মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতি

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রতি কড়াকড়ি অবস্থান নিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনলাইনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হুমকি, চীনা শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি নজরদারি ও নিয়মভঙ্গের অভিযোগে বিপুল সংখ্যক ভিসা বাতিল–এসব পদক্ষেপই প্রমাণ করেছে যে প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিকে সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার মেয়াদ সীমিত করার নতুন প্রস্তাব সামনে এনেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বর্তমানে এফ (F) ভিসাধারীরা তাদের পড়াশোনা চলা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারেন, যা Duration of Status নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে এটি মার্কিন উচ্চশিক্ষার বড় একটি আকর্ষণ ছিল। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদ শিক্ষার্থীর অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রামের সময়ের ওপর নির্ভর করবে এবং সর্বোচ্চ চার বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। পাশাপাশি পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর ভিসা নবায়ন বা অন্য বৈধ ভিসায় রূপান্তরের জন্য মাত্র ৬০ দিন সময় দেওয়া হবে; অন্যথায় দেশ ছেড়ে যেতে হবে।

প্রশাসনের দাবি, এ পরিবর্তন ভিসার অপব্যবহার ঠেকাতে সহায়ক হবে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটির একজন মুখপাত্র বলেন, অতীতের প্রশাসনগুলো শিক্ষার্থীদের প্রায় অনির্দিষ্ট সময় ধরে থাকার সুযোগ দিয়েছে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি, অতিরিক্ত সরকারি ব্যয় ও স্থানীয় নাগরিকদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন নীতি অনুযায়ী স্পষ্ট সময়সীমা থাকায় বিদেশি ভিসাধারীদের ওপর নজরদারি করা সহজ হবে।

এই উদ্যোগ এসেছে এমন সময়ে, যখন শিক্ষার্থী ভিসায় ধরপাকড় চলছে। শুধু গত বছরেই স্টেট ডিপার্টমেন্ট ৬,০০০-এর বেশি শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করেছে—যা আগের বছরের তুলনায় চারগুণ বেশি। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় দেশে থেকে যাওয়া, আইন ভঙ্গ করা (যেমন চুরি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো) এবং কখনো সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এসব ভিসা বাতিল হয়েছে।

এ ছাড়া কনস্যুলেট ও দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থী ভিসার আবেদনকারীদের কঠোরভাবে যাচাই করতে। বিশেষ করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান কিংবা মূলনীতির প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব রাখে কি না, তা খুঁটিয়ে দেখা হবে।

এই পরিবর্তন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষার জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে। এর পেছনে বড় কারণ ছিল নমনীয় ভিসাব্যবস্থা এবং পড়াশোনা শেষে কাজের সুযোগ। কিন্তু ভিসার মেয়াদ বেঁধে দেওয়ায় বিশেষ করে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়বেন—কারণ পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খোঁজা বা নতুন গবেষণা প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন না। দীর্ঘমেয়াদি প্রোগ্রাম, যেমন পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্যও এতে জটিলতা তৈরি হবে। ফলে নতুন আবেদনকারীরাও দ্বিধায় পড়বেন।

সবশেষ প্রস্তাবটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে—ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা ও মার্কিন স্বার্থের দোহাই দিয়ে শিক্ষা ও ভিসা নীতিতে বড় পরিবর্তন আনছে। এখন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সামনে প্রশ্ন কেবল যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তির নয়, বরং সেখানে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ অ্যাকাডেমিক যাত্রা শেষ করা আদৌ সম্ভব হবে কি না।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন