রেহানা ফেরদৌসী: ২৮ জুলাই ছিল গ্রীষ্মের আকাশপ্রেমীদের জন্য এক বিরল ও অবিস্মরণীয় রাত। এই রাতে একসঙ্গে দেখা মিলেছিল উজ্জ্বল পূর্ণচাঁদ, মঙ্গলের নিকটবর্তী অবস্থান এবং ডেল্টা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টির শীর্ষ পর্যায়—একটি জাদুকরী মহাজাগতিক মিলন। এই দৃশ্য উপভোগ করতে টেলিস্কোপের প্রয়োজন ছিল না, খালি চোখে হাজার হাজার মানুষ উপভোগ করেছিল মহাবিশ্বের এক অপূর্ব খেলা।
চাঁদ ও মঙ্গলের ঘনিষ্ঠ মিলন
২৮ জুলাই সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে চাঁদ ও মঙ্গল একে অপরের কাছাকাছি অবস্থান করেছিল। বাস্তবে কোটি কোটি মাইল দূরে থাকা এই দুটি মহাজাগতিক বস্তু আমাদের দৃষ্টিতে এমনভাবে মিলে যায় যে, এক অনবদ্য দৃশ্য তৈরি হয়। মঙ্গলকে দেখা গেছে লালচে উজ্জ্বল বিন্দুর মতো, যা প্রায় পূর্ণিমার ‘ওয়াক্সিং গিবাস’ চাঁদের পাশে ঝলমল করছিল। চাঁদের অন্ধকার অংশে পৃথিবী থেকে প্রতিফলিত সূর্যের আলো—‘আর্থশাইন’—দেখা গেছে, যা আকাশপ্রেমীদের জন্য এক রহস্যময় সৌন্দর্যের জন্ম দিয়েছে।
মঙ্গল যদিও তার সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে কিছুটা কমজোর হয়ে এসেছে, তবুও আকাশে এটি একটি উজ্জ্বল লাল বিন্দুর মতো স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। চাঁদের ও মঙ্গলের এই মিলন হাজার হাজার মানুষের চোখে এক অপার্থিব দৃশ্যের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
ডেল্টা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টির চূড়ান্ত সময়
এই মহাজাগতিক মিলনকে আরও রঙিন করেছে ডেল্টা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টি, যার সর্বোচ্চ পর্যায় ছিল ২৮ জুলাই রাত থেকে ২৯ জুলাই ভোর পর্যন্ত। প্রতি বছর এই সময়ে ডেল্টা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টি হয় এবং পরিষ্কার আকাশে ঘণ্টায় প্রায় ২০টি উল্কা দেখা যায়। যদিও উল্কাবৃষ্টির মূল পিক সময় পড়েছে ১২-১৩ আগস্টে, পূর্ণিমার উজ্জ্বল আলো স্টারজন মুন আকাশকে এতটাই আলোকিত করে যে, তখন অনেক উল্কা চোখে পড়া কঠিন হয়। তাই জুলাইয়ের শেষ রাতগুলো, বিশেষ করে ২৮ জুলাই ছিল উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
পূর্ণিমার আলো কিছুটা উল্কাবৃষ্টির উজ্জ্বলতা কমিয়ে দেয়, তবুও উল্কাগুলো ধীরে ধীরে চলার কারণে রাতের বিভিন্ন সময়ে দেখা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে ভোরের আগে, যখন চাঁদ পশ্চিম দিকে অস্ত যাচ্ছে, তখন উল্কাবৃষ্টির দৃশ্য ছিল আরও মনোমুগ্ধকর।
অন্যান্য উল্কাবৃষ্টি
২৮ থেকে ৩০ জুলাই অন্যান্য উল্কাবৃষ্টির মধ্যেও আকাশ প্রফুল্ল ছিল। পিসিস অস্ট্রিনিডস (Piscis Austrinids) প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫টি উল্কা নিয়ে শুরু হয়েছিল ২৮ জুলাই রাতে। এর পর ২৯ জুলাই ছিল ডেল্টা অ্যাকুয়ারিডস (Delta Aquarids), ঘণ্টায় ২০টি উল্কা পর্যন্ত, এবং ৩০ জুলাই রাতের আলফা ক্যাপরিকর্নিডস (Alpha Capricornids) প্রতি ঘণ্টায় ৫টি উল্কা নিয়ে আকাশে আলো ছড়িয়েছে। যদিও আলফা ক্যাপরিকর্নিডস অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত, এর উজ্জ্বল ও ধীর গতির উল্কাগুলো আকাশপ্রেমীদের নজর কাড়ে।
২৮ জুলাই রাতের আকাশের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
সূর্যাস্তের প্রায় ৪৫ মিনিট পর পশ্চিম আকাশে ১৯ শতাংশ আলোকিত বাঁকা চাঁদ ও মঙ্গল গ্রহের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অবস্থান।
চাঁদের অন্ধকার অংশে ‘আর্থশাইন’ এর রহস্যময় আলোর ছোঁয়া।
তিন প্রকার উল্কাবৃষ্টি একই সময়ে চলা।
রাতের শেষভাগে যখন চাঁদ অস্ত যেতে থাকে, তখন উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় সৃষ্টি হয়।
উল্কাবৃষ্টি দেখার জন্য পরামর্শ
উল্কাবৃষ্টি দেখতে হলে আকাশ পরিষ্কার থাকা জরুরি। মেঘলা বা বৃষ্টির দিন এ সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই, উল্কা সাধারণ চোখে স্পষ্ট দেখা যায়।
মোবাইল কিংবা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে চাইলে ট্রাইপড ব্যবহার করা উচিত, কারণ দীর্ঘ এক্সপোজারের প্রয়োজন হয়।
কোথা থেকে দেখা গেছে?
বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করা সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন যারা, তাদের কাছে ২৮ জুলাই ছিল এক অলৌকিক ও স্মরণীয় রাত।
মহাবিশ্ব আপনাকে এই গ্রীষ্মে এক অসাধারণ রাত উপহার দিয়েছে, যা চোখের সামনে দেখার সৌভাগ্য যে কেউ পেতে পারেন তা সত্যিই বিরল।
সহ-সম্পাদক, সমাজকল্যাণ বিভাগ
পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (কেন্দ্রীয় পুনাক)
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন