মুরাদনগর, কুমিল্লা: কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী গ্রাম জাহাপুর। চারদিকে এ গ্রামের সুনাম জমিদার বাড়ি ঘিরে। জমিদার বাড়ির ভবনগুলোর ধূসর ইট বহন করছে প্রায় ৩০০ বছরের বর্ণিল ইতিহাস।
বাড়ির বাইরে বট গাছের কাছে একটি ঘরে উঁচু রথ রয়েছে। জমিদার অশ্বিনী কুমার রায় ১৩২৪ বঙ্গাব্দে জগন্নাথ দেবের রথ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রথযাত্রার সময় হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন। বাড়িতে প্রবেশ করতে হাতের ডানে মন্দিরটি অবস্থিত। বাড়ির সামনে বড় পুকুর। শান বাঁধানো ঘাট। ঘাট বয়সের ভারে ভেঙে পড়ছে। বাড়ি ঘিরে রেখেছে অনেক নারিকেল গাছ। বাড়ি লাগোয়া পূর্ব পাশেও রয়েছে পুকুর। সেখানের ঘাটও ভেঙে আছে। গাছের ছায়ায় বাড়িতে বিরাজ করছে শীতল পরিবেশ। প্রথম বিল্ডিংটি তিন তলা। বাকিগুলো দোতলা। ভবনগুলো ইট-সুরকি দিয়ে নির্মিত। এ রকম নয়টি ভবন ছিল। দুইটি নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। লতাপাতায় ঢেকে যাচ্ছে তিন শতকের ইতিহাস। ভবনে বর্তমান বংশধররা বসবাস করছেন। এখানে বসবাস করছেন ১৪তম বংশধর প্রফেসর অঞ্জন কুমার রায়, অধ্যক্ষ রঞ্জন কুমার রায়, বিশ্বজিত কুমার রায় ও তাদের পরিবারবর্গ।
একটি ভবনের দরজার ওপরে লেখা ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ। এটি নির্মাণ করেছেন অঞ্জন কুমার রায়ের দাদা অশ্বিনী কুমার রায়। এটি জমিদার বাড়ির সর্বশেষ ভবন।
দর্শনার্থী মাহফুজ আহমেদ বলেন, ‘বাড়িতে জমিদারদের ব্যবহৃত খাট, নকশা করা চেয়ার, ইজি চেয়ার, কারুকার্যখচিত ফুলদানি রয়েছে। সেগুন কাঠের তৈরি নকশা করা আসবাবপত্রগুলো শতাধিক বছরের পুরনো। ১০০ বছর আগের পানির ফিল্টারও দেখা যায়। রয়েছে রুপা দিয়ে তৈরি ছাতা। বিয়েতে বর বরণে ব্যবহার হত।’
জাহাপুর কমলাকান্ত একাডেমির ভাইস প্রিন্সিপাল বংশের ১৪তম পুরুষ অঞ্জন কুমার রায় বলেন, ‘এখানে আমাদের বংশের বসবাস প্রায় ৪০০ বছর আগের। বংশের পূর্ব পুরুষরা পাট ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের অনেক সম্পত্তি ছিল। আমরা ঢাকার নওয়াবদের কাছ থেকে জমিদারি কিনি। জমিদারি বিস্তৃত ছিল তিতাস, মুরাদনগর, দাউদকান্দি, চান্দিনা, দেবিদ্বার ও নবীনগরে। বংশের প্রথম পুরুষ ছিলেন কানাই লাল রায়। জমিদারি শুরু করেন সপ্তম পুরুষ গৌরি মোহন রায়। গৌরব বৃদ্ধি পায় নবম পুরুষ কমলাকান্ত রায় ও তার ছেলে গিরিশ চন্দ্র রায়ের সময়।’
স্থানীয় বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, ‘এ অঞ্চলে দর্শনীয় তেমন কোন স্থান নেই। জাহাপুর জমিদার বাড়িটি দর্শনীয় স্থান হতে পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থাও চমৎকার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ হয়ে জাহাপুর ১৫ কিলোমিটার। মুরাদনগর থেকে দশ কিলোমিটার।’
মুরাদনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ বলেন, ‘বাড়িটি ঘুরে দেখেছি। বর্তমান বংশধররা বাড়িতে অবস্থান করছেন। এটি অনেক সুন্দর। এটি একটি দর্শনীয় স্থান হতে পারে।’
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান বলেন, ‘বাড়িটি পরিদর্শনের পর সংরক্ষণের উপযুক্ত হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। তারা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।’
সিএন/এমএ
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন