শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

স্কুলে টয়লেট ও সুপেয় পানি না থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ৮৫ লাখ শিশু

মঙ্গলবার, জুন ২৮, ২০২২

প্রিন্ট করুন

ডেস্ক রিপোর্ট: দেশে ৩০ লাখ শিশু বিদ্যালয়ে খাওয়ার সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পায় না। এসব সুবিধা পর্যাপ্ত না থাকায় সব মিলিয়ে বিদ্যালয়ের ৮৫ লাখ শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানা গেছে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) জরিপে।

সরকারি স্কুল ও মাদ্রাসার একাংশের কর্তৃপক্ষের দাবি অবশ্য ভিন্ন।

জরিপে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রতি পাঁচটি স্কুলের মধ্যে একটি স্কুলে নিরাপদ ও সুপেয় পানির ঘাটতি রয়েছে; যা মোট স্কুলের ১৯ শতাংশ। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ৮৫ লাখ শিশু। আর সাত শতাংশ স্কুলে পানি, স্যানিটেশন ও পরিচ্ছন্নতা সুবিধা একবারেই নেই। এর মানে হল- দেশের ৩০ লাখ স্কুলগামী শিশুর জন্য তাদের স্কুলে নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থা, ওয়াশরুম ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।’

জরিপে আরো বলা হয়েছে, ‘৪০ শতাংশেরও বেশি স্কুলে মৌলিক স্যানিটেশন সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে এক কোটি নয় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট নেই ৪৩ শতাংশ স্কুলে। সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়ার মত মৌলিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ঘাটতিও রয়েছে ৪৪ শতাংশ স্কুলে।

ইউএন এজেন্সিগুলো বলছে, ‘এ পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া কঠিন করে তোলে। শিশুদের শিক্ষা সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য করোনা ভাইরাস মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারের পথে অবশ্যই স্কুলগুলোকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উপযোগী হয়ে উঠতে হবে। এর জন্য সবার আগে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা করতে হবে।’

মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল সম্পর্কে জরিপে যা রয়েছে: মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, ‘সরকারের পরিকল্পনা আছে, শতভাগ স্কুলে সুপেয় পানি, সেনিটেশন ব্যবস্থা ও ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশ রুম নিশ্চিত করা। নতুন যে স্কুল ভবন হবে, তার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশ হল- ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশ রুম রাখতেই হবে। আর পুরনো যে স্কুল ভবন আছে, সেখানেও আলাদা ওয়াশ রুম ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা এখনো এটা করতে পারি নি। কিছু পুরনো ভবন আছে, সেখানে এখনো করা সম্ভব হয়নি।’

তিনি জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমাদের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনও আছে। আর তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা স্কুলগুলোর সাথে এনজিওদেরও যুক্ত করেছি। করোনা মহামারীর সময় আমরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, হাত ধোয়াসহ আরো যেসব বিষয় বাধ্যতামূলক করেছি তা অব্যাহত আছে।

অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক একিউএম শফিউল আজম দাবি করেন, ‘এখন শিক্ষার্থীদের পুষ্টির দিকেও নজর দেয়া হয়েছে। ছাত্রীদের ফলিক অ্যাসিড দেয়া হচ্ছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথভাবে কাজ করার জন্য আলোচনা শুরু করেছি। আর বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা স্বাস্থ্য সচতেনতামূলক কর্মসূচিগুলো জোরদার করেছি।’

দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজে ইউনিসেফের সহায়তায় সুনির্দিষ্ট কিছু স্কুল ও মাদ্রাসায় জেনারেশন ব্রেক থ্রু  প্রকল্প চলছে। এ প্রকল্পের অধীনে তারা বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা পাচ্ছে। মেয়েদের জন্য স্কুলগুলোতে আলাদা স্বাস্থ্য কর্ণার চালুর একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। সেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিনসহ আরো প্রয়োজনীয় জিনিস থাকবে।

তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সুপেয় পানি, আলাদা ওয়াশ রুম ও স্যানিটেশনের কোন সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক দিলীপ কুমার বণিক।

তিনি বলেন, ‘ইউনিসেফের প্রতিবেদন তো ইউনিসেফের। এটা তো বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবেদন না। আমাদের ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাথে আমাদের এমওইউ করা আছে। তাদের জন্য আমাদের সারা বছরই বরাদ্দ আছে। দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা ওয়াশ রুম করা। এটা সব স্কুলেই আছে। তাই এ প্রতিদেনটা আমাদের জন্য প্রযোজ্য না। অন্যদের জন্য হতে পারে। সারা দেশে কিছু বেসরকারি স্কুল আছে, কিন্ডার গার্টেন আছে, কওমি মাদ্রাসা আছে। তাদের ক্ষেত্রে এ রকম হতে পারে।’

মাদ্রাসার অবস্থা: মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক কেএম রুহুল আমিন জানান, দেশের এক হাজার ৮০০ মাদ্রাসায় নতুন ভবন হচ্ছে। এসব ভবনে আলাদা ওয়াশ রুম, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা থাকতেই হবে। সেইভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

তার দাবি, ইউনিসেফ যে হিসাব দিয়েছে, সেটা সঠিক বলে মনে হয় না। আলীয়া মাদ্রাসা ও এমপিওভুক্ত মাদ্রাসাগুলোতে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভাল। তবে এর বাইরেও কিছু মাদ্রাসা আছে, যা আমাদের অধীনে নয়। সেগুলোর অবস্থা খারাপ হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মাদ্রাসাগুলোতে জেনারেশন ব্রেক থ্রূসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আরো কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতার কার্যক্রম চালু আছে।’

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন