বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

শিরোনাম

‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’:ধনীদের উৎসব, গরিবের দুশ্চিন্তা?

রবিবার, জুলাই ৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ চালু করেছিলেন। জো বাইডেন এনেছিলেন ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট’। আর দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় আইন হিসেবে সামনে এসেছে করছাড়-ভিত্তিক বিল, যেটিকে তিনি নিজেই নাম দিয়েছেন ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’।

আইনটি পাস করাতে ট্রাম্প অনুসরণ করেছেন তার দীর্ঘ ব্যবসায়িক জীবনে প্রতিষ্ঠিত কৌশল—ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্র্যান্ডিং এবং জোরালো প্রচার। কংগ্রেসে রিপাবলিকানদের একচেটিয়া সমর্থন নিশ্চিত করে, নানা বিতর্ক সত্ত্বেও তিনি বিলটি পাস করাতে সক্ষম হন।

তবে এই জয় কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের ওপর। ডেমোক্রেটরা ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন এই ইস্যুতে প্রচারণা চালাতে—তাদের অভিযোগ, এই বিল ধনীদের করছাড় দিলেও দরিদ্র আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবা কেড়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের দাবি, যারা স্বাস্থ্যসেবার যোগ্য, তারা তা পাবেই। কিন্তু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই বিল কার্যকর হলে আগামী এক দশকের মধ্যে দেশজুড়ে বীমাবিহীন মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

বিলে এমন কিছু দফাও রয়েছে, যা দিয়ে ট্রাম্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছাতে চান—যেমন, ‘টিপস’ ও ‘ওভারটাইম’ আয়ের ওপর কর মওকুফ, যা মূলত নিম্ন আয়ের শ্রমজীবীদের জন্য। এ ছাড়া, তাঁর প্রথম মেয়াদের করছাড় যেগুলো শিগগিরই মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা, সেগুলো পুনরায় বাড়িয়ে তিনি দাবি করতে পারছেন যে এতে লাখ লাখ মানুষ করবৃদ্ধি থেকে রক্ষা পাবেন।

তবে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে রিপাবলিকানরা বড় কাটছাঁট করেছে মেডিকেইডসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে, যা ট্রাম্পের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ট্রাম্প একসময় বলেছিলেন, মেডিকেইড, সোশ্যাল সিকিউরিটি বা ফুড স্ট্যাম্পের মতো কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না। বাস্তবে, এই বিলের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে সরকারপুষ্ট খাদ্যসহায়তা ও স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় অনেকখানিই কমানো হয়েছে।

সিনেটর ব্রায়ান শাটজ এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে কংগ্রেসে ডেমোক্রেটরা অনেক নেতিবাচক সিদ্ধান্ত আটকে দিতে পেরেছিলেন। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন, কারণ ট্রাম্পের দলের হাতে এখন কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ। শাটজ বলেন, এই বিল বাস্তবায়িত হলে কিছু হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যেতে পারে, বাড়তে পারে বিদ্যুতের দাম, আর খাদ্য সংকটে পড়তে পারেন বহু মানুষ।

এই বিল নিয়ে কিছু রিপাবলিকান নেতাও অসন্তুষ্ট। নর্থ ক্যারোলিনার সিনেটর থম টিলিস সতর্ক করেছিলেন যে এই আইন কার্যকর হলে তার রাজ্যে অনেক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবেন এবং রাজনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। তাঁর পরামর্শ অগ্রাহ্য হওয়ায় তিনি পরবর্তী নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অন্যদিকে, আলাস্কার সিনেটর লিসা মারকাওস্কি, যিনি এই বিল পাসের জন্য চূড়ান্ত ভোটটি দেন, তিনিও বলেন, এই বিলটি আরও পর্যালোচনা ও সংশোধনের প্রয়োজন ছিল।

শুরুর জরিপগুলো বলছে, আইনটি আমজনতার মধ্যে বিশেষ করে স্বাধীন ভোটার এবং এমনকি কিছু রিপাবলিকানের মধ্যেও জনপ্রিয় নয়। হোয়াইট হাউস অবশ্য বলছে, তাদের অভ্যন্তরীণ জরিপে এই নেতিবাচকতা ধরা পড়েনি।

বর্তমানে শুধুই রিপাবলিকানরাই এই আইন পাস হওয়ায় উল্লসিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তাতে আপত্তি নেই বলেই মনে হয়। আইওয়ায় এক ভাষণে তিনি বলেন, ডেমোক্রেটরা শুধু তাঁকে ঘৃণা করে বলেই এই বিলের বিরোধিতা করেছে। আর এ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন, কারণ তিনি নিজেও তাঁদের ঘৃণা করেন।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন