রবিবার, ০৩ আগষ্ট ২০২৫

শিরোনাম

ইসরাইলি জিম্মির নতুন ভিডিও নিয়ে চাঞ্চল্য

রবিবার, আগস্ট ৩, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ফিলিস্তিনের গাজায় বন্দি এক ইসরাইলির ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাসের সশস্ত্র শাখা আল কাসসাম ব্রিগেড। ভিডিওটি প্রকাশের পর বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ইসরাইলিদের পাশাপাশি ইউরোপীয় নেতারাও এই ভিডিও নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

গত শনিবার (২ আগস্ট) প্রায় সাড়ে চার মিনিটের ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। তাতে এক সরু কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে এক যুবককে দেখা যায়। গায়ে কোনো জামা নেই, শুধু প্যান্ট। শরীর হাড্ডিসার। বোঝা যাচ্ছে, বহুদিন ঠিকমতো খেতে পাননি তিনি।

এএফপি ও ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলো এই যুবকের নাম এভিয়াতার ডেভিড বলে জানিয়েছে। তিনি দক্ষিণ ইসরাইলে নোভা সঙ্গীত উৎসবে যোগদান দিয়েছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার সময় আরও দুই শতাধিক ইসরাইলির সঙ্গে ২৪ বছর বয়সি এভিয়াতারকে আটক করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

দুইবারের যুদ্ধবিরতিকালে বেশিরভাগ জিম্মিকেই মুক্তি দিয়েছে হামাস। এখনও ৪৯ জন জিম্মি গাজায় তাদের হাতে বন্দি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইসরাইলের দাবি, তাদের মধ্যে ২৭ জন ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, সুড়ঙ্গের দেয়ালে দুটি সাদা কাগজে কিছু একটা লেখা। গাজায় যে তীব্র খাদ্য সংকট এবং তিনিও যে ঠিক মতো খেতে পাচ্ছেন না ভিডিওতে সেসব কথাই বলেছেন ওই যুবক। তিনি বলেন,
আজ ২৭ জুলাই। এখন দুপুর ১২টা এবং আমি জানি না আমি কী খাব। আমি টানা কয়েকদিন ধরে কিছু খাইনি। আমি খুব কঠিন পরিস্থিতিতে আছি, অনেক দিন ধরে।

গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, হামাস সদস্যরা তাকে সামর্থ অনুযায়ী যতটুকু পারছে, খেতে দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখানে যথেষ্ট খাবার নেই। এটা কাল্পনিক নয়, এটা বাস্তব।’

ভিডিওর এক পর্যায়ে ক্যামেরার পেছন থেকে তাকে একটি পানির বোতল দেয়া হয়। সেটা হাতে নেয়ার পর বলেন, ‘এই বোতলটি দুই দিনের জন্য, যাতে আমি মারা না যাই।’

এ সময় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে যুবক বলেন, ‘আপনি আমাকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করেছেন। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী, যার আমার এবং শত্রুদের হাতে জিম্মি সমস্ত বন্দিদের জন্য ভাবার কথা ছিল।’

ভিডিওর শেষ দিকে যুবককে সুড়ঙ্গের মধ্যে কবর খুড়তে দেখা যায়। তিনি জানান, তিনি সুড়ঙ্গের ভেতরে নিজের জন্য কবর খুঁড়ছেন। কারণ তিনি ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার কথায়, ‘এটা সেই কবর যেখানে আমার সমাধি হতে যাচ্ছে। সময় ফুরিয়ে আসছে।’

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে হামাস একটি ভিডিও প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, এভিয়াতার ডেভিড একটি গাড়ির ভেতর থেকে কয়েক মিটার দূরে জিম্মি মুক্তি অনুষ্ঠান দেখছেন। দ্বিতীয় যুদ্ধবিরতির সময় হামাস অনেক জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছিল।

এভিয়াতার ডেভিডের পরিবার হামাস প্রকাশিত ভিডিও নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, তাকে (এভিয়াতারকে) ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখা হচ্ছে। ইসরাইলি সরকারের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। ভিডিওটি নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘এই হলো গাজা উপত্যকার প্রকৃত দুর্ভিক্ষ। আমাদের সকল বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।’

ভিডিওটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন ইউরোপীয় নেতারাও। এক বিবৃতিতে ভিডিওটিকে ‘ঘৃণ্য’ অভিহিত করে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোঁ-নোয়েল ব্যারোট বলেছেন, ‘তাদের অবশ্যই নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে’। হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে এবং গাজা শাসন ত্যাগ করতে হবে।’

ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, সম্প্রতি হামাস ও ইসলামিক জিহাদের প্রকাশিত ভিডিওতে যে ক্ষতবিক্ষত ইসরাইলি জিম্মিদের দেখানো হয়েছে তা ‘ভয়াবহ’ ও ‘বর্বর’।

এক এক্স বার্তায় তিনি বলেন, ‘ইসরাইলি জিম্মিদের ছবি ভয়াবহ এবং হামাসের বর্বরতাকেই প্রকাশ করে। সমস্ত জিম্মিকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে। হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে এবং গাজায় তাদের শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। একই সাথে গাজায় বড় আকারে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর অনুমতি দিতে হবে।’

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন