রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

শিরোনাম

অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ দখল করলে যে গুনাহ

শুক্রবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ডেস্ক নিউজ: প্রবাদ আছে, জোর যার মুলুক তার। এ কথাটি যেন আজকাল মহাসত্য হয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। ঘরে বাইরে সর্বত্র এমন অন্যায় অনাচার দুর্নীতি প্রকাশ পাচ্ছে। যার ক্ষমতা আছে। সেই যেন ক্ষমতার অপব্যবহার করতে মরিয়া হয়ে উঠছে। এ জন্যই কুরআনে আল্লাহ আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘সম্ভবত ক্ষমতা লাভ করলে, তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন-সম্পর্ক ছিন্ন করবে।’ (সুরা মুহাম্মদ: ২২)

অর্থাৎ, তেমরা ক্ষমতা লাভ করলে, ক্ষমতার অপব্যবহার করবে। আবার সেই মূর্খতার যুগে ফিরে যাবে। পরস্পর খুনোখুনি ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবে। আয়াতে সাধারণভাবে পৃথিবীতে ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি এবং বিশেষভাবে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ হলো, মৌখিকভাবে, কর্মের মাধ্যমে এবং অর্থ সম্পদ ব্যয় করার মাধ্যমে আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করো। (তাফসিরে ইবনে কাসির)

ইসলাম আমাদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে বলে। যা আরও একটি বারতা পৌঁছে দেয় আমাদের কাছে, তা হলো- পারস্পরিক সুসম্পর্ক, সৌহার্দ ও সম্প্রতি বজায় রাখা। পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকা। ইসলাম প্রয়োজন হলে অর্থ কড়ি সম্পদ ব্যয় করে আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার শিক্ষা দেয়।

সেখানে আজকাল আমাদের অবস্থা হচ্ছে আমরা একটু সুযোগ পেলেই আমাদের নিকট আত্মীয় পড়শী প্রতিবেশীর হক- অধিকার নষ্ট করি। তার ঘরের জিনিস না বলে নিয়ে নিই। আমার ফ্রিজে ছোট শিশুর জন্য দুধ রেখেছে আমার প্রতিবেশী। সেটা খেয়ে সাবাড় করি। অনুমতি ছাড়া তার গাছের ফল খাই। তার জায়গা জমি দখল করি। খেতের আল কেটে নিয়ে যাই ইত্যাদি।

ঠিক এভাবেই আমরা আমাদের প্রতিবেশী আত্মীয়দের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার পরিবর্তে তাদের ক্ষতি করি। তাদের হক নষ্ট করি। আমরা নিজেরাই আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করি।

এমনিভাবে অন্যায় ও জোর করে আমরা অপরের অর্থ সম্পদ ও ফল ফসল জায়গা জমি দখল করি। ভোগ করি। নষ্ট করি। যা পরিস্কার অন্যায় ও হারাম-নিষিদ্ধ কাজ। এমনকি হিংসা বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসাবশত মারামারি ও খুনোখুনির মতো জঘন্য কাজগুলো আমরাই করি। এভাবেই সমাজে ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এমনকি কখনো দেশ ও জনগণের অধিকার নষ্ট হয়।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের  অর্থ-সম্পদ গ্রাস করো না। তবে পরস্পর সম্মতিক্রমে তোমরা যে ব্যবসা করো তা বৈধ। আর তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা নিসা: ২৯)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ মাআরেফুল কুরআনে লেখা হয়েছে, যেভাবে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা হারাম। নরহত্যা তদপেক্ষা কঠিন হারাম। অন্যকে হত্যা করার বিষয়টিকে ‘নিজেরা নিজেদেরকে হত্যা’ শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর দ্বারা ইশারা করা হয়েছে যে, কাউকে হত্যা করা পরিশেষে তার দ্বারা নিজেকেই হত্যা করা হয়।

কেননা তার বদলে হত্যাকারী নিজেই নিহত হতে পারে। যদি দুনিয়াতে তাকে হত্যা নাও করা হয়, তবে আখিরাতে তার জন্য যে শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তা মৃত্যু অপেক্ষাও কঠিনতর। অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার সাথে এ বাক্যের উল্লেখ দ্বারা এ বিষয়ের প্রতি ইশারা যে, সমাজে অন্যায়ভাবে সম্পত্তি গ্রাস করার বিষয়টি যখন ব্যাপক আকার ধারণ করে, তখন তার পরিণাম দাঁড়ায় সামাজিক আত্মহত্যা।

সাহাবি হজরত সাঈদ ইবনে যায়েদ (রা.) বলেন, ‘রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অত্যাচার করে অর্ধহাত ভূমি দখল করেছে, নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন অনুরূপ সাতটি ভূমি তার কাঁধে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

এ হাদিস থেকে বুঝে আসে, অন্যায়ভাবে জায়গা জমি দখল করার পরিণতি কী হবে? এমনকি হাদিসে আমানতের খেয়ানত করাকে মুনাফেকি-কপটতা বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। আমাদেরকে মনে রাখা দরকার, কারও কোনো অর্থ সম্পদ কিংবা গচ্ছিত কোনো বস্তু হুবহু তার প্রাপক বা বাহককে পৌঁছে দেওয়া হলো আমানত। একইভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করাও আমানত। যা সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যার খেয়ানত কাম্য নয় কখনো।

সিএন/আলী

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন