শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

শিরোনাম

খলিফা ওমর (রা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা

মঙ্গলবার, জুলাই ৮, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং প্রথম সারির সাহাবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.)-এর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি শরিয়াহ আইনে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন। রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় তিনি ন্যায় এবং ইনসাফের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটান সর্বক্ষেত্রে। এ কারণে তাকে ‘আল-ফারুক’ সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে মক্কার সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশের বনু আদি গোত্রে। তার পিতা ছিলেন খাত্তাব ইবনুল হিশাম এবং মায়ের নাম হানতামা বিনতে হিশাম।

যৌবনের প্রারম্ভেই তিনি তৎকালীন অভিজাত আরবদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো আয়ত্ত করেন। যেমন-যুদ্ধবিদ্যা, কুস্তি, বক্তৃতা ও বংশ তালিকা বা নসবনামা বিদ্যা তিনি লাভ করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে তার পিতা ও পিতামহ উভয়ই ছিলেন এ বিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী। তিনি ছিলেন তার যুগের শ্রেষ্ঠ কুস্তিগির। আরবের বিখ্যাত ওকাজ মেলায় তিনি কুস্তি লড়তেন। তার মধ্যে কাব্য প্রতিভাও ছিল।

আরবের বিখ্যাত কবিদের প্রায় সব কবিতাই তার মুখস্থ ছিল। তৎকালীন আরবে পেশা হিসেবে সম্মানী ছিল ব্যবসা এবং তিনিও ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনি ছিলেন যেমন একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক, তেমনি সৎ ব্যবসায়ী হিসেবেও তার সুখ্যাতি ছিল। নানাভাবেই তার খেলাফতকাল ছিল দৃষ্টান্তস্বরূপ। কারণ এতে ছিল ইসলামের শিক্ষার কঠোর অনুসরণ। দয়ার সঙ্গে দৃঢ়তার মিশ্রণ, কঠোরতার সঙ্গে সুবিচারের সমতা বিধান এবং মানুষের প্রতি দায়িত্বশীলতা।

তার শাসনামলে বিশাল অঞ্চল মুসলিম সাম্রাজ্যের অধীনে এসেছিল। ১০ বছরের কিছু বেশি সময় তিনি এ সাম্রাজ্যের খলিফা ছিলেন। হজরত ওমর (রা.) মক্কার নিকটবর্তী দাজনান নামক স্থানে উট চরাতেন। তিনি তার খেলাফতকালে একবার এ মাঠ অতিক্রম করছিলেন। তখন সঙ্গীদের কাছে বাল্যকালের স্মৃতিচারণ করে বলেন, এমন একসময় ছিল যখন আমি পশমি জামা পরে এই মাঠে প্রখর রোদে খাত্তাবের উট চরাতাম। খাত্তাব ছিলেন অত্যন্ত কঠোর। ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রাম নিলে পিতার হাতে প্রহারের শিকার হতে হতো। কিন্তু আজ আমার এমন দিন এসেছে যে, এক আল্লাহ ছাড়া আমার ওপর কর্তৃত্ব করার কেউ নেই।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, ইসলাম গ্রহণের আগে ওমর (রা.) কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে রাসুল (সা.)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ, সে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছ ওমর?

তিনি বললেন মোহাম্মদের ফয়সালা করতে। লোকটি বলল, একটি কথা শোনো-তোমার বোন ফাতেমা এবং তার স্বামী ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে গেছে। এ কথা শুনে ওমর রাগান্বিত হয়ে ছুটে গেলেন বোনের বাড়িতে। ফাতেমা আর তাঁর স্বামী তখন পবিত্র কুরআনের সুরা তোয়াহা পড়ছিলেন। ওমরের পায়ের শব্দ পাওয়া মাত্র তারা চুপ হয়ে গেলেন, কুরআনের পাতা লুকিয়ে ফেললেন। ওমর ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কী পড়ছিলে? বোন নিস্তব্ধ। ওমর বললেন, আমি জেনে ফেলেছি তোমরা দুজনেই আমার ধর্ম ত্যাগ করেছ। এই কথা বলে ওমর ভগ্নীপতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বোন স্বামীকে বাঁচাতে এলে তিনি তাকেও রক্তাক্ত করলেন। বোনের দেহ রক্তাক্ত, ভগ্নীপতিরও ক্ষতবিক্ষত দেহ। রক্তাক্ত পোশাক আর চোখভরা কান্না নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে ফাতেমা বললেন, ওমর যা ইচ্ছা করতে পারো। আমাদের পক্ষে ইসলাম ত্যাগ করা সম্ভব নয়। ওমর বলে উঠলেন, তোমরা যা পড়ছিলে আমাকে তা একটু পড়তে দাও। বোন বললেন, তুমি পবিত্র হয়ে এসো। তিনি পবিত্র হয়ে এসে বোনের হাত থেকে সুরা তোয়াহার অংশটুকু পড়তে লাগলেন। এরপর সেই তলোয়ার হাতে ওমর ছুটে গেলেন রাসুল (সা.)-এর কাছে।

রাসুল (সা.) তখন মক্কার সাফা পাহাড়ের পাদদেশে দারুল আরকামে অবস্থান করছিলেন। তাঁর ওপর তখন ওহি নাজিল হচ্ছিল। পায়ের কাছে তলোয়ার রেখে ওমর বলে উঠলেন, কোনো সন্দেহ নেই আপনিই আল্লাহর রাসুল। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আপনিই আল্লাহর রাসুল। এই হলো তার ইসলাম গ্রহণের ইতিহাস। ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। আবু লুলু নামের পারস্যের এক কৃতদাস মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে ওমর (রা.)-কে ছুরিকাঘাত করে, তিনি তখন ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আহত হওয়ার ৩ দিন পর তিনি শাহাদাতবরণ করেন। মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণে আবু বকর (রা.)-এর কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন