শনিবার, ১০ মে ২০২৫

শিরোনাম

কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করতে পারবে দুদক

বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৬, ২০২৩

প্রিন্ট করুন

ঢাকা: কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়াই দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারীকে অপসারণ করা সংক্রান্ত ৫৪ (২) বিধি বাতিলের বিরুদ্ধে দুদকের আপিল মঞ্জুর করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বিভাগ বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এ আদেশ দেন।

দুদকের আইনজীবী সিনিয়র এডভোকেট খুরশীদ আলম খান গণ মাধ্যমকে আদালতের আদেশের বিষয়টি জানান।

তিনি বলেন, ‘কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া দুদক কর্মচারীকে অপসারণ করা সংক্রান্ত ৫৪ (২) বিধি বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায় এখন আর রইল না। ফলে এ বিধি অনুয়ায়ি দুদক পদক্ষেপ নিতে পারবে। আজকের আপিল মঞ্জুরের ফলে শরীফ উদ্দিন চাকরিতে ফিরতে পারবেন না।’

তিনি জানান, আপিল বিভাগের আদেশটি পাওয়ার পর আরো বিস্তারিত বলা যাবে।

আদালতে শরীফের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট সালাহউদ্দিন দোলন, সাথে ছিলেন আইনজীবী মিয়া মোহাম্মদ ইশতিয়াক। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র এডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

২০০৮ সালের দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪ (২) বিধিতে বলা হয়েছে, ‘এ বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারীকে ৯০দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা ৯০ দিনের বেতন নগদ পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।’

২০০৮ সালের দুদক (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি অনুসারে মো. আহসান আলী নামে এক দুদক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। তিনি ৫৪ (২) বিধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন। সে রিটে হাইকোর্ট ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর এ বিধি বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন।

হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে দুদক লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে, যা ২০১৬ সালের নভেম্বরে খারিজ করেন আপিল বিভাগ। এর বিরুদ্ধে পরের বছর দুদক পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করে। পরে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর দুদককে আপিল করার অনুমতি দেন। আর এ আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়। পরে দুদক আপিল করে।

এ দিকে, দুদকের উপসহকারী পরিচালক পদ থেকে চাকরিচ্যুত মো. শরীফ উদ্দিনকে গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি অপসারণ করলে তিনিও দুদক কর্মচারী বিধিমালার ৫৪ (২) বিধি ও চাকরিচ্যুতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। পরে ১১ এপ্রিল তা শুনানির জন্য ওঠে। কিন্তু, তখন পর্যন্ত মো. আহসান আলীর মামলায় দুদকের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়ায় শরীফের রিটের শুনানি মুলতবি করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এ মুলতবি আদেশের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৬ জুন আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করেন শরীফ।

গত ৩ জানুয়ারি শরীফের সেই লিভ টু আপিল ও দুদকের আপিল শুনানির জন্য একসাথে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে। এরপর একসাথে দুই আবেদনের শুনানি শেষে গত ২ মার্চ রায়ের জন্য ১৬ মার্চ দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। সে অনুয়ায়ি বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

গত বছর ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়। দুদকের পরিচালক (প্রশাসন ও মানব সম্পদ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউল স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণ মাধ্যমে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বিভ্রান্তি দূর করতে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণ বিষয়ে দুদক সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে শরীফ উদ্দিনকে অপসারণের কারণ হিসেবে অনিয়ম দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার ১৩ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন দুদক সচিব।

মো. শরীফ উদ্দিন দুদক চট্রগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ে কর্মরত থাকাকালে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে গন মাধ্যমেও প্রতিবেদন এসেছে। তাছাড়া, তার বিরুদ্ধে অনেক ভুক্তভোগী দুদকে লিখিত অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি দুদক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন মামলায় শরীফ উদ্দিনের তদন্ত কার্যক্রম নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে অনেক গণ মাধ্যম।

চাকরি অপসারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৫৪ (২)-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পটুয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হল। তিনি বিধি অনুযায়ী ৯০ দিনের বেতন ও প্রযোজ্য সুযোগ-সুবিধা (যদি থাকে) পাবেন। কমিশনের অনুমোদনক্রমে জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়।

সিএন/এমএ

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন