বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

কাঁচা দুধ নাকি ফোটানো? কিভাবে খেলে বেশি উপকার জেনে নিন

বুধবার, অক্টোবর ১৫, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
কাঁচা দুধ

পুষ্টিকর খাদ্যগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে দুধ। ছোটবেলা থেকে একথা শুনেই আমরা বড় হয়েছি। ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিনে ভরপুর এই পানীয় আমরা বিভিন্নভাবে খেয়ে থাকি। কিন্তু দুধ খাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে বহু পুরনো বিতর্ক রয়েছে।

কেউ বলেন, কাঁচা দুধের পুষ্টিগুণই আলাদা। আবার কারো দাবি, দুধ না ফুটিয়ে খেলে রোগের ঝুঁকি বাড়ে। আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়ে কী বলছেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক—

কাঁচা দুধ ও ফোটানো দুধের পক্ষে বিপক্ষে যত যুক্তি

কাঁচা দুধের পক্ষে যুক্তি

কাঁচা দুধের সমর্থকরা মনে করেন, দুধ ফোটালে বা পাস্তুরিত করলে এর স্বাভাবিক পুষ্টিগুণ অনেকাংশে নষ্ট হয়ে যায়। তাদের মতে, কাঁচা দুধে এমন কিছু উপকারী এনজাইম বা উৎসেচক ও প্রো-বায়োটিক (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) থাকে, যা হজমে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

ফোটানোর উচ্চ তাপমাত্রায় এই সংবেদনশীল উপাদানগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষত, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি ও ফোলেটের মতো কিছু ভিটামিনের পরিমাণ তাপে কমে যায় বলে মনে করা হয়। এই কারণে অনেকেই খামার থেকে সরাসরি আনা অপরিশোধিত দুধকেই স্বাস্থ্যের জন্য বেশি উপকারী বলে মনে করেন।

ফোটানো দুধের পক্ষে যুক্তি

অন্যদিকে, বিশ্বের প্রায় সব স্বাস্থ্য সংস্থা ও চিকিৎসকরা দুধ ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেন।

এর প্রধান কারণ হলো জীবাণুর ভয়। গরু বা মহিষের বাঁট থেকে দুধ দোহনের সময় বা পরেও নানাভাবে এতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মিশে যেতে পারে। সালমোনেলা, ই. কোলাই, লিস্টিরিয়া ও ক্যাম্পাইলোব্যাকটরের মতো বিপজ্জনক জীবাণু কাঁচা দুধে থাকতে পারে, যা থেকে ডায়রিয়া, বমি, পেট ব্যথা থেকে শুরু করে টাইফয়েড, যক্ষ্মা বা ব্রুসেলোসিসের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে।

বিশেষ করে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়স্ক মানুষ এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে কাঁচা দুধ পান করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। দুধ ফোটানো হলে উচ্চ তাপমাত্রায় এই সমস্ত ক্ষতিকারক জীবাণু সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে দুধ পানের জন্য নিরাপদ হয়ে ওঠে।

পুষ্টিগুণের তারতম্য কতটা

অনেকেরই ধারণা, দুধ ফোটালে এর পুষ্টিগুণ প্রায় শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি সঠিক নয়। এটা ঠিক যে, দুধ ফোটালে কিছু তাপ-সংবেদনশীল ভিটামিনের পরিমাণ সামান্য কমে। কিন্তু দুধের মূল উপাদান অর্থাৎ, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ডি-এর ওপর তাপের বিশেষ কোনো প্রভাব পড়ে না। অর্থাৎ, দুধ ফুটিয়ে খেলেও এর প্রধান পুষ্টিগত উপকারিতা প্রায় অক্ষুণ্ণ থাকে। যে সামান্য পুষ্টির ক্ষতি হয়, তার তুলনায় জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি গুরুতর।

সুতরাং, পুষ্টিগুণ ও সুরক্ষার নিরিখে বিচার করলে, ফোটানো দুধই নিঃসন্দেহে সঠিক পছন্দ। কাঁচা দুধে কিছু অতিরিক্ত উপকারী উপাদান থাকলেও তার সঙ্গে আসা মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না।

সামান্য কিছু ভিটামিনের জন্য জীবন বিপন্ন করা মোটেই বিচক্ষণতার পরিচয় নয়। তাই সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকতে দুধ সব সময় ভালো করে ফুটিয়ে তবেই পান করা উচিত। এতেই আপনার এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন