মার্কিন বিমান হামলায় পরমাণু স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এই কর্মসূচি বন্ধে যা করার প্রয়োজন, তা-ই করা হবে।
রবিবার (২৭ জুলাই) ইউরোপীয় কমিশনের সভাপতির সঙ্গে এক বৈঠকের ফাঁকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ইরান এখনো সমৃদ্ধকরণ নিয়ে কথা বলছে! এত বড় ধ্বংসের মুখোমুখি হওয়ার পর কেউ কীভাবে বলে যে, ‘‘আমরা এখনও এই কর্মসূচি চালিয়ে যাব?’’ এমনটা বলা একেবারেই বোকামি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওদের ওপর ভয়ানক হামলা হয়েছে, অথচ আমার মনে হয় ওরা এখনও তা বোঝেনি। পুরো বিষয়টাই যেন এক প্রতারণা। ইরানকে কঠিনভাবে দমন করা হয়েছে এবং তা যথার্থ কারণেই। আমরা কিছুতেই তাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকার দিতে পারি না।’
গত ২২ জুন ট্রাম্পের নির্দেশে ইরানের ফরদো, এসফাহান ও নাতাঞ্জের পরমাণু স্থাপনায় একযোগে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলা ছিল ইসরায়েলের পূর্বনির্ধারিত সামরিক অভিযানের শেষ ধাপ, যা টানা ১২ দিন স্থায়ী হয়। ওই অভিযানে নিহত হন বহু সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও সাধারণ বেসামরিক নাগরিক।
এই সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল ট্রাম্পের ঘোষিত ৬০ দিনের সময়সীমা শেষ হওয়ার পর। ওই সময় তিনি ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেছিলেন, তাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে আসতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত সেই চুক্তির শর্তগুলোর অন্যতম ছিল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করা।
কিন্তু তেহরান সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। বরং সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘সমৃদ্ধকরণ আমাদের জন্য শুধু একটি প্রযুক্তিগত অর্জন নয়, বরং এটি জাতীয় গৌরবের অংশ। আমাদের বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে এটি সম্ভব হয়েছে। এখন এটি আমাদের মর্যাদার প্রশ্ন।’
তাঁর এই মন্তব্যের পর ট্রাম্প ফের সরব হন এবং বলেন, ‘আমরা এই বিষয়টিকে আর বাড়তে দেব না। আমাদের প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যু দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনার কারণ হয়ে আছে। তেহরান দাবি করে আসছে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ, চিকিৎসা ও জ্বালানির প্রয়োজনে পরিচালিত। তবে জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইএইএ বলছে, উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য নয় এবং এর মাধ্যমে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথ উন্মুক্ত হয়।
এখন দেখার বিষয়—ওয়াশিংটন ও তেহরানের এই টানাপড়েন কোথায় গড়ায়। তবে যেকোনো সময় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন