্লব্যাক’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই দুই সিদ্ধান্তের প্রভাব প্রবীণ, প্রতিবন্ধী এবং অবসরপ্রাপ্ত লক্ষাধিক মানুষের জীবনে গুরুতর আর্থিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
জানা গেছে, গত ৮৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক শ্রমজীবীদের আর্থিক নিরাপত্তার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে আসছে সোশ্যাল সিকিউরিটি। গ্যালাপের জরিপ অনুযায়ী, ২০০২ সাল থেকে অধিকাংশ অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি দৈনন্দিন খরচের একটি বড় অংশ সোশ্যাল সিকিউরিটি থেকে পেয়ে থাকেন। বর্তমানে দেশটিতে ৬ কোটি ৯০ লাখেরও বেশি সুবিধাভোগীর মধ্যে ৫ কোটি ২৬ লাখ অবসরপ্রাপ্ত, যারা এই ভাতাকে তাদের জীবনের এক ভরসা হিসেবে গ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৪২.৭ মিলিয়ন আমেরিকানের ওপর ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের ফেডারেল শিক্ষাঋণ রয়েছে। এদের মধ্যে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৩.৫৯ মিলিয়ন ঋণগ্রহীতা রয়েছেন। গত জানুয়ারির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৪ লাখ ৫২ হাজার ঋণগ্রহীতা যারা ৬২ বা তার বেশি বয়সের এবং যারা সোশ্যাল সিকিউরিটি সুবিধা পাচ্ছেন। তারা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন, যা বড় ধরনের আর্থিক সংকটের সংকেত।
করোনাকালীন সময়ে ২০২০ সালের মার্চ থেকে শিক্ষা দপ্তর অনাদায়ী ঋণের অর্থ আদায় বন্ধ রেখেছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসন আগামী ২০২৫ সালের জুন থেকে এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে ঋণ খেলাপিদের থেকে মাসিক ভাতা থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কেটে নেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে। এই নিয়ম অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, প্রতিবন্ধী এবং জীবিত স্বজনের ভাতা প্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
তবে সুবিধাভোগীদের মাসে ন্যূনতম ৭৫০ ডলার হাতে থাকা নিশ্চিত করতে এক শর্ত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, মাসে ৮০০ ডলার পেলে সর্বোচ্চ ৫০ ডলার কাটা হবে, যা ১৫ শতাংশের চেয়ে কম। অন্যদিকে, অতিরিক্ত প্রদানের অর্থ ফেরত নেওয়ার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভাতা কেটে নেওয়ার নীতিমালা কার্যকর করা হচ্ছে। যা প্রায় ১৫ লাখ লোককে প্রভাবিত করতে পারে। সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মাঝে মাঝে ভুলবশত অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে থাকেন, যা ফেরত নেওয়া হয়। আগের প্রশাসনের সময় এই হার ১০০ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ পুরো ভাতা আটকে রাখা হতো যতক্ষণ না টাকা ফেরত দেওয়া হতো।
বর্তমান নীতিমালার কারণে, প্রায় ২ মিলিয়ন সুবিধাভোগীর মাসিক ভাতা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আগামী দশ বছরে সোশ্যাল সিকিউরিটি প্রশাসন থেকে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়া হলে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। তবে এতে সুবিধাভোগীদের দৈনন্দিন আর্থিক চাপ বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন