শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

শিরোনাম

আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বাংলা নববর্ষকে বরণ করছে বন্দরনগরীর হাজারো মানুষ

সোমবার, এপ্রিল ১৪, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

সিএন প্রতিবেদন: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নানা রঙে, নানা ঢঙে, নেচে-গেয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বাংলা নববর্ষকে বরণ করা হচ্ছে। তীব্র রৌদকে উপেক্ষা করে বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ। বর্ষ বরণের আয়োজন থেকে বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বরাবরের ন্যায় এবারও নগরীতে বর্ষবরণের বড় আসর বসেছে সিআরবির শিরিষতলায়।
এর বাহিরে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ আরও বিভিন্নস্থানে বর্ণিল উৎসব চলছে। তবে নগরীর ডিসি হিলে ৪৬ বছর ধরে চলে আসা বর্ষ বরণের আরেকটি বড় আয়োজন রোববার রাতে মঞ্চে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় বন্ধ হয়ে গেছে।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে নগরীর সিআরবির শিরিষতলায় এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপনের সপ্তদশ আয়োজন শুরু হয়। ‘নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের’ উদ্যোগে দিনব্যাপী এই আয়োজনে উদীচী চট্টগ্রাম, সঙ্গীত ভবন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ রেলওয়ে সাংস্কৃতিক ফোরাম, স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম, সৃজামী, অদিতি সঙ্গীত নিকেতনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা সম্মিলিত গান পরিবেশন করেন।

এছাড়া বোধন আবৃত্তি পরিষদ, শব্দনোঙ্গর, তারুণ্যের উচ্ছ্বাসসহ কয়েকটি সংগঠনের শিল্পীরা বৃন্দআবৃত্তি পরিবেশন করেন। ওড়িষি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, নৃত্যনীড়, রাগেশ্রীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।

নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফারুক তাহের জানান, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। সকল মত-পথের ঊর্ধ্বে উঠে এদিনটি আমাদের এক হয়ে নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরার প্রেরণা দেয়। আমরা একেকজন একেক ধর্মের অনুসারী হতে পারি। পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, পৌষপার্বণ, নবান্ন এগুলো আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতি।’

এদিকে সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে নগরীর বাদশা মিয়া সড়কের ক্যাম্পাস থেকে পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা বের হয়। বাদশা মিয়া সড়ক থেকে আলমাস মোড়, কাজির দেউড়ি, জামালখান হয়ে সার্সন রোড দিয়ে শোভাযাত্রা আবার চারুকলা ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। শিক্ষার্থীদের তৈরি জাতীয় মাছ ইলিশ এবং টেপা পুতুলের ঘোড়ার মোটিফ স্থান পায় ঢোলবাদ্যের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া শোভাযাত্রায়। মুখোশ হিসেবে ছিল বাঘ, মহিষ ও খরগোশ।

শোভাযাত্রায় চারুকলার শিক্ষকদের পাশাপাশি সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশ নেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকদের অন্যতম সদ্য স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ছাত্র যাদব দেবনাথ।

শোভাযাত্রাকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন হয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের আশপাশজুড়ে। শোভাযাত্রা যে পথে গেছে সেখানেও পুলিশের কড়া প্রহরা দেখা গেছে।

সকালে অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে বর্ষবরণের শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় অংশ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। শোভাযাত্রাটি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

শোভাযাত্রায় উপস্থিত সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে মেয়র বলেন, “নতুন বছর হোক নতুনভাবে শহরকে গড়ার অনুপ্রেরণার। সবাই মিলে একটি ক্লিন, গ্রিন ও হেলদি চট্টগ্রাম গড়তে হবে। এজন্য নগরবাসীর সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।”

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম শুধু একটি শহর নয়, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাসযোগ্য একটি স্বপ্নের নগরী—যা গড়তে হলে প্রত্যেকেরই দায়িত্ব নিতে হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিও নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বর্ষবরণের আয়োজন করা হয়েছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন