রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫

শিরোনাম

গণতন্ত্র ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়ে উঠুক

সোমবার, ডিসেম্বর ১৬, ২০২৪

প্রিন্ট করুন

১৬ ডিসেম্বর, আমাদের জাতির ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতি অর্জন করেছিল চূড়ান্ত বিজয়। দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল এবং জন্ম হয়েছিল একটি স্বাধীন বাংলাদেশের। কিন্তু এই স্বাধীনতার পথ ছিল রক্ত, অশ্রু ও ত্যাগে ভরা। ৩০ লাখ শহীদ, দুই লাখ নির্যাতিত নারী, আর কোটি শরণার্থীর জীবনসংগ্রামের স্মৃতি আজও আমাদের তাড়িত করে। বিজয় দিবসে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী অন্যান্য বীর নেতৃত্বকে, যাঁদের অপরিসীম সাহস ও আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিল।

স্বাধীনতার অঙ্গীকার ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। একটি এমন রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যেখানে ধর্ম, বর্ণ বা জাতিগত পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থাকবে মানবিক মূল্যবোধ। যেখানে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং সংবাদমাধ্যম ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। অথচ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও সেই লক্ষ্যগুলো অনেকাংশে অধরা।

বাংলাদেশ আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। দারিদ্র্য কমেছে, শিক্ষার হার বেড়েছে, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বৈষম্য এখনো আমাদের সমাজকে বিভক্ত করে রেখেছে। এখনো দেশের অনেক মানুষ মৌলিক অধিকার, মানসম্মত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে গণতন্ত্রকে সুসংহত করার ক্ষেত্রে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় সামরিক শাসন ও একনায়কতন্ত্র আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রবণতা জনগণের অধিকারকে সংকুচিত করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং সাংবাদিকদের প্রতি সহিংসতা এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।

তবে আশা দেখা গেছে সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে। নতুন প্রজন্ম বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে এবং একটি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে। অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা। এটি একটি শুভ সূচনা, তবে অনেক পথ বাকি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে মজবুত করতে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল ও সরকারকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

বিজয় দিবস আমাদের প্রেরণা জোগায়। এটি শুধু অতীতের বিজয়ের উদ্‌যাপন নয়, ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের দায়িত্বেরও স্মারক। যে সমাজের জন্য এত ত্যাগ, সেই সমাজকে বৈষম্যহীন, মানবিক ও গণতান্ত্রিক রূপ দিতে হবে। জনগণের চেতনাই পারে এই পরিবর্তন ঘটাতে।

আজকের বিজয় দিবসে আমরা শপথ নিতে চাই, স্বাধীনতার লক্ষ্যগুলো পূরণে একসঙ্গে কাজ করব। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সাম্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠুক একটি নতুন বাংলাদেশ। বিজয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক সবার হৃদয়ে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন