সিএন প্রতিবেদন: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। কয়েক দিন ধরে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় সরকারও বিষয়টি সমাধানের পথ খুঁজছিল। গত বৃহস্পতিবার কোটা নিয়ে হাইকোর্টের সংক্ষিপ্ত রায় প্রকাশের পর সেই পথের দিশা মিলেছে। এখন কোটা কমানোর চিন্তা করছে সরকার।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র বলছে, কোটাব্যবস্থা সংস্কার করে কোন কোটা কীভাবে কমানো যেতে পারে, তা নিয়ে সরকারের ভেতরে আলোচনা শুরু হয়েছে। সরকার চাইছে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান দিতে। অনানুষ্ঠানিকভাবে হলেও এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলাপ হচ্ছে দফায় দফায়। প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে দেশে ফেরার পরও সরকারের ওপর মহলে আলাপ হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘কোর্টের পর্যবেক্ষণগুলো আমাদের আমলে নিতে হবে। এখন এ-সংক্রান্ত বিচার চলমান আছে। তাই ভবিষ্যতে আমাদের কী করণীয়, তা আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে বিবেচনা করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিচার বিভাগের অনেক পর্যবেক্ষণ আমরা নির্বাহী বিভাগ গ্রহণ করি, বাস্তবায়ন করি।’
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার সংক্ষিপ্ত রায় গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। সংক্ষিপ্ত রায়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা বজায় রাখতে বলা হয়। সরকার প্রয়োজনে কোটার অনুপাত পরিবর্তন, হ্রাস বা বৃদ্ধি করতে পারবে। আর এই রায় সরকারের ওপর কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। কোনো পাবলিক পরীক্ষায় কোটা পূরণ না হলে সরকার সাধারণ মেধাতালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করতে পারবে।
হাইকোর্টের এই রায়ে কোটা সংস্কারের পথ খুলে গেছে বলে আভাস দিয়েছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এসেছেন। নিশ্চয়ই এটা নিয়ে একটি সমাধান হবে। কারণ, সরকার তো চায় সমাধান হোক। কোর্টের রায় বিবেচনা করে আইনমন্ত্রী যেভাবে গাইড করবেন, সেভাবেই হবে।
কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলনে নামে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলনের একপর্যায়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটাপদ্ধতি তুলে দেয় সরকার। ওই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন চাকরিপ্রত্যাশী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলামসহ সাতজন। ওই আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে। এরপরই আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
এরপর হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করে। ১০ জুলাই হাইকোর্টের রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
সিএন/এমটি
চলমান নিউইয়র্ক ফেসবুক পেজ লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন