বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪

শিরোনাম

খোশ আমদেদ মাহে রমজান: বাজারেও আত্মসংযমের প্রতিফলন চাই

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২১, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের বাণী নিয়ে বিশ্বের মুসলমানদের দুয়ারে আবারও উপস্থিত হয়েছে পবিত্র রমজান। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মুসলমানরা এ তিন ধাপে ইবাদত-বন্দেগি করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের প্রশান্তি লাভ করবেন। সারা বছর জ্ঞাত-অজ্ঞাতসারে তারা যে পাপ করেছেন, তা থেকে ক্ষমা পাওয়ার মোক্ষম মাস হলো এ রমজান। সিয়াম সাধনার দ্বারা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে তারা যে নাজাতের পথ খুঁজবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাজার রজনির শ্রেষ্ঠ রজনি লাইলাতুল কদর রমজানকে করেছে বিশেষভাবে মহিমান্বিত। এ রাতেই রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় নবি মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর সর্বশেষ ঐশী গ্রন্থ পবিত্র কুরআন নাজিল করেন। কুরআনের শিক্ষা হলো বিশ্বাসী মানুষকে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনে অশেষ কল্যাণ দান করা। কৃচ্ছ্রসাধন ও আত্মসংযমের এ মাসে তাই মানুষ আল্লাহর প্রদর্শিত পথে চলার ওয়াদা করেন, তাদের সবরকম গুনাহ্ মাফ করে দেওয়ার জন্য আকুল প্রার্থনা করেন। এ মাসে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের কঠোর ত্যাগ, ধৈর্য, উদারতা ও সততা প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিতাপের বিষয় হলো, আমাদের দেশে এ মাসেই একশ্রেণির ব্যবসায়ী সততা আর ন্যায়নীতি ভুলে অতি মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতায় নামে। তারা রমজানকে মুনাফা লোটার প্রায় হাতিয়ার করে ফেলে। যথেচ্ছভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর এ প্রবণতা আমাদের ব্যবসায়ীদের কৃচ্ছ্র আর আত্মশুদ্ধির বিপরীতে নিয়ে গেছে যেন। রমজানে বিশেষ কিছু খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা বেড়ে যায়। পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা দোকানিরা এই বাড়তি চাহিদাকে মুনাফা লোটার হাতিয়ার করে তোলে। অসৎ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। রমজানের শিক্ষা অনুসরণের বদলে তারা যেন আরও সুযোগসন্ধানী ও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এ কারণে রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা প্রয়োজন। সর্বসাধারণের কথা বিবেচনা করে সরকারকে এ সময়ে চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, ছোলা, বুটসহ প্রধান খাদ্যশস্যের দামের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে। রমজানে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংকট মানুষের দুর্ভোগের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নগরজীবনে অপরিহার্য উপকরণগুলোর সংকট কবে নিরসন হবে কে জানে! আমরা শুধু বলব, অন্তত রমজানে যে কোনো উপায়ে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে নেওয়া হোক কার্যকর পদক্ষেপ। যানজট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশ প্রশাসনকে।

রমজানে একশ্রেণির মানুষ সংযম ও কৃচ্ছ্রসাধনের পরিবর্তে ভোগবিলাসে মেতে ওঠে। সম্পদশালীদের ভেতর চলে ইফতার পার্টির প্রতিযোগিতা। অথচ ভোগবিলাস ও যথেচ্ছাচার ত্যাগ করে সহজ, সুন্দর ও অনাড়ম্বর জীবনাচারে অভ্যস্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয় পবিত্র রমজানে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও দায়িত্ব রয়েছে গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর। গরিব-দুঃখীদের বিপদে তাদের সহায়তা দান রমজানের শিক্ষা। এ মাস মুসলমানদের জন্য আত্মিক, আধ্যাত্মিক ও শারীরিক উন্নতির সুযোগ এনে দেয়। এমন এক মাসে দেশের সব মুসলমান ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী ত্যাগ ও কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব ও শান্তির আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সচেষ্ট হবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন