মাওলানা নোমান বিল্লাহ: নয়া হিজরি সাল এলে অনেকেই একে অপরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন। ‘কুল্লু আম ওয়া আনতুম বি খাইর’ (পুরো বছর আপনারা কল্যাণে থাকুন) এমন বাক্যে অন্যের জন্য শুভ কামনা ও দোয়া করে থাকেন। এ ব্যাপারটা ইসলামে অবৈধ বা মাকরুহ নয়, একে ফুকাহে কেরাম মুবাহ আমল বলে গণ্য করেছেন। মুবাহ বলা হয় হালাল বা জায়েয, যে আমলের সঙ্গে সত্তাগতভাবে কোন আদেশ বা নিষেধ সম্পৃক্ত নয়।
কেউ যদি শুভেচ্ছা জানায়, তাহলে তার জন্য দোয়া করা উত্তম। দোয়ায় বলা যেতে পারে, আল্লাহ আমাদের গোটা বছর নেক আমল করার তাওফিক দান করুন।
সাধারণভাবে কেউ শুভেচ্ছা জানালে এটা স্বাভাবিক। কেউ যদি ইসলামি রীতিনীতির অংশ মনে করে শুভেচ্ছা জানায়, তাহলে সেক্ষেত্রে এটা বর্জন করতে হবে। কেননা, তখন এটি বিদআত বলে গণ্য হবে। যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কেননা রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দিনের (ধর্মের) মাঝে নয়া বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নয়া বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা।’ (আবু দাউদ ৪৬০৭)
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল- কেউ যদি অন্য কোন ধর্মের রীতিনীতির জায়গা থেকে নয়া বছর উদ্যাপন করে, তাহলেও তা বর্জন করতে হবে। কেননা রসুলুল্লাহ (সা.) অন্য ধর্মের সঙ্গে মিলে এমন কাজ থেকে বিরোধিতা থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায় বা জাতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত।’ (আবু দাউদ ৩৫১৪)
ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘কোন মুসলিমের সুযোগ নেই কাফেরদের সামঞ্জস্য গ্রহণ করা, না তাদের ধর্মীয় উৎসবে, না মৌসুমি উৎসবে, না তাদের কোন ইবাদতে।’
নবীজি (সা.) যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন মদিনাবাসীর দুইটি দিন ছিল, যেখানে তারা খেলাধুলা করত। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ দুইটি দিন কী? তারা বলল, আমরা পূর্বে এ দুইটি দিনে খেলাধুলা করতাম। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার বদলে উত্তম দুইটি দিন দিয়েছেন, ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর।’ (আবু দাউদ ১১৩৪)
এ হাদিস প্রমাণ করে অন্য ধর্মের লোকদের উৎসব পালন করা হারাম। কারণ, নবীজি (সা.) আনসারদের জাহিলি দুই ঈদ চালু রাখেননি। রীতি মোতাবেক তাতে খেলাধুলার অনুমতি দেননি।’ (ফয়জুল কাদির ৪/৫১১)
ঈদসহ বিভিন্ন উপলক্ষ্যে মুসলমানের জন্য সাধারণ দোয়া করা সমস্যার কিছু নয়; তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই দোয়ার ভাষ্যকে বিশেষ কোন ইবাদত হিসেবে বিশ্বাস করা যাবে না। সাধারণত এ ধরনের শুভেচ্ছার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও অন্যের চেহারায় আনন্দ ও খুশি ফুটিয়ে তোলা। তবে এর বদলে এ সময়ে দোয়ার প্রতি মনোযোগ দেয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ইমাম আবুল কাসেম বাগাভি (রহ.) ‘মুজামুস সাহাবা’ কিতাবে নয়া মাস ও নয়া বছরের শুরুতে একটি দোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। হজরত আবদুল্লাহ বিন হিশাম (রা.) বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম নয়া মাস বা নয়া বছর শুরুতে এ দোয়াটি তেমন গুরুত্ব দিয়ে শিখতেন, যেভাবে কোরআনুল কারিম শিখতেন। দোয়াটি হল- اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ، وَالْإِيمَانِ، وَالسَّلَامَةِ، وَالْإِسْلَامِ، وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ، وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামাতি, ওয়াল ইসলামি, ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রহমানি, ওয়া জাওয়ারিম মিনাশ শায়ত-নি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের ঈমান ও ইসলামকে নিরাপদ করুন। আমাদের সুরক্ষা দিন। দয়াময় রহমানের কল্যাণ দান করুন। শয়তানের কুমন্ত্রণার মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করুন। (মুজামুস সাহাবাহ ৩/৫৪৩)
সিএন/আলী
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন