নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টিসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো। এ সময় সামনের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দলগুলা নিজেদের অভিমত ব্যাক্ত করেছেন। প্রতিনিধি দলও বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনা করেন। শনিবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর গুলশান-২ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছর ডিসেম্বর কিংবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এর জন্য ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচনের আগে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ১৫ দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছে। গত ৯ জুলাই রোববার প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় আসে। তাদের আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিধিদলটি সরকারের কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের সদস্য, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অনেকের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে। সেখানে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেছে বলে গণমাধ্যমকে জানান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী।
বাংলাদেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বলেন, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন এখানে পাঠানোর উপযোগী, সুপারিশযোগ্য কিংবা সম্ভব কি না। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলের কাছে যে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে তার ওপর ভিত্তি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব: আওয়ামী লীগ
সংবিধানের বর্তমান কাঠামো অবিকৃত রেখে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদের জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শনিবার দুপুরে ঢাকার শেরাটন হোটেলে ইইউর প্রাক-নির্বাচনী অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে দেড় ঘণ্টাকাল বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, এখানে মূলত একটা ব্যাপারে আমাদের অঙ্গীকার তাদের (ইইউ) চাওয়া, সেটা হল বাংলাদেশে তারা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন তারা চান এবং আমরাও বলেছি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সম্ভব।
সংবিধানের বাইরে গিয়ে অন্য কোনোভাবে নির্বাচনের কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে কাদের বলেন,বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, আইনি ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে তারা একটি নির্বাচন দেখতে চায়। তারা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে আশ্বস্ত হয়েছেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়: বিএনপি
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি কোনভাবেই নির্বাচনে যাবে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি। শনিবার (১৫ জুলাই) বাংলাদেশ সফররত ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক শেষে এ কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন এতোই প্রশ্নবিদ্ধ যে, ইইউ প্রতিনিধিদল জানতে চাইছে আগামী দিনে নির্বাচন আগামী দিনে আদৌ জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি না। আমাদের পক্ষ থেকে সবসময় বলে আসছি, দেশের মানুষ বলছে- এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এর অনেক কারণ যা আমরাও জানি, আপনারাও জানেন, বিশ্ববাসী জানে। তাই তারা বাংলাদেশে আসছে, কেননা এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।
আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনকে নিয়ে সারাবিশ্বের নজর কেন, এটাই হচ্ছে প্রশ্ন। কেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলকে এখানে এসে নির্বাচন নিয়ে তাদের মতামত দিতে হচ্ছে? দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে তো তাদের যেতে হচ্ছে না। কেন বাংলাদেশে আসতে হচ্ছে? এটা সবার মনে প্রশ্ন। তাদের মনেও হয়ত একই প্রশ্ন- কেন এখানে আসতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য নয় এটাই তার ভিত্তি। এই ভিত্তির ওপর সারা বিশ্ব বাংলাদেশের ওপর নজর দিয়েছে।
নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে: জামাত
বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বৈঠক হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশান-২ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে আলোচনার বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন,আমাদের চারজনের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তাদের (ইইউ প্রতিনিধিদল) মিটিং হয়েছে। এই মিটিংয়ে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠান, স্বচ্ছ-গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ইত্যাদি কীভাবে নির্বাচনের সময় নিশ্চিত করা যায়, এ ব্যাপারে আমাদের ভেতরে মতবিনিময় হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে যে প্রহসন হয়েছে। এটা পুরো জাতি এবং বিশ্ববাসীর কাছে পরিষ্কার ছিল যে, এটা কোনো নির্বাচন ছিল না, নির্বাচনের নামে প্রহসন ছিল এবং একটি নজিরবিহীন প্রতারণার নির্বাচন ছিল।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে, এই সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। সেই আলোকেই আমরা বলেছি, আগামী যে নির্বাচন হবে, বাংলাদেশের ডেমোক্রেসির জন্য, বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হলেই আগামী দিনে বাংলাদেশ বাঁচার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্দলীয় সরকার—যে নামেই হোক না কেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশের মানুষ দলীয় সরকারের অধীনে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই: জাতীয় পার্টি
বাংলাদেশে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় পার্টি। শনিবার গুলশানের একটি বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মো. কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবং জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা ও বিশেষ দূত মাসরুর মওলা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছি। দেশের মানুষও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অনেক বেশি। রাজনৈতিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। আলোচনার মূল উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকেই নিতে হবে। সংলাপ ছাড়া সমাধান হবে না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এক দফা নিয়ে আছে। বিএনপি সরকারের পদত্যাগ চায়। আর আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন চায়। জাতীয় পার্টির এক দফা হচ্ছে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে সরকারকেই সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ইউরোপীয় ইউনয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তাদের আরও একটি প্রতিনিধি দল আগামী ২৩ জুলাই বাংলাদেশে আসবে। তারাও বিভিন্ন দলের সাথে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে আলোচনা করবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন। তারা নির্বাচন বিষয়েই কথা বলেছেন।
বৈঠকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন