বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫

শিরোনাম

কোরবানির ঈদ: আত্মত্যাগে আত্মশুদ্ধির অনন্য শিক্ষ

বুধবার, জুন ৪, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

আল আমিন সরকার: পবিত্র ঈদুল আজহা—বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর জন্য এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এ দিনটি কেবল উৎসবের নয় বরং ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও খোদাভীতির এক মহিমান্বিত নিদর্শন। ঈদুল আজহার প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হয় ইতিহাসের সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ে, যেখানে এক পিতা ও পুত্র নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর আদেশ পালনে নিজেদের প্রস্তুত করেছিলেন।

ঐতিহাসিকপ্রেক্ষাপট: ইব্রাহিম (.) ইসমাইল (.)-এরকোরবানিরকাহিনি

হযরত ইব্রাহিম (আ.) এক রাতে স্বপ্নে দেখেন—তিনি আল্লাহর আদেশে তার পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করছেন। একজন পিতার জন্য এটি ছিল এক কঠিনতম পরীক্ষার মুহূর্ত। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়ে তিনি প্রস্তুত হলেন এই আত্মত্যাগে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর গোশত ও রক্ত; বরং তার কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ (সূরা হজ্জ, ২২:৩৭)

এই আয়াত আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কোরবানির প্রকৃত উদ্দেশ্য পশু জবাই নয়; বরং তাতে নিহিত হৃদয়ের খাঁটি নিয়ত, তাকওয়া ও আল্লাহভীতি।

রাসূল (সা.)-এরবাণীকুরবানিরগুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মানুষ কোরবানির দিনে যে কাজ করে, তার মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় হলো কোরবানি করা। কিয়ামতের দিন তা শিং, চামড়া ও খুরসহ নিয়ে আসবে। আর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়।’ (তিরমিজি: ১৪৯৩)

তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি কোরবানি করার সামর্থ্য রাখে কিন্তু করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২৩) এই হাদিসদ্বয় কোরবানির গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য আমাদের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

সমাজেকোরবানিরশিক্ষাপ্রভাব

কোরবানি কেবল একটি ধর্মীয় ইবাদত নয়; এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্বও। ধনী ও গরিবের মধ্যে সম্প্রীতি, সহানুভূতি ও ভালোবাসার সেতুবন্ধন তৈরি হয় এই ইবাদতের মাধ্যমে।

ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, কোরবানির মাংস তিনভাগ করে আত্মীয়-স্বজন, গরিব-দুস্থ ও নিজের পরিবারের মধ্যে বণ্টন করা উচিত। এই বণ্টন প্রক্রিয়া মানবিকতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আজকের আধুনিক শহরে জীবনে অনেকেই কোরবানি সার্ভিসের মাধ্যমে সম্পন্ন করেন। তবে এতে যেন আন্তরিকতা, করুণা ও খালেস নিয়তের ঘাটতি না হয়, সেদিকেও সচেতন থাকা আবশ্যক।

পরিচ্ছন্নতাপরিবেশসচেতনতা

ইসলাম পরিচ্ছন্নতার ধর্ম। কোরবানির সময় রক্ত, বর্জ্য ও দুর্গন্ধ যেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে, সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব।

রাসূল (সা.) বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতা ইমানের অর্ধেক।’ (সহিহ মুসলিম)। তাই পশু জবাই, বর্জ্য অপসারণ ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা শুধু সামাজিক নয়, ধর্মীয় দিক থেকেও আমাদের কর্তব্য

ঈদুল আজহা আমাদের শিক্ষা দেয় আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও মানবিকতার। কোরবানির মাধ্যমে শুধু পশু জবাই নয়, বরং আমাদের অহংকার, লোভ, হিংসা, কুপ্রবৃত্তি কুরবানি করে সত্যিকার আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়া উচিত।

আসুন, এ ঈদে ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হোক প্রতিটি হৃদয়; পবিত্র হোক আমাদের নিয়ত, চিন্তা ও আমল। তাহলেই ঈদের প্রকৃত আনন্দ ও উদ্দেশ্য পূর্ণতা লাভ করবে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন