শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

শিরোনাম

অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু

সোমবার, জানুয়ারী ২০, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে দখলদার ইসরায়েলের দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে। আজ রোববার থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি চলবে ৪২ দিন।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টা থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হামাস যে তিন জিম্মিকে মুক্তি দেবে তাদের নামের তালিকা না দেওয়ায় গাজায় হামলা অব্যাহত রাখে দখলদার সেনারা। এসময় বর্বর হামলা চালিয়ে ১০ জনকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েল। পরে হামাস ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে তিন নারী জিম্মির নাম প্রকাশ করলে কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি।

যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোও জানিয়েছে, হামাস তাদের কাছে তিন জিম্মির নাম হস্তান্তর করেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর যুদ্ধবিরতি কার্যকরের বিষয়টি ঘোষণা দিয়েছে।

দলে দলে বাড়ি ফিরছেন গাজাবাসী

তার এমন ঘোষণার পরই বাস্ত্যচ্যুত সাধারণ ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িতে ফেরা শুরু করেন। যদিও অনেকের বাড়ির কোনো অস্তিত্ব নেই। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বিধ্বস্ত বাড়ির ওপরই তাঁবু তৈরি করে সেখানে থাকবেন। তারা চান নিজেদের চিরচেনা এলাকায় ফিরে যেতে। তারা চান আবারও প্রতিবেশীদের সঙ্গে, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আগের মতো সময় কাটাতে।

গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের বহর

দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের অবসানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর প্রথম দফায় গাজায় প্রবেশ করেছে ৫৫২টি খাদ্য ও জরুরি ত্রাণবাহী ট্রাক। গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা তুরস্কের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে নিশ্চিত করেছেন এ তথ্য। ইসরায়েল এবং হামাসের মাঝে রোববার সকালের দিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরপরই ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো গাজায় পৌঁছায়।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয়-বিষয়ক কার্যালয় (ওসিএইচএ) বলছে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর রোববার মানবিক সহায়তা বহনকারী ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করেছে।

জাতিসংঘের দাতব্য কর্মকর্তা ও ফিলিস্তিনে নিযুক্ত ওসিএইচএর অন্তর্বর্তী প্রধান জোনাথন হুইটাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কয়েক মিনিট পরই ত্রাণবাহী প্রথম ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ট্রাকগুলোতে গাজার বাসিন্দাদের জন্য জ্বালানি, ময়দা, চিকিৎসা সামগ্রী, শাকসবজি, মাংস ও অন্যান্য জরুরি ত্রাণ পাঠিয়েছে। এই ট্রাকগুলোর মধ্যে ২৪২টিকে উত্তর গাজায় পাঠানো হয়েছে।”

বন্দি বিনিময়

যুদ্ধবিরতির চুক্তির অংশ হিসেবে প্রথাম ধাপে তিন নারী জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। রোববার (১৯ জানুয়ারি) গাজার আল-সায়রা স্কয়ারে তাদের রেডক্রসের হাতে তুলে দেন হামাসের যোদ্ধারা। এরপর জিম্মিদের গাজায় অবস্থানরত ইসরায়েলি সেনাদের কাছে নিয়ে যায় রেডক্রস। সেখান থেকে তাদের ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এ ধাপে মোট ৩৩ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। অপরদিকে ইসরায়েল প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনিকে তাদের কারাগার থেকে ছেড়ে দেবে। তিন জিম্মির বিনিময়ে ইসরাইল ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে। ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত সকলেই নারী ও শিশু। হামাস বলছে, গাজা থেকে প্রতিজন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগার থেকে ৩০ জন করে ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে।

হামাসের হাতে যেসব ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন তাদের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর বিভিন্ন অবৈধ বসতিতে হামলা চালিয়ে আটক করে হামাস। এরমধ্যে ওই বছরের নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ৭ দিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়। ওই সময় ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। এরপর চুক্তিটি ভেস্তে যাওয়ার পর সামরিক শক্তি ব্যবহার করে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে দখলদার ইসরায়েলি সেনারা। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা জিম্মিদের মরদেহ আনতে পেরেছে।

যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে মুক্তি পেলেন যে তিন ইসরায়েলি জিম্মি

• রোমি গোনেন
মুক্তি পাওয়া ২৪ বছর বয়সী রোমি গোনেনকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নোভা সংগীত উৎসব থেকে ধরে নিয়ে যান হামাসের যোদ্ধারা। নৃত্যশিল্পী গোনেন সেদিন সংগীত উৎসবে বন্ধুদের সঙ্গে অংশ নিয়েছিলেন। হামাস যোদ্ধাদের হামলার সময় সংগীত উৎসবের স্থানে কয়েক ঘণ্টা ধরে পালিয়ে ছিলেন। পরে হামাসের যোদ্ধাদের বন্দুকের গুলি তার হাতে বিদ্ধ হয়।

সংগীত উৎসবে হামাসের অতর্কিত হামলার সময় মোবাইল ফোনে পরিবারের সদস্যদের তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি আজ মারা যাচ্ছি।’’ পরিবারের সদস্যরা মোবাইল ফোনে হামলাকারী হামাস যোদ্ধাদের আরবিতে বলতে শুনেছিলেন, ‘‘তিনি বেঁচে আছেন, তাকে নিয়ে চলুন।’’ এরপর তার ফোনটি গাজা উপত্যকার একটি স্থানে পাওয়া যায়।

• ডোরোন স্টেইনব্রেচার
৩১ বছর বয়সী ইসরায়েলি এই নারী পেশায় ভেটেরিনারি নার্স। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের কিব্বুৎজের কাফার আজা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ডোরোনকে ধরে নিয়ে যান হামাসের যোদ্ধারা। দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হওয়া এলাকাগুলোর একটি এই কিব্বুৎজ।

হামাসের হামলা শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর ডোরোন তার বাবা-মাকে ফোন করে জানান, তিনি ভয় পাচ্ছেন এবং বন্দুকধারীরা তার ভবনে ঢুকেছেন। এরপর বন্ধুদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেছিলেন, ‘‘তারা (হামাস যোদ্ধার) পৌঁছেছেন, তারা আমাকে ধরেছেন।’’

• এমিলি ডামারি
২৮ বছর বয়সী এমিলি ডামারি ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। একই দিনে কিব্বুৎজের কাফার আজা এলাকার বাড়ি থেকে তাকেও ধরে নিয়ে যায় হামাস। লন্ডনে বেড়ে উঠেছেন এবং টটেনহ্যাম হটস্পার ফুটবল দলের ভক্ত তিনি। তার মায়ের মতে, ডামারির হাতে গুলি ও পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। পরে চোখ বেঁধে তার গাড়ির পেছনে করেই গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া ভয়াবহ সংঘাতের ফলে অন্তত ৪৬,৮৭৬ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১১০,৬৪২ জন আহত হয়েছেন। এ যুদ্ধের ফলে গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে, যেখানে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং মানবিক সহায়তার অভাবে ভুগছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই সংঘাতের অবসানের জন্য শান্তি আলোচনা এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে আসছিল।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন