মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম


কিডনির ব্যথা ও পেশির ব্যথা: পার্থক্য যেভাবে বুঝবেন

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
কিডনি

কিডনির অসুখকে চিকিৎসকেরা অনেক সময় ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ বলে থাকেন। কারণ, প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনির সমস্যা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে না। যখন রোগটি ধরা পড়ে, তখন তা সাধারণত অনেকটাই অগ্রসর হয়ে যায়। অথচ সময়মতো শনাক্ত হলে কিডনির বেশির ভাগ সমস্যাই নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিকার করা সম্ভব। তাই শরীরের অঙ্গগুলোর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটির স্বাস্থ্য নিয়ে সামান্যতম অবহেলাও করা উচিত নয়। বিশেষ করে কিডনিতে ব্যথা হলে তা পেশির ব্যথার সঙ্গে যেন গুলিয়ে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।

অনেক সময় আমরা কোমর বা পিঠে ব্যথা হলে ভেবেই নেই এটি হয়তো সাধারণ পেশির টান বা গ্যাস্ট্রিকের কারণে হচ্ছে। কারও আবার মনে হয়, হয়তো ঘুমানোর ভঙ্গি বা বসার ভুল ভঙ্গির ফলেই এই ব্যথা হচ্ছে। কিন্তু সব ব্যথা এত সাধারণ নয়। কিছু ব্যথা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত বহন করে। তাই শুধু ব্যথানাশক খেয়ে ব্যথা কমানো যথেষ্ট নয়; বরং ব্যথার ধরন, অবস্থান ও অতিরিক্ত উপসর্গগুলো লক্ষ্য করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

কিডনির ব্যথা ও পেশির ব্যথার পার্থক্য

পেশির ব্যথা সাধারণত শিরদাঁড়ার মাঝখানে, কোমরের একেবারে নিচে অথবা নিতম্ব থেকে ঊরু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। যারা দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিতে বসে থাকেন বা ভারি কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যথা বেশি দেখা যায়।

কিন্তু কিডনির ব্যথা একেবারে আলাদা জায়গায় অনুভূত হয়। সাধারণত এটি পাঁজরের শেষ অংশের নিচে, পিঠের পাশে শুরু হয়। ব্যথা কোমরের পাশ দিয়ে তলপেট পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। অনেক সময় মনে হয় ব্যথা গভীর থেকে আসছে এবং তা শুধু শিরদাঁড়ার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে না।

ব্যথার প্রকৃতি কেমন হয়?

পেশির ব্যথার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, বিশ্রাম নিলে তা ধীরে ধীরে কমে আসে। শোয়ার বা বসার ভঙ্গি পরিবর্তন করলেই অনেক সময় আরাম পাওয়া যায়। কাজেই এটিকে সাধারণত অস্থায়ী সমস্যা হিসেবে ধরা হয়।

অন্যদিকে, কিডনির ব্যথা বেশ জেদি ধরনের। যেভাবেই শোয়া বা বসা হোক না কেন, তা সহজে উপশম হয় না। অনেক সময় ব্যথা হঠাৎ শুরু হয় এবং ক্রমশ তীব্র হয়। ব্যথানাশক খেলে সাময়িক আরাম মিললেও মূল সমস্যা থেকে যায়। তাই এই ব্যথাকে হালকাভাবে নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

অনুভূতির পার্থক্য

পেশির ব্যথা হলে ব্যথার জায়গায় চাপ দিলে বা প্রসারিত করলে ব্যথা বাড়ে। আবার পেশি চেপে ধরলে ব্যথার উৎস স্পষ্টভাবে ধরা যায়।

কিন্তু কিডনির ব্যথার ক্ষেত্রে চাপে বাড়তি কোনো যন্ত্রণা অনুভূত হয় না। বরং গভীরে তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হয়, যা সাধারণভাবে বাহ্যিক চাপে ধরা পড়ে না। এটাই কিডনি ও পেশির ব্যথার বড় পার্থক্য।

অতিরিক্ত উপসর্গ যেগুলো কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত দেয়

চিকিৎসকদের মতে, শুধু ব্যথা নয়, এর সঙ্গে যদি অন্য কিছু উপসর্গ দেখা দেয় তবে সেটি কিডনির সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যেমন—

  • কোমরের নিচে হঠাৎ ফোলা দেখা দেওয়া
  • প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা অনুভব করা
  • প্রস্রাবের রং স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন হওয়া
  • প্রস্রাব কমে যাওয়া বা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া

বিশেষ করে হঠাৎ তীব্র ব্যথা শুরু হলে কিডনিতে পাথর থাকার সম্ভাবনা থাকে। এ ধরনের ব্যথা সাধারণত নিজে থেকে চলে যায় না। তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

কেন সচেতন থাকা জরুরি?

অনেকেই মনে করেন, ব্যথানাশক খেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু কিডনির ব্যথা যদি অবহেলা করা হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতে মারাত্মক আকার নিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হয়। অন্যদিকে, সাধারণ পেশির ব্যথা বিশ্রাম, ফিজিওথেরাপি বা হালকা ব্যায়ামে উপশম হয়। তাই ব্যথার ধরন বোঝা এবং সচেতন হওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

শেষ কথা

শরীরের যেকোনো ব্যথাকে হালকাভাবে নিলে তা ভয়াবহ হতে পারে। পেশির ব্যথা ও কিডনির ব্যথার পার্থক্য বোঝা তাই খুব জরুরি। ব্যথা যদি বারবার ফিরে আসে, গভীর থেকে অনুভূত হয় এবং এর সঙ্গে প্রস্রাবজনিত সমস্যা থাকে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ কিডনির রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে তা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

চিকিৎসকরা বলছেন, ব্যথার পাশাপাশি যদি কোমরের নিচে ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের সময় জ্বালা বা ব্যথা, প্রস্রাবের রং পরিবর্তন ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তা কিডনির সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে হঠাৎ করে যদি প্রবল ব্যথা শুরু হয়, তা হলে কিডনিতে পাথর থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এই ব্যথা নিজে থেকে কমে না গেলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন