চলমান ডেক্স : দেশে গত এক দশকে ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৬ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ)। গতকাল সোমবার জেনেভা থেকে প্রকাশিত ‘যেখানে কোনো সূর্য পৌঁছায় না : বাংলাদেশে গুমের এক দশক’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এইচআরডাব্লিউ এ তথ্য জানায়। এইচআরডাব্লিউ গত বছরের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১১৫ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করে।
এইচআরডাব্লিউ জানায়, সাক্ষাৎকার দেওয়া ওই ব্যক্তিরা গুমের শিকার হওয়া, তাঁদের পরিবারের সদস্য এবং গুমের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। গুমের অভিযোগ তুলে ধরে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে এইচআরডাব্লিউ। এর পাশাপাশি এসব গুমের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাহিনীকে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে।
সংস্থাটির আরো দাবি, প্রতিবেদনটি তৈরি করার সময় তারা দেখেছে যে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এবং তাদের মতামত দাবিয়ে রাখতে গুম এবং গুম করার হুমকি দিচ্ছে। বাংলাদেশের সরকার অবশ্য গুমের ঘটনায় কোনো কর্তৃপক্ষ অথবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছে।
প্রতিবেদনের সারমর্ম অংশে ‘গুম’ হওয়া সাত ভুক্তভোগীর স্বজনদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের ভূঁইয়া ওরফে মাসুম ২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁর মা আয়েশা আলীর দাবি, তাঁকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বিএনপি নেতা নূর হাসান হিরুকে ২০১১ সালের ২০ জুন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে পাঁচ-ছয়জন তুলে নেয়। তাঁর ভাইয়ের দাবি, হিরুকে তুলে নেওয়ার পর থেকে তাঁর খোঁজ নেই।
শিবিরকর্মী মোহাম্মদ রেজাউন হুসাইন ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছে। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ মিলেনি বলে দাবি করেছেন তাঁর মা।
উল্লেখ্য, গুম নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন কমিটি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ পুরনো। তবে বাংলাদেশ বরাবরই গুমের অভিযোগ নাকচ করে আসছে। জাতিসংঘ কমিটিতে সর্বশেষ আলোচনায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, এ দেশের আইনে গুম বলে কিছু নেই।
জাতিসংঘের গুম প্রতিরোধবিষয়ক কমিটি সম্প্রতি বাংলাদেশকে চিঠি পাঠিয়ে বেশ কয়েকজন ব্যক্তির গুম হওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চেয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়ে জাতিসংঘ কমিটির উদ্বেগের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুনিয়ার সব দেশেই এগুলো কমবেশি হয়; কিন্তু বাংলাদেশ যেহেতু তাদের বেশি সম্মান দেয় তাই তারা অব্যাহতভাবে আমাদের প্রশ্ন করে। ভারত-পাকিস্তান নিয়ে তারা কোনো কথা বলে না। কিন্তু আমরা যেহেতু পাত্তা দিই তাই তারা আমাদের নিয়ে সারাক্ষণ বলে বেড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘খোদ আমেরিকায় এ বছর এক হাজার চারজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ৯৯৬। কই, এসব নিয়ে তো জাতিসংঘ কোনো কথা বলে না!’
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন