ঈদের পর তিন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতে চায় বিএনপি। ভারতবিরোধী জনমত সৃষ্টি করা, দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়ে একসঙ্গে মাঠে নামা, তার আগে দুদলের মধ্যে বোঝাপড়ার উদ্যোগ নেওয়া। এর বাইরে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে বিএনপি আরও নানামুখী উদ্যোগ নেবে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল করারও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। আপাতত দলটি রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন সাংগঠনিক ইউনিট, অঙ্গসংগঠন ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইফতার কর্মসূচি পালন করছে। এর মধ্য দিয়ে চেষ্টা চলছে সম্পর্ক উন্নয়নের।
ভারতবিরোধী আন্দোলন সম্পর্কে বিএনপি নেতারা বলছেন, বিভিন্নভাবে ভারতবিরোধী অবস্থান জোরদারের চেষ্টা চলছে। ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত নানা বিষয় নিয়ে ঈদের পর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভারতের নেতিবাচক বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভারতের নেতিবাচক অবস্থান এবার সবাই প্রত্যক্ষ করেছে। এসব কারণে বাংলাদেশের মানুষ ভারতের ওপর ক্ষুব্ধ।
সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই ভারত বর্জনের ডাক এসেছে। এ কারণে বিএনপি ভারত বর্জন আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে। আবার ভারতবিরোধী আন্দোলন নিয়ে বিএনপিতে দ্বিমতও আছে। পক্ষটি গভীরভাবে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা মনে করছেন, এখনই ভারতের বিরুদ্ধে সরাসরি মাঠে নামলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে কেন ভারতবিরোধিতা বাড়ছে, এটি ভারতকেই ভাবতে হবে। কোন আচরণ ও সিদ্ধান্তের ফলে এমনটি হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। কেউ জনগণের চাওয়া-পাওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিলে জনগণও তাদের বিপরীতে অবস্থান নেয়। বিশেষ কোনো দলকে অগ্রাধিকার দেওয়া অব্যাহত রাখলে দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি হবে।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলন ও কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়ে তাড়াহুড়োর কিছু নেই। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের চিত্র এমনই হয়। কখনো তীব্র আবার কখনো সাময়িক বিরতি।
ঢাকা উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরীফ উদ্দিন জুয়েল বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতাকর্মী দীর্ঘদিন জেলে ছিল, অনেকে বাড়িতে থাকতে পারেনি। ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে আমরা সবাইকে এক করছি। তাদের মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন থেমে যায়নি। সাময়িক বিরতি চলছে। আর সংগঠন ঢেলে সাজানোর বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়া হচ্ছে। যেসব কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি আছে, তা পূরণের চেষ্টা চলছে। যাতে সাংগঠনিক কাজে স্থবিরতা না আসে। গত আন্দোলন পর্যালোচনা করে সংগঠনের সসম্যাগুলো চিহিৃত করা হচ্ছে।’
এদিকে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্বকে ক্যাম্পাসমুখী হতে দলের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে আমরা ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক বিস্তৃত করতে চাই। ছাত্রদল পল্টনমুখী ছাত্র সংগঠন নয়, ভবিষ্যতেও সেটা হবে না। দ্রুতই আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মসূচি দেব। দলের হাইকমান্ড থেকে এমন নির্দেশনাই রয়েছে। ঈদের পর আমরা ক্যাম্পাসে নানা ইস্যুতে সক্রিয় হব।’
বিএনপির শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ঈদের পর শিগগিরই বড় আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা নেই আমাদের। বিএনপি এখনও সবশেষ আন্দোলনের রিভিউ করতে পারেনি। ঈদের পর তারা লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকের কথা বলেছে। আপাতত মনে হচ্ছে বিএনপি সব বিরোধী দলকে আরও সক্রিয় করতে চাইছে। জামায়াতকে যুগপৎ আন্দোলনে নিলে নানা বিষয় সামনে আসবে। ঈদের পর বিএনপি বিষয়গুলো পরিষ্কার করবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান আগের মতোই আছে।ক্রমান্বয়ে তাদের অবস্থান আরও জোরালো হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের দায়িত্বশীল একজন নেতা বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমাদের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে। আশা করছি ঈদের পর ভালো কিছু হবে। বৃহত্তর আন্দোলনের বিষয়ে সবাই একমত।’
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন