মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে নিজের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার যে মূল্যায়ন, তা সঠিক নয়। বরং তিনি মনে করেন, ইরান বর্তমানে এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, যেখানে তারা মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পর্যাপ্ত সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।
নিউ ইয়র্ক পোস্টের ২০ জুন শুক্রবারের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ট্রাম্প বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি যদি মনে করে ইরান এখনও পারমাণবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি যায়নি, তাহলে তারা ভুল করছে। ট্রাম্পের মতে, ইরানের কাছে বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে এবং তারা খুব দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে। এই বক্তব্য মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের বর্তমান মূল্যায়নের সম্পূর্ণ বিপরীত। উল্লেখ্য, গত মার্চে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছিল, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করলেও তারা এখনো অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে পৌঁছেনি।
ট্রাম্প সরাসরি ইরানকে সতর্ক করে বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি ইরান পারমাণবিক কার্যক্রম বন্ধ না করে, তাহলে আমেরিকা সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত। যদিও তিনি স্পষ্ট করেছেন, তিনি স্থলসেনা প্রেরণের পক্ষে নন, তবে আকাশপথে সামরিক অভিযান হতে পারে। তার মতে, সময় এখনো আলোচনার আছে, তবে ইরানকে শক্ত বার্তা পাঠানো জরুরি।
বিশ্ব কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে ট্রাম্পের এই বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ এখনো কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ট্রাম্পের মতে, ইরান ইউরোপের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী নয়। তিনি বলেন, “আমরা কথা বলেছি, কিন্তু ইরান ইউরোপের কথা শুনছে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে। যুদ্ধ না করেও ইরানকে চাপের মুখে ফেলার জন্য এ ধরনের আল্টিমেটাম কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেকে মনে করছেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যদি হামলা চালানো হয়, তাহলে এটি মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলবে এবং পারমাণবিক দূষণের ঝুঁকি তৈরি করবে।
এই বিতর্কের মধ্যে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে— ট্রাম্পের গোয়েন্দা সংস্থাকে অবিশ্বাস করা কি যুক্তিসঙ্গত, নাকি এটি শুধুই রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল? বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম কতটা বাস্তবিক হুমকি তা নিয়ে বিশ্ব এখন দ্বিধাবিভক্ত।
এই মুহূর্তে শান্তির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখাই সবচেয়ে জরুরি বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে ট্রাম্পের বক্তব্য বিশ্ববাসীর সামনে নতুন করে একটি প্রশ্ন তুলেছে— আমরা কি আরেকটি যুদ্ধের পথে এগোচ্ছি, নাকি এখনো সময় আছে শান্তির সুরক্ষা করার?
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন