ঢাকা: নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রথম বারের মত দেশেই ড্রিমলাইনারের ‘সি-চেক’ কার্যক্রমের সফল পরিসমাপ্তি উপলক্ষ্যে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের জন্য এবং করোনা মহামারির শুরুর দিকে চীনের উহান শহর থেকে ঝুঁকি নিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখায় উহান ফ্লাইট বিজি ৭০০২ এর ককপিট ক্রু, কেবিন ক্রু, প্রকৌশলী, ফ্লাইট অপারেশন্স ও গ্রাউন্ড সার্ভিসের কর্মীদের সংবর্ধনা দিয়য়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বলাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে ‘সি-চেক’ কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট ১৫ জন এবং উহান ফ্লাইট এর সাথে সংশ্লিষ্ট ২০ জনকে ফুলেল শুভেচ্ছাসহ সম্মাননা স্মারক দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতি মন্ত্রী মো. মাহবুব আলী প্রধান অতিথি ছিলেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
প্রতি মন্ত্রী বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দেশ ও দেশের প্রয়োজনে কাজ করে যাচ্ছে। প্রথম যখন চীনে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়, সে সময় সাহসিকতার সাথে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে। বিমানের কর্মীরা লকডাউনের সময়েও নিরলসভাবে কাজ করেছে।’
প্রথম বারের মত সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সি-চেক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করায় বিমানের প্রকৌশলীদেরকে এবং উহান ফ্লাইটে দায়িত্ব পালনকারী সবাইকে তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতি মন্ত্রী বলেন, ‘বিমানের প্রকৌশলীরা দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে অন্যান্য এয়ারলাইন্সকেও সি-চেক সেবা দেবে।’
এ সময় প্রতি মন্ত্রী দক্ষ জনবল তৈরি ও প্রকৌশলগত অবকাঠামো নির্মাণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
তিনি আরো বলেন, ‘বিমান এ সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুমাত্রিক নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের স্বনির্ভর ও উন্নত সোনার বাংলা বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
করোনা মহামারীর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উহান থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে অবদান রাখায় বিমানের ককপিট ক্রু, কেবিন ক্রু সহ সংশ্লিষ্ট কর্মীদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সাজ্জাদুল হাসান। তিনি বিমানের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড এবং সাফল্যগুলো জনগণের মাঝে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সাথে সফলভাবে সি-চেক সম্পন্ন করায় তিনি প্রকৌশলীদেরকে অভিনন্দন জানান।
মো. মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উন্নয়নে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদা এগিয়ে এসেছেন। বিমানের কর্মীদের নিরলস পরিশ্রমের কারণে করোনা মহামারির মাঝেও বিমান ভালভাবে টিকে আছে।’
তিনি উহান ফ্লাইটের ক্রু ও সি-চেক কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রকৌশলীদের অভিনন্দন জানান।
ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল সি-চেক কার্যক্রম ও উহান ফ্লাইট পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ‘বিমানের প্রকৌশলীরা সি-চেক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে এভিয়েশন খাতে অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ভবিষ্যতে বোয়িং উড়োজাহাজ ব্যবহারকারী এয়ারলাইন্সগুলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স থেকে সি-চেক সেবা গ্রহণ করতে পারবে।’
উল্লেখ্য, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলীরা প্রথম বারের মত সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সাশ্রয়ী খরচে দেশেই অত্যাধুনিক ড্রিমলাইনারের সি-চেক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। গত ১৭ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’র প্রথম সি-চেক কার্যক্রম ২৮ আগস্ট সফলভাবে শেষ হয়েছে। বিশ্বের খুব স্বল্প সংখ্যক এয়ারলাইন্সেরই বোয়িং-৭৮৭ এর মত অত্যাধুনিক উড়োজাহাজের সি-চেক করার সক্ষমতা রয়েছে। এটি বিমান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরিদপ্তরের সক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
সি-চেক একটি দীর্ঘ মেয়াদী, জটিল এবং উচ্চ কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন চেক যাতে উড়োজাহাজের বিভিন্ন অবকাঠামো উন্মোচনের মাধ্যমে বিশদভাবে নিরীক্ষান্তে উড়োজাহাজকে নভোযোগ্য করা হয়। বোয়িং-৭৮৭ মডেলের ড্রিমলাইনারের সি-চেক প্রতি তিন বছর পর পর সম্পন্ন করতে হয়। এ পর্যন্ত বিমানের যে কোন ধরনের নতুন উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে প্রথম সি-চেক বিদেশি এমআরও এর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে আসছে। আগে বিদেশি সংস্থা কর্তৃক সি-চেক সম্পন্ন করতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হত, এখন থেকে সি-চেক সফলভাবে দেশে সম্পন্ন হওয়ায় উড়োজাহাজ প্রতি আনুমানিক ছয় লাখ মার্কিন ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।
বর্তমানে বিমান বহরে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন চতুর্থ জেনারেশনের ছয়টি বোয়িং-৭৮৭ (ড্রিমলাইনার) উড়োজাহাজ রয়েছে। যার সবকটিই ইটিওপিএস মানদণ্ড অনুসারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। উড়োজাহাজগুলো যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার ন্যায় বিভিন্ন দূরবর্তী গন্তব্যে দক্ষতার সাথে স্বল্প জ্বালানি ব্যয়ে চলাচলে সক্ষম।
অপর দিকে, করোনা মহামারির শুরুর দিকে ২০২০ সালের ৩১ জানুয়ারি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর মডেলের একটি উড়োজাহাজ (ফ্লাইট বিজি ৭০০১) চীনের উহান শহর থেকে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদেরকে মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে আনতে ঢাকা থেকে বিকাল পাঁচটা ৫০ মিনিটে চীনের উহান নগরীর তিয়ানহে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ফ্লাইট বিজি ৭০০২ উহান থেকে মোট ৩১২ জন (২৯৭ জন পূর্ণবয়স্ক এবং ১৫ জন শিশু যাদের মধ্যে ৩ জনের বয়স এক বছরের কম) যাত্রী নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা ৫৩ মিনিটে অবতরণ করে। ৩১৬ জন আসার কথা থাকলেও শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় চীন কর্তৃপক্ষ চারজনকে বাংলাদেশে পাঠায়নি। ঢাকায় অবতরণের পর উড়োজাহাজটিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী এবং ICAO অ্যানেক্স-৬ ও ৯ অনুসারে পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত করা হয়। ঝুঁকি নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করার পরেও বিভিন্ন দেশ উহান ফ্লাইট পরিচালনাকারী ককপিট ক্রু ও কেবিন ক্রুদেরকে পরবর্তী বেশ কিছু দিন সে সব দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়নি।
এমএ/সিএন
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন