শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

ইতালিতে চার্চে যৌন নির্যাতনের শিকার অন্তত ৪,৪০০ জন

শনিবার, অক্টোবর ২৫, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ইতালিতে ২০২০ সালের পর থেকে ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের হাতে প্রায় ৪,৪০০ মানুষ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে দেশটির সর্ববৃহৎ ভুক্তভোগী সংগঠন রেতে ল’আবুসো।

শুক্রবার প্রকাশিত এই তথ্য নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে ইতালির বিশপদের ওপর, দীর্ঘদিন ধরে চলা এক গভীর সংকট মোকাবিলার জন্য। এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়ে

বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সেসকো জানার্দি জানান, এই অনানুষ্ঠানিক পরিসংখ্যান গঠিত হয়েছে ভুক্তভোগীদের বিবৃতি, বিচার বিভাগীয় সূত্র এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত মামলার তথ্যের ভিত্তিতে। রেতে ল’আবুসো জানায়নি, এই নির্যাতনের ঘটনাগুলো কত বছরের পুরোনো।

ক্যাথলিক চার্চের নীরবতা

ইতালির বিশপ সম্মেলন (সিইআই) এই প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। গত সপ্তাহেই ভ্যাটিকানের শিশু সুরক্ষা কমিশন তাদের সমালোচনা করেছিল, কারণ ২২৬টি ডায়োসিসের মধ্যে মাত্র ৮১টি কমিশনের পাঠানো প্রশ্নপত্রের উত্তর দিয়েছিল।

বহু দশক ধরে শিশু যৌন নির্যাতনের অভিযোগে কাঁপছে বৈশ্বিক ক্যাথলিক চার্চ। কিন্তু ইতালির স্থানীয় চার্চ নেতৃত্ব এই সংকট মোকাবিলায় তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সংযমী অবস্থান নিয়েছে।

নতুন পোপের নির্দেশনা

নতুন পোপ লিও এই সপ্তাহে প্রথমবারের মতো ধর্মযাজকদের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি চার্চের নবনিযুক্ত বিশপদের উদ্দেশে বলেন, ‌‘অসদাচরণের অভিযোগ গোপন রাখবেন না।’

তার পূর্বসূরি, প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস, তার ১২ বছরের পোপতন্ত্রে এই বিষয়টি অগ্রাধিকার দিলেও ফলাফল ছিল মিশ্র।

নির্যাতনের ভয়াবহ পরিসংখ্যান

রেতে ল’আবুসোর তথ্যমতে, তারা এখন পর্যন্ত ১,২৫০টি সন্দেহভাজন নির্যাতনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে—যার অনেকগুলোর সঙ্গে একাধিক ভুক্তভোগী জড়িত। এর মধ্যে ১,১০৬টি ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন পুরোহিতরা।

অন্যদিকে বাকি ঘটনাগুলো জড়িত ছিল সন্ন্যাসিনী, ধর্মীয় শিক্ষক, সাধারণ স্বেচ্ছাসেবক, শিক্ষাবিদ ও স্কাউট সদস্যদের সঙ্গে।

সংগঠনটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৪,৬২৫ জন ভুক্তভোগীর (যাদের তারা ‘সারভাইভার’ বলে উল্লেখ করে) মধ্যে ৪,৩৯৫ জনই পুরোহিতদের হাতে নির্যাতিত।

এর মধ্যে ৪,৪৫১ জনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে, এবং প্রায় সমসংখ্যক—৪,১০৮ জন—ছিলেন পুরুষ। এছাড়া নির্যাতনের শিকারদের মধ্যে ছিলেন ৫ জন সন্ন্যাসিনী, ১৫৬ জন অরক্ষিত প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১১ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি।

শাস্তির অভাব

সংগঠনটির তথ্য অনুযায়ী, ১,১০৬ জন সন্দেহভাজন পুরোহিতের মধ্যে মাত্র ৭৬ জনের বিরুদ্ধে চার্চ আদালতে বিচার হয়েছে।

এর মধ্যে ১৭ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, ৭ জনকে অন্য প্যারিশে বদলি দেওয়া হয়েছে, এবং ১৮ জনকে ধর্মযাজক পদ থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কার করা হয়েছে।

অভিযোগের পর ৫ জন অভিযুক্ত আত্মহত্যা করেছেন, জানিয়েছে রেতে ল’আবুসো।

চার্চের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন

বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিসংখ্যান চার্চের ভেতরে যৌন নির্যাতন দমনে এখনো কতটা অদক্ষতা ও গোপন সংস্কৃতি বিদ্যমান তা আবারও প্রকাশ করেছে।

ভ্যাটিকান কমিশনের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন যেমন বলেছে, ‘নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার অভাব এখনো ইতালির চার্চ ব্যবস্থার একটি বড় দুর্বলতা।’

ইতালির এই প্রতিবেদন ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতোই ক্যাথলিক চার্চের নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংকটের গভীরতা নতুন করে সামনে এনেছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন