শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শিরোনাম

৪ জুলাই: যে দিন গৃহীত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র

সোমবার, জুলাই ৪, ২০২২

প্রিন্ট করুন

মোহাম্মমদ আলী: সোমবার ৪ জুলাই আমেরিকার ২৪৬তম স্বাধীনতা দিবস। ওই দিনটিতে আসলে আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়েছিল। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই পেনসিলভেনিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় স্বীকার করে নেয়া হয়। এর মাধ্যমে গ্রেট ব্রিটেনের সাথে যুদ্ধরত ১৩টি মার্কিন উপনিবেশ নিজেদের ব্রিটিশ শাসনের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে ঘোষণা করে ও যুক্তরাষ্ট্র নামে নুতন রাষ্ট্র গঠন করে।

প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমেরিকার এ জন্মদিনটি উদযাপন করে মার্কিনিরা। আয়োজন করা হয় বিশাল জনসমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও কনসার্ট। চোখ ধাঁধানো আতশবাজিও থাকে অন্যতম আকর্ষণ। স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। এটি আমেরিকার স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক। কিন্তু এবার করোনাভাইরাস, বন্দুক হামলা, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, চীনের সাথে বরফ ‍যুদ্ধ- ইত্যাদি কারণে স্বাধীনতা দিবসের উদযাপন কেমন হবে, তা দেখার বিষয়।

স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ২৫ হাজার আমেরিকান ও ২৭ হাজার ব্রিটিশ ও জার্মান সেনা। ২৪৬ বছর আগে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই ইংল্যান্ডের শাসন থেকে পৃথক হওয়ার জন্য ভোট দেন আমেরিকার দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস। এর দুই দিন পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। কিন্তু পৃথক হতে ব্রিটেনের সাথে চূড়ান্ত সই ২ আগস্ট হলেও প্রতি বছর ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে আমেরিকা।

স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৩টি উপনিবেশ এক সাথে ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। ভার্জিনিয়া উপনিবেশের জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন প্রধান সেনাপতি। এরই মধ্যে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ।

আর সেই যুদ্ধে উপনিবেশগুলোর বিজয়ের প্রাক্কালে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর পাঁচজনের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করে। এ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস ও বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। তবে টমাস জেফারসন ছিলেন মূল লেখক। রচিত ঘোষণাপত্রটি নিয়ে কংগ্রেসে বিতর্ক শেষে ঘোষণাপত্রটি চূড়ান্ত করা হয়।

ঘোষণাপত্রটি কংগ্রেসের অনুমোদন পায় ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই। ব্রিটিশ অরাজকতা থেকে মুক্ত হতে ‘প্রতিটি মানুষই সমান ও একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি’ এ বাণীকে সামনে রেখে টমাস জেফারসন লিখলেন স্বাধীনতার অমর বাণী।

আমেরিকার স্বাধীনতাযুদ্ধ মূলত শুরু হয় ১৭৭৫ সালে। আর তা চলে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত। যুদ্ধের শুরু হয় ব্রিটিশ বাহিনী ও উপনিবেশের স্থানীয় সশস্ত্র বাসিন্দাদের মধ্যে একটি ছোট খণ্ডযুদ্ধের মাধ্যমে। খণ্ডযুদ্ধটি সংঘটিত হয় ১৭৭৫ সালের ১৯ এপ্রিল। এ যুদ্ধের ফলে অন্যান্য স্থানেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ২৫০ জনের বেশি ব্রিটিশ সেনা হতাহত হয়। নিহত হয় ৯৩ জন বিপ্লবী আমেরিকান। বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশরা সেনা জমায়েত করে। মার্কিন বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে তারা বিজয় অর্জন করে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বিভিন্ন দেশকে সাহস যোগায়। আরো অনেক এমন ভুক্তভোগী দেশগুলোকে স্বাধীনতায় উৎসাহী করে তোলে। পরে ক্যারিবিয়ান স্প্যানিশ আমেরিকা, বলক্যান, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য ইউরোপসহ অন্যান্য দেশে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত অনুসৃত হয়।

৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ২৪৬তম বার্ষিকী উদযাপনের উদ্দীপনা চারদিকে। নানা কর্মসূচি। বিশেষ করে হাডসন রিভারে মেসির সৌজন্যে আতশবাজি উৎসব ও ম্যানহাটনে বর্ণাঢ্য প্যারেড সবাই উপভোগ করবেন। উপভোগ করবেন সরকারি ছুটি ও বড় বড় স্টোরে কেনাকাটার সুযোগ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উদযানপন পরিপূর্ণভাবে সার্থক হবে তখনই, যখন যুক্তরাষ্ট্রর তার মূল চেতনায় ফিরে আসবে। অভিবাসীদের নির্ভয় স্বপ্নের দেশে পরিণত হবে। নইলে আমেরিকার শক্তি, সাধ্য, চাকচিক্য সব থাকবে, আমেরিকা মানবিক ও সাংবিধানিক দিক থেকে দরিদ্রই থেকে যাবে।

আমরা আশা করব, আমেরিকা তার অতীত সেই অবস্থানে ফিরে এসে নতুন করে অভিবাসীদের চোখে সোনালি স্বপ্ন ছড়িয়ে দিক। পৃথিবীর সব আশ্রয়হীন ও স্বপ্নহীন মানুষের প্রত্যাশা ও স্বপ্নের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠুক।

২৪৬তম স্বাধীনতাবার্ষিকী উদযাপনের শুভ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিক, বৈধ-অবৈধ সব অভিবাসী এবং চলমান নিউইয়র্ক.কমের সব পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, পৃষ্ঠপোষক ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন