শুক্রবার, ০১ আগষ্ট ২০২৫

শিরোনাম

ইরানের তেল বিক্রি বন্ধে মার্কিন প্রচেষ্টা, ৫২টি জাহাজ ও ১৫ প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার আওতায়

বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩১, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ইরানের জাহাজ পরিবহন শিল্পকে লক্ষ্য করে নতুন করে বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে ১০০’রও বেশি ব্যক্তি, কোম্পানি ও জাহাজ, যারা ইরানের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করেছে মার্কিন প্রশাসন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইরানের ওপর চাপ বৃদ্ধির অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে জুন মাসে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে চালানো বিমান হামলার পর এটি আরও তীব্র হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হলো—ইরান যাতে তেল বিক্রি করতে না পারে এবং যে অর্থ দেশটির শাসনব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখছে, সেটিকে থামানো।

নতুন এই নিষেধাজ্ঞায় মূলত মোহাম্মদ হোসেইন শামখানি নামক এক ব্যক্তির মালিকানাধীন শিপিং স্বার্থকে টার্গেট করা হয়েছে। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানির পুত্র।

মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ একে ২০১৮ সালের পর থেকে ইরানকে ঘিরে সবচেয়ে বড় নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম হিসেবে অভিহিত করেছে।

ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, মোহাম্মদ হোসেইন শামখানি একটি জটিল মধ্যস্থতাকারী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কন্টেইনার জাহাজ ও ট্যাংকার পরিচালনা করেন, যা ইরান ও রাশিয়ার তেলসহ বিভিন্ন পণ্য বিশ্ববাজারে বিক্রি করে।

বিভাগটি অভিযোগ করেছে, তেহরানের প্রভাবশালী সংযোগ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে শামখানি কয়েক দশমিক বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করেছেন, যা ইরানের সরকারকে সহায়তা করতে ব্যবহার করা হয়।

সর্বশেষ এই নিষেধাজ্ঞায় ১৫টি শিপিং কোম্পানি, ৫২টি জাহাজ, ১২ জন ব্যক্তি এবং ৫৩টি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করা হয়েছে—যারা ১৭টি দেশে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে পানামা, ইতালি, হংকংসহ আরও অনেকে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের জন্য তেল বিক্রি করা ‘অনেক কঠিন’ করে তুলবে। তবে এর ফলে বিশ্ব তেলবাজারে দীর্ঘমেয়াদি কোনো অস্থিরতা হবে না বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, বছরের শুরুতে দৈনিক ১৮ লাখ ব্যারেল থেকে ইরানের তেল রপ্তানি কমে বর্তমানে দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেলে নেমে এসেছে।

‘আমরা আরও পদক্ষেপ নিচ্ছি যাতে এই সংখ্যা আরও কমিয়ে আনা যায়,’ বলেন ওই কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ইরানের তেল রপ্তানি দৈনিক কয়েক লক্ষ ব্যারেলে নেমে এসেছিল।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসব নিষেধাজ্ঞাকে ‘ইরানি জাতির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতার স্পষ্ট উদাহরণ’ বলে মন্তব্য করেছেন। ইরানের স্টুডেন্ট নিউজ নেটওয়ার্কের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়।

মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা ‘ইরানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের কল্যাণে আঘাত হানার এক দুষ্টচক্র।’

ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এখনো চীন।

চলতি জুলাই মাসের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও মোহাম্মদ হোসেইন শামখানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল রুশ তেল বাণিজ্যে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগে।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, বুধবারের পদক্ষেপটি ইরান ও রাশিয়া—দু’পক্ষকেই প্রভাবিত করবে। তবে ফোকাস মূলত ইরানের দিকেই।

‘এই ব্যক্তি যেভাবে সর্বোচ্চ নেতার সঙ্গে সংযুক্ত, তার বাবার আগের নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম ও ইরান-সম্পর্কিত বিধি অনুসারে—এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানকেন্দ্রিক পদক্ষেপ,’ বলেন ওই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ হোসেইনের বাবা আলি শামখানিকে যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছিল।

এই সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাগুলো এমন সময় এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-ইরান কূটনৈতিক আলোচনা আবার শুরু হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। গত মাসে মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংসের দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্প সোমবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইরান যদি পুনরায় তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো চালু করার চেষ্টা করে, তাহলে আরও হামলা চালানো হবে।

তিনি বলেন, ইরান থেকে এখনো ‘বিপদজনক সংকেত’’ আসছে এবং তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করার যেকোনো প্রচেষ্টা সঙ্গে সঙ্গে দমন করা হবে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও ইরানের সঙ্গে পাঁচ দফা আলোচনা করেছিল জুনের হামলার আগে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে “ধ্বংস করে দেওয়া” হয়েছে।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ এর ক্ষতির মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আর ইরান বরাবরের মতোই দাবি করছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না।

হোয়াইট হাউসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গত সপ্তাহে জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখনো ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় আগ্রহী। তবে ইউরোপীয় ও ইরানি কূটনীতিকরা বলছেন, তেহরান এখনই আলোচনা টেবিলে ফিরবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন