ডাক্তার এএইচএম ইমরুল তারেক: কিডনি স্টোন বা কিডনির পাথর একটি সাধারণ সমস্যা, যা অনেকেরই জীবনে এক বার না এক বার দেখা দেয়। এটি কিডনিতে খনিজ পদার্থের কণিকা জমে জমে তৈরি হয় এবং কখনও কখনও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে।
কিডনি স্টোন কী: কিডনি স্টোন হল কিডনিতে তৈরি হওয়া কঠিন কণিকা। এটি সাধারণত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক এসিড বা ফসফেটের মত খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়। এই কণিকাগুলি ছোট বালির কণার মত ছোট হতে পারে। আবার কখনও কখনও বড় পাথরের মতো বড়ও হতে পারে।
কিডনি স্টোনের কারণ: কিডনি স্টোনের সঠিক কারণ সব সময় জানা যায় না। তবে, কিছু কারণ কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, যেমন-
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না পান করা: পানি কম পান করলে মূত্র ঘন হয়ে যায় ও খনিজ পদার্থ জমে কিডনি স্টোন তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
কিছু খাবার: অক্সালেটযুক্ত খাবার (যেমন পালং শাক, বাদাম, চকলেট) ও সোডিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পরিবারে কিডনি স্টোনের ইতিহাস থাকা: যদি পরিবারের কারো কিডনি স্টোন হয়, তাহলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
মেটাবলিক রোগ: গাউট, সিস্টিক ফাইব্রোসিস ও কিছু অন্যান্য মেটাবলিক রোগ কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অন্যান্য চিকিৎসাগত অবস্থা: হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম, মোচড়া রোগ ও কিছু অন্যান্য চিকিৎসাগত অবস্থা কিডনি স্টোনের কারণ হতে পারে।
কিছু ওষুধ: কিছু ওষুধ সেবন করা কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কিডনি স্টোনের লক্ষণ: কিডনি স্টোনের লক্ষণগুলি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে এবং পাথরের আকার ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, কিডনি স্টোন যখন কিডনি থেকে মূত্রনালীতে নামতে শুরু করে, তখন তীব্র ব্যথা হয়। এই ব্যথাকে রেনাল কোলিক বলা হয়।
তীব্র ব্যথা: পেট, পিঠ বা পাশে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া: মূত্রত্যাগের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে।
মূত্রে রক্ত: মূত্রে রক্ত দেখা যেতে পারে।
মূত্রত্যাগের সময় কষ্ট হওয়া: মূত্রত্যাগের সময় কষ্ট হতে পারে অথবা মূত্রের ফোঁটা ফোঁটা করে পড়া।
বমি বমি ভাব: কিছু ক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
জ্বর: সংক্রমণ হলে জ্বর আসতে পারে।
কিডনি স্টোনের চিকিৎসা: কিডনি স্টোনের চিকিৎসা পাথরের আকার, অবস্থান ও লক্ষণের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, ছোট পাথর নিজে থেকেই মূত্রের সাথে বের হয়ে যায়। তবে, বড় পাথরের ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি হল-
ওষুধ: ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। কিছু ওষুধ পাথরকে ছোট করে দেয় যাতে সহজে বের হয়ে যেতে পারে।
শকওয়েভ থেরাপি: এই পদ্ধতিতে শকওয়েভ ব্যবহার করে পাথরকে ছোট টুকরো করে দেওয়া হয়।
সার্জারি: খুব বড় বা জটিল পাথরের ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে।
কিডনি স্টোন প্রতিরোধ: কিছু সহজ উপায়ে কিডনি স্টোন প্রতিরোধ করা সম্ভব-
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পান করুন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান: অক্সালেটযুক্ত খাবার কম খান এবং ফল, শাকসবজি ও পুরো শস্য বেশি খান।
সোডিয়াম কম খান: লবণ খাওয়া কমিয়ে দিন।
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন কিডনি স্টোনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম স্বাস্থ্যের জন্য ভাল ও কিডনি স্টোন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন: যদি আপনি কোন ওষুধ সেবন করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করুন।
লেখক: চিকিৎসক, এমবিবিএস, এমএস (ইউরোলজি), কনসালটেন্ট – ইউরোলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম
সিএন/আলী
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন