অকালে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে পারে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ত্বকে কিছু স্বাভাবিক পরিবর্তন আসে। তবে অনেক সময় দেখা যায়, বয়স কম হলেও ত্বকে বলিরেখা, শুষ্কভাব, মলিনতা এবং ঢিলে ভাব তৈরি হয়ে যায়। এটি শুধু সৌন্দর্যের ক্ষতি করে না, বরং আপনাকে মানসিকভাবেও অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। দামি প্রসাধনী ব্যবহার করেও অনেকেই এই সমস্যার সমাধান পান না। কারণ, ত্বকের অকালবার্ধক্যের জন্য বেশ কিছু ভুল অভ্যাস দায়ী, যেগুলো হয়তো আমরা খেয়ালই করি না। যদি এই অভ্যাসগুলো সময়মতো না বদলাই, তবে ত্বক স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক দ্রুত বুড়িয়ে যেতে পারে।
ত্বকে বয়সের ছাপ
বয়স কম হলেও অনেক সময় ত্বকে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বলিরেখা, শুষ্কভাব, মলিনতা- সব মিলিয়ে অকালবার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দেয় ত্বকে। এছাড়া দামি প্রসাধনী ব্যবহার করেও অনেক সময় এই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে না। এর পেছনে রয়েছে কিছু ভুল অভ্যাস, যেগুলির দিকে ঠিকমতো খেয়াল না রাখলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যেতে পারে।
ত্বকে বয়সের ছাপ এড়াতে সানস্ক্রিন

অনেকেই ভাবেন, শুধু রোদে পুড়ে যাওয়ার ভয় থাকলেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। কিন্তু আসল কথা হলো, সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি (UV) রশ্মি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে কোলাজেন নষ্ট করে দেয়, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমিয়ে দেয়। ফলে বলিরেখা ও কালো দাগ দ্রুত দেখা দেয়। নিয়মিত বাইরে বের হওয়ার আগে SPF 30 বা তার বেশি মানের সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে এই ক্ষতি অনেকটাই রোধ করা যায়। শুধু গরমে নয়, শীতকালেও বা মেঘলা দিনেও সানস্ক্রিন লাগানো উচিত।
এক্সফোলিয়েশন না করা
আমাদের ত্বকে নিয়মিত মৃত কোষ জমে থাকে, যা ত্বককে নিস্তেজ ও প্রাণহীন করে তোলে। এই মৃত কোষ সরাতে সপ্তাহে অন্তত ১-২ বার এক্সফোলিয়েট করা প্রয়োজন। স্ক্রাব বা কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার করলে ত্বক নতুন কোষ তৈরির সুযোগ পায়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং ত্বক সতেজ থাকে। তবে খুব বেশি এক্সফোলিয়েশন করলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে, তাই পরিমিত মাত্রা বজায় রাখা জরুরি।
ত্বকে বয়সের ছাপ এড়াতে ময়েশ্চারাইজিং

ত্বককে মসৃণ, কোমল ও আর্দ্র রাখতে ময়েশ্চারাইজার অপরিহার্য। শুষ্ক ত্বকে বলিরেখা সহজেই দেখা দেয় এবং ত্বক রুক্ষ হয়ে পড়ে। বয়স যাই হোক না কেন, প্রতিদিন সকালে ও রাতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। শীতকালে বা এসি রুমে বেশি সময় থাকলে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে হাইড্রেটিং ক্রিম বা অয়েল ব্যবহার উপকারী।
মেকআপ ঠিকমতো না তোলা
অনেক সময় ক্লান্তি বা অলসতার কারণে আমরা মেকআপ তুলে না ফেলেই ঘুমিয়ে পড়ি। এর ফলে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়, ব্রণ, মেছতা ও বলিরেখার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মেকআপ ভালোভাবে তুলে ফেলতে হবে। শুধু পানি দিয়ে ধুলে হবে না, উপযুক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে।
চোখের ত্বকের অবহেলা
চোখের আশপাশের ত্বক শরীরের সবচেয়ে পাতলা ও সংবেদনশীল অংশ। এই জায়গায় কোলাজেনের পরিমাণও কম, তাই যত্ন না নিলে এখানে সহজেই কালি, ফোলা ভাব এবং সূক্ষ্ম রেখা তৈরি হয়। প্রতিদিন আই ক্রিম ব্যবহার করা, পর্যাপ্ত ঘুম ও হাইড্রেশন বজায় রাখা চোখের চারপাশের ত্বককে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকে বয়সের ছাপ এড়াতে অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার

দামি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী মানেই নিরাপদ নয়। অনেক কসমেটিক প্রোডাক্টে এমন কেমিক্যাল থাকে যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে দেয়, অ্যালার্জি বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের বয়স বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রসাধনী কেনার আগে অবশ্যই উপাদান তালিকা দেখে নিতে হবে।
ত্বকে বয়সের ছাপ এড়াতে ঘাড়ের ত্বকের অযত্ন
অনেকেই মুখের যত্ন নিলেও ঘাড়ের কথা ভুলে যান। অথচ ঘাড়ের ত্বকও খুব সংবেদনশীল এবং এখানেও বয়সের ছাপ সহজেই ধরা পড়ে। তাই ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, সানস্ক্রিন—সবকিছুই মুখের সাথে সাথে ঘাড়েও ব্যবহার করা উচিত।
ত্বকে বয়সের ছাপ পেলে ঘুমের অভাব
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও ত্বক উভয়ই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঘুমের সময় শরীর নতুন কোষ তৈরি করে এবং ত্বক নিজেকে রিপেয়ার করে। ঘুম কম হলে এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ত্বক মলিন হয়ে যায়, চোখের নিচে কালি পড়ে এবং বয়সের ছাপ স্পষ্ট হয়। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।
শেষ কথা
ত্বকের বয়স বৃদ্ধি ঠেকাতে শুধু দামি প্রসাধনী ব্যবহার করলেই হবে না। বরং জীবনযাত্রায় কিছু সচেতন পরিবর্তন আনতে হবে—যেমন সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ঘুম, ত্বক পরিষ্কার রাখা এবং ক্ষতিকর অভ্যাস বর্জন করা। মনে রাখবেন, সুস্থ ত্বকের রহস্য লুকিয়ে আছে প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসে।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন